×

জাতীয়

২০২৪-এ স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাসের জোগান বাড়বে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:২৮ এএম

চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান থাকায় সহজেই গ্যাস সংকটের সমাধান হচ্ছে না। স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাসের উত্তোলন বাড়ানো না হলে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। তবে ২০২৪ সালে স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাসের জোগান বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। আর জোগান বাড়লে এ সংকট কিছুটা কাটতে পারে। জোগান বাড়াতে ভোলাসহ ৫টি স্থানে নতুন গ্যাসক্ষেত্রে খননকাজ শুরু হবে। ৭ হাজার মিটার গভীরে খনন করার জন্য রিগ কেনা হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র খুঁজে বের করে গ্যাস উত্তোলনে বাপেক্সকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে গ্যাসের সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হবে।

জানা গেছে, গ্যাস সংকট দ্রুত কাটিয়ে উঠতে এলএনজি আমদানি করা হয়। কিন্তু বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বেড়েই চলছে। ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে বেশি দামেই এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে বিকল্প উপায়ও খোঁজার কাজ চলছে। এই বিকল্প উপায়ের একটি হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র খোঁজা। এই কাজটি মূলত বাপেক্সের। কিন্তু নানা জটিলতা ও সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বাপেক্স সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। স্থানীয় পর্যায়ে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারও হয়নি। কিন্তু এবার স্থানীয় পর্যায়ে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান শুরু করেছে বাপেক্স।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস অনুসন্ধানে বেশ জোরেশোরেই কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যেই সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৫টি নতুন গ্যাস কূপ খননের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপে যেসব স্থানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেসব স্থানেই নতুন কূপ খনন করা হবে।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ভোলা একটি সম্ভাবনাময় এলাকা। এখানে আগেও গ্যাস পাওয়া গেছে। তাই এবার ভোলায় নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে এখানে কূপের খননকাজ শুরু হবে। ভোলা থেকে সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আবার শরীয়তপুর জেলায়ও নতুন করে একটা কূপ খননের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। জানুয়ারিতেই খননকাজ শুরু হবে। এখানেও সম্ভাবনা আছে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ জানিয়েছেন। এই দুই জায়গাতেই বাপেক্স কাজ করছে।

এছাড়া নতুন স্থান নির্ধারণে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপ কাজও চলছে। একই সঙ্গে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে দেশের হাইপ্রেশার জোনগুলোয় অনুসন্ধান ও উত্তোলন বাড়াতে কূপ খনন করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা বাপেক্সকে জোরালোভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। পাঁচটি নতুন কূপ খনন করা হবে। বাপেক্সের সক্ষমতা আছে। তারপরও যেখানে বাপেক্সের সক্ষমতায় কাজ হবে না, সেখানে বাপেক্সকে সঙ্গে রেখেই বিদেশি কোম্পানির সহায়তা নেয়া হবে।

৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ মিটার পর্যন্ত খননের সক্ষমতা বাপেক্সের রয়েছে। নতুন কূপগুলো ৭ হাজার মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এত গভীরে যাওয়ার জন্য রিগ বাপেক্সের কাছে নেই। তবে রিগ ভাড়া নিয়ে খননকাজ চালানো হবে। আগামী দুই বা আড়াই বছরের মধ্যে নতুন ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস পাওয়া যাবে।

বাপেক্সের এমডি মোহাম্মদ আলী বলেন, বাপেক্সকে শক্তিশালী করে স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চ্যালেঞ্জ নিতে বাপেক্স প্রস্তুত। ৭ হাজার মিটার সক্ষমতার রিগ কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুধু এলএনজির ওপর ভরসা করে থাকলে চলবে না। বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা অভিজ্ঞ কর্মীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামীতে বাপেক্স গ্যাস সংকট মোকাবিলায় সফল হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সিলেট অঞ্চলের ক্ষেত্রগুলোয় নতুন কূপ খনন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া ক্ষেত্র ও কূপগুলোর আরো গভীরে গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগগুলো সফল হলে দেশে গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়বে। এতে সংকট কিছুটা হলেও কমবে।

বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪৪০ কোটি ঘনফুট। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে ২৪০ থেকে ২৪৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায়। চাহিদা ও সরবরাহে ১২০ কোটি ঘনফুটের ঘাটতি রয়েছে। বড় কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হলে ২০২২-২৩ সালে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে দিনে গ্যাস উৎপাদন ১৮ দশমিক ৪ কোটি ঘনফুট কমতে পারে। ২০২৩-২৪ সালে দৈনিক উৎপাদন ৪৩ দশমিক ৫ কোটি ঘনফুট কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, ভবিষ্যতে গ্যাসের সংকট মোকাবিলা করতে হলে স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাসের উত্তোলন বাড়াতে হবে। দেশীয় উত্তোলন বাড়াতে বাপেক্সকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে আমরা বারবার সরকারকে বলেছি। বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ জনবল দিয়ে বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

বাপেক্স শক্তিশালী হলে এবং দেশীয় গ্যাসের উত্তোলন বাড়ানো হলে এখন আমাদের এলএনজি আমদানির প্রয়োজন হতো না। এলএনজি ব্যয়বহুল গ্যাস। এটা আমদানির খরচ অনেক বেশি। তাছাড়া দিন দিন এলএনজির দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে হলে সরকারকে ভর্তুকি বাড়াতে হবে অথবা দাম বাড়াতে হবে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র খুঁজে বের করে গ্যাস পাওয়া গেলে খরচ অনেক কমবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App