×

অর্থনীতি

মধ্যম আয়ের দেশে ফাঁদে পড়তে পারে বাংলাদেশ: শঙ্কা পরিকল্পনামন্ত্রীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২২, ০৪:২০ পিএম

মধ্যম আয়ের দেশে ফাঁদে পড়তে পারে বাংলাদেশ: শঙ্কা পরিকল্পনামন্ত্রীর

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ওয়েবিনারে বক্তারা

মধ্যম আয়ের দেশে ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে অর্থনীতির পূনরুদ্ধার সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, কোথাও যেন কিছু একটা হচ্ছে। আমরা মধ্যম আয়ের দেশে ফাঁদে পড়ে যাই কি-না, সন্দেহ হচ্ছে আমার। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের পর ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে এই অবস্থায় পড়ে থাকতে হয় কি-না, এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে আমার। ল্যাটিন আমেরিকাসহ পৃথিবীর বহু দেশ মধ্যম আয়ের দেশ ফাঁদে আটকে আছে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক কাজ করার জন্য গবেষণা সংস্থাগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।

করোনার মধ্যেও দেশের অর্থনৈতিক পুনরুত্থান জোরালো হচ্ছে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এই পুনরুত্থান ও তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে আজ এই সম্ভাবনাময় জায়গায় আসার পেছনে দেশের মানুষের পরিশ্রম সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। ফলে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে প্যারাডক্স বা ম্যাজিক শব্দ ব্যবহার করা জনগণকে অপমানের শামিল।

নিচের সারির মানুষের দিকে বেশ গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মত দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, সমাজের উঁচু তলার মানুষেরা আরও ওপরে যাবে, কিন্তু নিচু তলার মানুষের সীমা আছে। তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা উচিত। বাংলাদেশ যেমন বটমলেস বাস্কেটকেস বা তলাবিহীন ঝুড়ির তত্ত্ব ঝেড়ে ফেলতে পেরেছে, তেমনি প্যারাডক্স, বিস্ময়- এই জাতীয় অভিধাও পরিত্যাগ করতে পারবে। সেখানেই দেশের জনগণের বিজয়।

ওয়েবিনারে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প চালাচ্ছে সরকার। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়ছে। চলতি হিসাবের অবস্থা ভালো নয়। এই পরিস্থিতিতে রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি টাকার যে অবমূল্যায়ন করেছে তা জরুরি ছিলো, কিন্তু যথেষ্ট নয়। এ পরিস্থিতির উল্লেখ করে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, টাকার মান একধাপে বেশি অবমূল্যায়ন করা হলে বেশি ফল মেলে। অন্যদিকে বাজেটেও আছে চাপ। গত অর্থ বছরে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত ছিল ৭ শতাংশের মতো। এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়াবে ৩৫ হাজার কোটি টাকায়। অথচ সরকারের ভর্তুকি অনেকটাই বেড়েছে। এতে ঋণের টাকা দিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করতে হচ্ছে।

দৈত্যাকার প্রাণীর মতো মাথা তুলছে মূল্যস্ফীতি উল্লেখ করে আহসান মনসুর বলেন, এই বাস্তবতায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন কাজ। একদিকে ভর্তুকি আছে, বিনিময় মূল্য কমানো হচ্ছে, প্রণোদনা আছে, এসব কিছুর চাপে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।

অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান জাঈদি সাত্তার। তিনিও মুদ্রার অবমূল্যায়নের পক্ষে কথা বলেন। আমদানি বেড়ে যাওয়া বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার টাকার অবমূল্যায়ন করা হলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। সে জন্য তিনি এক রকম ক্ষতিপূরণ দিয়ে টাকার অবমূল্যায়নের কথা বলেন। সেটা হলো, শুল্ক হার সমন্বয় করা। আর বাকি সব ঠিক রাখা হলে সমস্যা নেই, এতে শুধু রপ্তানি খাত প্রণোদনা পাবে। তার প্রস্তাব, পাঁচ শতাংশ অবমূল্যায়ন করা হোক। তিনি আরও বলেন, দেশের অর্জন মানব সম্পদের বিজয়। কৃষক, শ্রমিক, বিনিয়োগকারী সবার সম্মিলিত উদ্যোগে এটা হয়েছে। বিশ্ব বাজারের সুবিধা নিতে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।

বিকেএমইএ নেতা ফজলুল হক বলেন, মানুষ ওমিক্রন নিয়ে চিন্তিত নয়। টিকা আছে, ওষুধ আছে, মানুষও আর বিধিনিষেধ মানতে রাজি নয়। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, যেমন শ্রমিক সংকট। শিল্পে এখন ১৫-২০ শতাংশ শ্রমিক সংকট আছে কিন্তু তা মোকাবিলা করা হচ্ছে না। নতুন শ্রমিকদের শিখিয়ে-পড়িয়ে নেয়ার মতো অবস্থায় নেই শিল্প। তবে তৈরি পোশাক খাতের এখন বহুমুখীকরণ দরকার, নতুন বাজার ধরতে এর বিকল্প নেই।

করোনার কিছু দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব আছে। সেগুলো মোকাবিলায় গুরুত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়রে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক। দেশে বড় একটি অরক্ষিত জনগোষ্ঠী আছে। তাদের লক্ষ্য করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রণয়ন করা দরকার বলেন মত দেন তিনি। এ ছাড়া কোভিডের প্রভাবে দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। সে কারণে বাল্য বিবাহ বেড়ে গেছে। এটা রোধে সায়েমা হকের প্রস্তাব, যেসব অঞ্চলে বাল্য বিবাহ বেড়েছে, সেই সব অঞ্চল লক্ষ্য করে উপবৃত্তির কর্মসূচির আওতা বাড়ানো।

বক্তারা বিদ্যালয় বন্ধ রাখা নিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, সবকিছু খোলা রেখে বিদ্যালয় বন্ধ রাখায় ক্ষতি ছাড়া লাভ হয়নি। অথচ উন্নত দেশে বিদ্যালয় খোলা রাখায় বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, বিজেএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী নাসের এজাজ প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App