সার্চ কমিটি গঠন হবে ২০ জানুয়ারির মধ্যেই

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের মধ্য দিয়ে। ১৭ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়েই শেষ হবে সংলাপ। আর ২০ জানুয়ারির মধ্যেই রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করবেন। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নতুন ইসি ঘোষণা করবেন রাষ্ট্রপতি।

সার্চ কমিটিতে কারা থাকছেন, জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছে। সেখান থেকেই ঘোষণা দেয়া হবে। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারককে আহ্বায়ক করে এই কমিটিতে হাইকোর্ট বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রধান হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) থাকবেন। এছাড়া দুজন বিশিষ্ট নাগরিককেও এ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে; তাদের একজন হবেন নারী। তিনি জানান, এই কমিটি নতুন ইসি গঠনের জন্য দলগুলো থেকে পাওয়া নামের তালিকা ও রাষ্ট্রপতির দেয়া তালিকা থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করবে রাষ্ট্রপতির কাছে। তবে আওয়ামী লীগসহ বাকি দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর এ তালিকা চূড়ান্ত হবে বলে রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে জানান হয়েছে। সার্চ কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রাপ্ত তালিকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ জনের নাম সুপারিশ করার সময়সীমা দেয়া হবে। কয়েক দফা বৈঠকের মধ্য দিয়ে ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে সার্চ কমিটি নিজেদের মধ্যে বৈঠক করবে। এরপর রাষ্ট্রপতি এ ১০ জনের নামের মধ্য থেকে সিইসিসহ ৫ জনের নাম চূড়ান্ত করে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই পাঁচ বছরের জন্য নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেবেন। সেই কমিশনের অধীনেই ২০২৩ সালের শেষে হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের সম্ভাব্য তালিকায় সাবেক আমলা, বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের নাম থাকবে। নতুন সিইসি হিসেবে কাকে নিয়োগ দেয়া হতে পারে- এ তালিকায়ও উঠে আসবে বেশ কয়েকজনের নাম। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সাবেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সাবেক জেলা জজ, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, থাকছেন একজন নারী আমলাও। এ তালিকা ধরে তাদের অতীত ইতিহাস যাচাই-বাছাই হবে।

গত ২০ ডিসেম্বর সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে বঙ্গভবনে এবারের সংলাপের সূচনা হয়। ১৭ জানুয়ারি বিকাল ৪টায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার সূচি রেখেছে বঙ্গভবন। সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে যাবে। ক্ষমতাসীন এ দলটি বেশ কয়েকজনের নাম সুপারিশ করবে বলেও জানা গেছে।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, এবার মোট ৩২টি দলকে আমন্ত্রণ জানান হয়েছিল। তবে আগের সংলাপগুলোয় অংশ নেয়া বিএনপি এবার রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে সাড়া দেয়নি। এছাড়া সিপিবি, বাসদ, জেএসডিসহ আরো কয়েকটি দল এবারের সংলাপে অংশ নেয়নি। সংলাপে অংশ নেয়া বেশিরভাগ দলই ইসি গঠনে সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনের কথা বলেছে। সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রসঙ্গও তুলেছে কেউ কেউ। কোনো কোনো দলের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি সম্ভাব্য ইসি গঠনের জন্য নামও নিয়েছেন।

সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠনের বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দেবেন।

উল্লেখ্য, নতুন ইসি গঠন প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। অধিকাংশ দলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনের সুপারিশ তৈরির জন্য ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। গতবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছে সর্বোচ্চ পাঁচটি করে নাম দেয়ার কথা বলেছিলেন রাষ্ট্রপতি। এর পর সার্চ কমিটির বৈঠকে ২৬টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া ১২৫টি নাম থেকে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি এবং তৃতীয় বৈঠকে ওই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে যাচাই-বাছাই ও বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। সর্বশেষ বৈঠকে ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। পরে ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হাতে সেই তালিকা তুলে দেয় সার্চ কমিটি। এর থেকে সিইসিসহ ৫ জনকে নিয়ে নতুন ইসি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন সিইসি কে এম নূরুল হুদাসহ নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্যরা। সেই হিসাবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হবে।