×

অর্থনীতি

রাজস্ব আয়ে ঘাটতি বাড়ছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:৪৫ এএম

রাজস্ব আয়ে ঘাটতি বাড়ছে

প্রতীকী ছবি

ছয় মাসে ঘাটতি ১৭ হাজার কোটি টাকা করোনা বাড়লে রাজস্ব আয় আরও কমবে

দেশে হু হু করে বাড়ছে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিছু বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দুই-একদিনের মধ্যে আসতে পারে প্রজ্ঞাপন। ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব ঘাটতি ছাড়িয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। ওমিক্রনের প্রভাবে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাই রাজস্ব আয়ের গতি কমবে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে ভ্যাট আদায়ে।

এনবিআরের সবশেষ (সাময়িক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৮১ কোটি টাকা। আর ৬ মাসে রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে এনবিআরের তিনটি উইংয়ের অর্থাৎ আয়কর, ভ্যাট এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের মধ্যে রাজস্ব আহরণে সবচেয়ে ভালো হয়েছে শেষেরটিতে। রাজস্ব আদায়ে তলানিতে রয়েছে ভ্যাট খাত।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার নতুন ধরন উদ্বেগজনকহারে ছড়াচ্ছে। সরকার বিধিনিষেধ কার্যকর করলেও প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা আসবে না। তবে রাজস্ব আয়ের গতি কিছুটা কমতে পারে। এ বিষয়ে কথা হয় দেশের থিংকট্যাঙ্কখ্যাত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার ডেল্টা ধরনের মতো গুরুতর না হলেও নতুন ধরন ওমিক্রন আশঙ্কাজনকহারে ছড়াচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত করার কথা ভাবছে সরকার। বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে সাধারণ মানুষ কতটা পালন করেন, তা আমরা আগেও দেখেছি। ওমিক্রন ছড়াতে থাকলে রাজস্ব আদায়ের গতি কিছুটা কমে আসবে। তবে আহামরি বা বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় কমবে বলে মনে হয় না। তাই এনবিআরের উচিত ঘাটতি কমাতে যারা এখনো করজালের বাইরে রয়েছে, তাদের করের আওতায় নিয়ে আসা। সেইসঙ্গে করফাঁকি বন্ধে আরো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া উচিত বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। এনবিআর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়ার পরও গত দুতিন বছর ধরে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত গতি ফিরছে না ভ্যাট আদায়ে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা।

আলোচ্য সময়ে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৪৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। এই সময়ে ভ্যাটে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। আর ৬ মাসে ভ্যাটের প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে আয় করে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৩৯ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয় করে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯১ কোটি টাকা। ৬ মাসে আয় করে প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরিত হয়েছে আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে। এই খাতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৪০ হাজার ২০২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্ব ঘাটতি ৭ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। আর প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ ভোরের কাগজকে বলেন, আসলে রাজস্ব আহরণের গতি নির্ভর করবে অর্থনৈতিক সচলতার ওপর। অর্থনীতি ভালো থাকলে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বাড়বে। আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা এলে রাজস্ব আয়ের গতি কমবে। মূল বিষয়টা নির্ভর করছে করোনার নতুন ধরন আমরা কিভাবে সামাল দিচ্ছি বা কতটা সংক্রমণ কমিয়ে রাখতে পারছি তার ওপর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App