×

শিক্ষা

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বিরোধ চরমে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:৪৭ এএম

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বিরোধ চরমে

প্রতীকী ছবি

এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে বলছে অগঠনতান্ত্রিক

শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা এবং সরকারি কলেজে কর্মরত শিক্ষকদের সংগঠন ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’র নতুন কমিটি গঠন নিয়ে বিদায়ী কমিটির মধ্যে ‘কাজিয়া’ চরমে উঠেছে। এই ‘কাজিয়া’র মধ্যেই বিদায়ী কমিটির সভাপতি ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকারের গ্রুপ-পরবর্তী কমিটি গঠনের জন্য আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন শেষ করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মাউশির পরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরীর গ্রুপ আগামী মার্চের শেষ সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন করতে চলেছে। সব মিলিয়ে বিসিএস শিক্ষা সমিতির নির্বাচন নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ভীষণ উত্তেজনা বিরাজ করছে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের বিরুদ্ধে অগঠনতান্ত্রিক কাজ করার অভিযোগ করছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি কলেজ শিক্ষকদের আরেকটি সংগঠন স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদ বিসিএস শিক্ষা সমিতির সভাপতি গ্রুপকে সমর্থন দিয়েছে। এমনকি গতকাল শুক্রবার ঢাকা কলেজে সভাপতি গ্রুপের সভায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের নেতারা সশরীরে উপস্থিত ছিলেন।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের সদস্যরা শিক্ষা সমিতির সদস্য। তাদের মতে, প্রায় তিন বছর ধরে অচল করে রাখার পর প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। একই সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সমিতির নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। জানতে চাইলে বিসিএস শিক্ষা সমিতির বিদায়ী কমিটির সভাপতি ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার বলেন, এটা ঠিক যে যথাসময়ে নির্বাচন দেয়া যায়নি। মূল মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে গঠনতন্ত্র মেনে দুইবারে মোট ৪ মাস কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। এত বড় সংগঠনের পদ-পদবির পরিচয় দিয়ে কেউ কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করেছে। যে কারণে মেয়াদ শেষেও নির্বাচন দেয়া যায়নি। তিনি বলেন- শুধু তাই নয়, আমি বিদেশে অবস্থানকালে স্বার্থান্বেষী মহল গোপনে একটি আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করে ফেলেছিল। পরে অবশ্য ওই কমিটি ভাঙতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি চিহ্নিত স্বার্থান্বেষীদের কারণে ৬ মাসের জন্য গঠিত আহ্বায়ক কমিটিও নির্বাচন দিতে পারেনি। ফলে সারাদেশের সদস্যরা এখন একত্রিত হয়েছেন।

অন্যদিকে বিসিএস শিক্ষা সমিতির বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মাউশির পরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবীর চৌধুরী গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, বিদায়ী কমিটির সভাপতি গতকাল যে সাধারণ সভা ডেকেছেন সেটিই গঠনতন্ত্র মেনে হয়নি। তাদের সভা ডাকারই এখতিয়ার নেই। গতকালের সভায় ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে শাহেদুল বলেন, সংগঠনের পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য যেখানে আগে থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে এবং সর্বোপরি ভোটার তালিকা প্রণয়ন হচ্ছে সেখানে তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত গঠনতান্ত্রিক হয়নি। কাজেই তারা কে কী বললেন সেটা আমি দেখছি না। আমাদের সিদ্ধান্ত মতে, মার্চের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন হবে এবং সেলক্ষ্যেই কাজ এগিয়ে চলছে।

এদিকে গতকাল বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির জরুরি সাধারণ সভা বিদায়ী কমিটির সভাপতি ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর আলীর সঞ্চালনায় ঢাকা কলেজের শহীদ আ ন ম নজিব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সভা ভণ্ডুল করতে একটি গ্রুপ অপপ্রচার চালায়। তবে শেষ পর্যন্ত সভায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন শিক্ষা ক্যাডারের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা।

সভায় কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইমান আলীকে নির্বাচন কমিশনার ও রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবেদা সুলতানাকে সহকারী কমিশনার করে ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কমিশন ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করবে। নির্বাচন কমিশন ভোটগ্রহণে প্রয়োজনে প্রযুক্তির সাহায্য নিতে পারবে। একই সঙ্গে সাংগঠনিক শূন্যতা পূরণ ও নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতার জন্য পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ও সমিতির সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীরকে আহ্বায়ক ও ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদারকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর আলীকে সদস্য সচিব করে ৫১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পাশাপাশি ৩ সদস্যবিশিষ্ট নিরীক্ষা কমিটিও গঠিত হয়।

সভায় বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক মাসুমে রব্বানী খান, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ও সমিতির প্রাক্তন মহাসচিব অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর, সেকায়েপের প্রকল্প পরিচালক ও স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের সভাপতি অধ্যাপক মো. নাসির উদ্দিন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মহসিন কবীর, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক বেলা রানী সিংহ, বিপুল চন্দ্র সরকার, ফাতিহুল কাদির সম্রাট, তানভীর আলম, জিয়া আরেফিন আজাদ, নাসির উদ্দিন, তাজিব উদ্দিন, মুকিব মিয়া, কায়সুল বারী, আহমেদ জাফর সাদিক, শেখ নূর কুতুবুল আলম, শাহিনুল ইসলাম, এস এম কামাল আহমেদ, শওকত হোসেন, অলিউর রহমান, এনামুল হক, মুক্তার আহমেদসহ বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ এবং বিভিন্ন দপ্তর ও কলেজের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।

বক্তারা দীর্ঘদিন ধরে সমিতির নির্বাচন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতিকে কার্যকর করতে জরুরি সাধারণ সভা অপরিহার্য ছিল বলেও মতপ্রকাশ করেন। এছাড়া শিক্ষা ক্যাডারে পদ সৃষ্টি, পদ আপগ্রেডেশন, পদসোপান, পদোন্নতি, অর্জিত ছুটিসহ ক্যাডারের সব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এ জরুরি সাধারণ সভায় বক্তব্য দেন।

জানা গেছে, নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি সাধারণ সভাটি ডেকেছেন সাবেক ৫ শিক্ষক নেতা। তারা হলেন- বিদায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সেলিম উল্লাহ খন্দকার, সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক মাসুমে রাব্বানী খান ও অধ্যাপক অলিউল্লাহ আজমতগীর, স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসির উদ্দিন, সদস্য সচিব সৈয়দ জাফর আলী। একজন শিক্ষক নেতা জানান, সভাটি আরো পরে ডাকার চিন্তা ছিল। কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা সমিতির নামে টাকা তোলা শুরু করেছেন।

সমিতির জবরদখলকারীরা শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় ভয়ে জুনিয়র কর্মকর্তারা মুখ খুলতে পারছিলেন না। এ অবস্থায় সভাটি ডাকা হয়। ২০১৬ সালের ১ জুন ২ বছরের জন্য সর্বশেষ সমিতির নির্বাচন হয়। ২০১৮ সালের জুনে মেয়াদ শেষ হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App