×

খেলা

ক্রাইস্টচার্চের উইকেটে পেসাররাই হিরো

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৪৪ পিএম

ক্রাইস্টচার্চের উইকেটে পেসাররাই হিরো

টাইগার ও কিউই পেসার

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে জয় তুলে নেয়ার পর দ্বিতীয় টেস্টে ক্রাইস্টচার্চের মাঠে নামছে বাংলাদেশ দল। বে ওভালে ব্যাটসম্যান ও বোলারদের দারুণ নৈপুণ্যে ৮ উইকেটে বড় জয় পায় টাইগাররা। তবে ক্রাইস্টচার্চে সবুজ ঘাসের মাঠে জয় তারাই পাবে, যারা পেস বোলিংয়ে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে। এক্ষেত্রে ঘরের মাঠে সুবিধা তুলে নেবেন কিউই ফাস্ট বোলার টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, নেল ওয়েগনার ও কাইল জেমিসনরা। এদিকে দেশে এমন পিচ না পেলেও টম লাথামদের পিচে টাইগার বোলাররা সাফল্য পাবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। ইবাদত হোসেন, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুলরা এমন পিচে বেশ আশাবাদী।

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে উইকেটে সেভাবে ঘাস ছিল না, গতি থাকলেও বাউন্সের দেখা মেলেনি সেভাবে। হ্যাগলি ওভালে অবশ্য উইকেটে সবুজের অভাব থাকবে না বলেই মনে হচ্ছে। এবার কন্ডিশন একটু আলাদা হলেও সবুজ উইকেটে বাংলাদেশ ভীত নয়, বরং পেসাররা সেখানে বোলিং করতে মুখিয়ে আছেন বলেই জানান রাসেল ডমিঙ্গো। পেসারদের নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী ডমিঙ্গো বলেন, ‘আমি এখনো পিচ দেখিনি। ডানেডিন, ওয়েলিংটন ও হ্যামিল্টনে এর আগে গেলেও ক্রাইস্টচার্চে কোনো টেস্টের জন্য আমার আসাও হয়নি আগে। এই উইকেটে পেসাররা অনেক বেশি সুবিধা পায়। এটাও আমাদের সুবিধা দেবে। আমাদের কয়েকজন মানসম্পন্ন পেসার আছে। খুব কম সময়ই বাংলাদেশ ঘাসের উইকেটে সুবিধা নেয়ার কথা ভাবতে পারে। আমাদের তিন পেসার অনেক উঁচু মানের, তারা আত্মবিশ্বাসী। শুরুতে বোলিং করে কিছু উইকেট নিতে পারলে আশা করি, তাদের ঘায়েল করতে পারব।’

তবে তাদের পেসাররা যে বাংলাদেশকে ঘায়েল করে দিতে পারে সেটা ভুললেও চলবে না। নিউজিল্যান্ডের পেস আক্রমণের অন্যতম অস্ত্র টিম সাউদি ক্রাইস্টচার্চে এখন পর্যন্ত ৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। হ্যাগলি ওভালে ১৬ ইনিংসে তার উইকেট সংখ্যা ৩৯টি। মাত্র দুই ইনিংস বাদ দিয়ে বাকি সব ইনিংসেই পেয়েছেন উইকেটের দেখা। এই মাঠে সাউদি ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন দুইবার। হ্যাগলি ওভালে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ৬২ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট শিকার, ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই মাঠে একবার মাঠে নামেন সাউদি। ২০১৭ সালে ওই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৯৪ রানের বিনিময়ে ৫ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৮ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট শিকার করেন তিনি। সুতরাং সাউদি একাই যথেষ্ট টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপ ধসে দিতে।

হ্যাগলি ওভালে সাউদির চেয়ে বিধ্বংসী ট্রেন্ট বোল্ট। ৮ ম্যাচে ১৬ ইনিংসে তার উইকেট সংখ্যা ৪৮টি। এই মাঠে ৫ উইকেটের দেখা পেয়েছেন একবার। তিনি কোনো ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকেননি। হ্যাগলি ওভাল স্টেডিয়ামে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ৩০ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট, ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৭ সালে তিনি এই মাঠে প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানের বিনিময়ে ৪ এবং ৫২ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট শিকার করেন। টাইগার ব্যাটসম্যানরা বোল্টকে ঠিকমতো সামাল দিতে না পারলে বাংলাদেশের জন্য রান তোলা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

হ্যাগলি ওভালে আরেক বিধ্বংসী কিউই পেসার কাইল জেমিসন। এই মাঠে দুই ম্যাচে তিনি তিনবার পেয়েছেন ৫ উইকেটের দেখা, বাকি এক ইনিংসে ছিলেন উইকেটশূন্য। চার ইনিংসে ক্রাইস্টচার্চে তার উইকেট সংখ্যা ১৬টি। হ্যাগলিতে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ৪৮ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে। একই মাঠে ৭ ম্যাচ খেলে ২৫ উইকেট নিজের ঝুলিতে পুরেছেন। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০৬ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট শিকার এই মাঠে তার সেরা বোলিং ফিগার। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৭ সালে তিনি দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন।

এদিকে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের সঙ্গে আবহাওয়ার পার্থক্যটা টের পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘শুক্রবার বৃষ্টির জন্য আমাদের অনুশীলন সেশনটি হয়নি। তবে আমরা ভালো জিম সেশন করেছি। শনিবার অনুশীলনটা ভালো ছিল। আর আবহাওয়া একটু আলাদা। ঠাণ্ডাটা একটু বেশি, বাতাসও একটু শক্তিশালী। তবে শনিবার অনুশীলনে আমরা যতটুকু পেরেছি মানিয়ে নিয়েছি। এখন আমরা আশাবাদী।’ হ্যাগলি ওভালে একাদশে থাকা তিন টাইগার পেসারের মধ্যে একমাত্র তাসকিন খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে পারফরম্যান্স অতটা ধারালো ছিল না। এই মাঠে দুই ইনিংস মিলিয়ে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ২০১৭ সালে মাত্র একটি উইকেট শিকার করেন তাসকিন। চলতি ম্যাচে হয়তো সংখ্যাটা বাড়িয়ে নেবেন টাইগার পেসার। এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে তাসকিন উইকেট শিকার করেন ২৩টি। গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮২ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট শিকার এখন পর্যন্ত তার ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং ফিগার। একই বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ১২৭ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট শিকার করেন তাসকিন।

অন্যদিকে প্রথম টেস্টে ইবাদত হোসেনের দুর্দান্ত বোলিং তাকে এনে দিয়েছে ম্যাচসেরার পুরস্কার। হ্যাগলি ওভালেও ইবাদতদের জ্বলে ওঠার আকাঙখা প্রকাশ করে ডমিঙ্গো বলেন, ‘ইবাদত যা অর্জন করেছে, তার জন্য আমি খুবই খুশি। তবে পেসাররা অনেক উজ্জীবিত। এই কন্ডিশনে খেলার জন্য তাই তারা অনেক উন্মুখ হয়ে আছে। আশা করি ভালো করবে।’ ইবাদত তার ১১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৮টি উইকেট শিকার করেছেন। তার সেরা বোলিং ফিগার চলতি সিরিজে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৬ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট শিকার। অন্যদিকে শরিফুল ইসলামের টেস্ট ক্যারিয়ার বেশি দিনের নয়। গত অনূর্ধ্ব-১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী তরুণ এই ক্রিকেটার ২টি টেস্ট ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ৪ উইকেট। এর মধ্যে তার সেরা বোলিং ফিগার বে ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৬৯ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট শিকার। হয়তো ক্রাইস্টচার্চে তিনি নতুন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার দাঁড় করাবেন। পেসে ধার বাড়ানো আগে ক্রাইস্টচার্চে টসে জেতা গুরুত্বপূর্ণ। পরিসংখ্যান বলে, গত ১০ ম্যাচে মাত্র ১টি ম্যাচ জিতেছে আগে ব্যাট করা দল। নতুন বল ব্যবহারের জন্য প্রথম দিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই মাঠে প্রথম ইনিংসে গড় রান ২৮২।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App