×

খেলা

আবাহনীর ভয়ের কারণ সানডে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১১:০৫ পিএম

আবাহনীর ভয়ের কারণ সানডে

ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হাতে ঢাকা আবহনীর অধিনায়ক নাবিব নেওয়াজ জীবন ও রহমতগঞ্জের অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান কিরণ

ফেডারেশন কাপে ১২তম শিরোপা জয়ের হাতছানি ঢাকা আবাহনীর সামনে। তবে তাদের ডজন শিরোপা পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস এন্ড সোসাইটির স্ট্রাইকার সানডে চিজোবা। আবাহনীর সাবেক এই ফুটবলার যে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন সেটা শিকার করছেন ক্লাবটির কোচ মারিও লেমোসও। অবশ্য আকাশি-নীলদের চিন্তার অন্যতম কারণ রাফায়েল অগাস্তোর পচাট। ইনজুরিতে পড়ে আগেই দলের বাইরে ডোরিয়েলটন গোমেজ। সবমিলিয়ে ঘরোয়া লিগে প্রথম শিরোপা জয়ের সুবর্ণ সুযোগ এখন সানডে চিজোবারদের। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে রবিবার বিকাল ৫টায় ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে মাঠে নামবে রহমতগঞ্জ।

এই মৌসুমে ফেডারেশন কাপ দিয়ে সানডের নতুন করে পথচলা শুরু। নতুন মিশনে খারাপও করছেন না ৩২ বছর বয়সি স্ট্রাইকার। এখন পর্যন্ত তিন গোল করেছেন। ফেডারেশন কাপে তার দল রহমতগঞ্জও ফাইনাল খেলছে দ্বিতীয়বার। রবিবার ট্রফি জয়ের মঞ্চে যাদের প্রতিপক্ষ আবাহনী লিমিটেড। অথচ ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত আবাহনীই ছিল সানডের ঠিকানা। এই জার্সিতেই ৫১ ম্যাচে ৪৩টি গোল করেছেন। পেয়েছেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ। তবে পুরনো স্মৃতি ভুলে এখন বর্তমানে থাকতে চাইছেন তিনি। পেশাদারিত্বের সবটুকু উজাড় করে দিতে চাইছেন। সেমিফাইনালে মোহামেডানের বিপক্ষে এক গোল পেয়েছেন। ফাইনালে সাবেক ক্লাব আবাহনীর বিপক্ষেও গোল চাইছেন এই ফুটবলার। ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন করার প্রত্যয় জানিয়ে সানডে বলেন, ‘গোল করার দিকে দৃষ্টি থাকবে। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’

সানডেকে নিয়ে এখন সতর্ক থাকতে হচ্ছে আবাহনীকেও। বিশেষ করে দলটির কোচ মারিও লেমোস ভালো করেই জানেন, সানডে কতটা বিপজ্জনক। তাই সানডের প্রশংসা করে আবাহনী কোচ বলেন, ‘সানডে ভালো স্ট্রাইকার। আমাদের দলে অনেক দিন খেলেছে। তাকে নিয়েও ফাইনালে চিন্তা করতে হবে। ও খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।’ অবশ্য ফেডারেশন কাপে তিন গোল করা ঘানার আরেক ফরোয়ার্ড ফিলিপ আযহা ও সানডে চিজোবাকে নিয়ে আবাহনীকে আলাদা পরিকল্পনা করতে হবেই। তা নাহলে আবাহনীর জন্য ১২তম শিরোপা জয় কঠিন হয়ে পড়বে। আর সানডে সফল হতে পারলে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নেয়া রহমতগঞ্জও ট্রফি উঁচিয়ে ধরবে।

এদিকে চোটের কারণে সেমিফাইনাল খেলতে পারেননি আবাহনীর ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ডোরিয়েলটন গোমেজ। তবে সাইফ স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে ৩১ বছর বয়সি স্ট্রাইকারের অভাব অনুভূত হয়েছে। এই চোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেক কৌশলী ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল অগাস্তোর চোটও। যে কারণে ফাইনালে রহমতগঞ্জের বিপক্ষে এই দু’জনের মাঠে নামাটাই অনিশ্চিত। তবে আকাশি-নীল জার্সিধারীদের পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস আশা ছাড়েননি এখনো। দুই ব্রাজিলিয়ান তারকাকে নিয়েই আগামী ৯ জানুয়ারি ট্রফি ছোঁয়ার মঞ্চে নামতে আশাবাদী এই ৩৫ বছর বয়সি কোচ। ৩১ বছর বয়সি স্ট্রাইকার ডোরিয়েলটন চার গোল করে এখনো ফেডারেশন কাপে এককভাবে শীর্ষে। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে গতকাল বিকালে একাই হালকা অনুশীলন করেছেন। রাফায়েল অবশ্য অনুশীলন করতে পারেননি। বিশ্রামে ছিলেন পুরোপুরি।

সেমিফাইনালে কুঁচকির চোট নিয়ে মাঠ থেকে উঠে যেতে হয়েছে। তবে কুঁচকির এই চোট গুরুতর নয় বলে জানিয়ে লেমোস বলেন, ‘রাফায়েলের চোট যতটা মনে করেছিলাম, ততটা গুরুতর মনে হচ্ছে না। চিকিৎসা চলছে। আশা করছি, আমরা তাকেও ফাইনালে পাব।’ আবাহনীর কোচ আশাবাদী হলেও চোট নিয়ে এই ফুটবলার বলেন, ‘এই মাঠে খেলা কঠিন। চোটের যা অবস্থাÑ তাতে আমি ফাইনাল খেলতে পারব কিনা এখনো জানি না।’ চোট যে শুধু দুই ব্রাজিলিয়ানের তা কিন্তু নয়। চোট পেয়ে আগেই ছিটকে গেছেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মোহাম্মদ হৃদয়। এছাড়া রাইট ব্যাক সুশান্ত ত্রিপুরাও ব্যথা পেয়েছেন। হৃদয় ফাইনাল মিস করবেন এটা নিশ্চিত। তবে সুশান্তের খেলার সম্ভাবনা আছে।

সদ্য সমাপ্ত স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী। কোয়ার্টার ফাইনালে আকাশি-নীলরা শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল। এরপর আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তারা সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে। টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে সাইফকে হারানোর ম্যাচে তাদের জয়ের নায়ক গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল। সাইফের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার শট বা দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন সোহেল। শুধু জামালের নয়, রুয়ান্ডার ডিফেন্ডার এমেরি বেইসেঙ্গের শটও রুখে দেন এই অভিজ্ঞ গোলরক্ষক। যার প্রতিদান ম্যাচ শেষে হাতেই পান সোহেল। সেমিফাইনালে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকার ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল কলিনন্দ্রেস। তবে পুরস্কার হাতে নিয়ে মঞ্চেই সোহেলকে ডেকে নিয়ে নিজের পুরস্কার তুলে দিয়ে সবাইকে অবাক করে দেন কলিনদ্রেস। সুতরাং আবাহনীর বিদেশি ফরোয়ার্ডদের বাইরে রহমতগঞ্জের অন্যতম চিন্তার কারণ গোলরক্ষক সোহেল। ম্যাচে শেষে তাই সোহলের প্রসংশা করতে ভুলেননি আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস। তিনি বলেন, ‘গোলরক্ষক শহিদুল দারুণ খেলেছে। কলিনদ্রেসসহ অন্যরাও ভালো খেলেছে।’ রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ফাইনাল নিয়েও লেমস আশাবাদী, ‘ট্রফির জন্য আমরা খেলব। আমি আত্মবিশ্বাসী। জিততে পারব।’

এর আগে আসরে দশবারের চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে রহমতগঞ্জ। ফেডারেশন কাপের প্রথম সেমিফাইনালে তারা গত বৃহস্পতিবার সাদা-কালোদের বিপক্ষে ২-১ গোলের ব্যবধানে জয় তুলে নেয়। দলের জয়ে অবদান রেখে গোল দুটি করেন ফিলিপ আযহা ও সানডে চিজোবা। এর আগে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষেও এই দুই ফুটবলার গোল করেন। অতিরিক্ত সময়ে ৪-৩ গোলে জেতা ম্যাচটিতে দুটি গোল করেন ফিলিপ আযহা, একটি গোল করেন সানডে। সুতরাং ঢাকা আবাহনী যে খুব সহজে রহমতগঞ্জকে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নেবেন এমন ভাবাটা বোকামি। সানডে চিজোবা আবার আবাহনীর সাবেক ফুটবলার। এই মৌসুমে ধারে তিনি রহমতগঞ্জের হয়ে খেলছেন। আকাশি-নীলদের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার জায়গা তিনি খুব ভালো করেই জানেন। বলা যায়, ফাইনাল ম্যাচের লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি। এর আগে ২০১৯-২০ মৌসুমে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে খেলেছিল রহমতগঞ্জ। যদিও সেবার বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে শিরোপা ঘরে তোলা হয়নি তাদের। তবে এবার তাদের সামনে সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে প্রথমবারের মতো নিজেদের ঘরের ফেডারেশন কাপের শিরোপা তোলার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App