×

রাজনীতি

‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গঠনে বিএনপি কোমর বেঁধে মাঠে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:০৬ এএম

কঠোর হুঙ্কার আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার হাঁকডাক দিয়ে ছোট দলের সঙ্গে বড় দলের নেতাদের সম্মিলন ঘটানোর প্রস্তুতি চলছে বিএনপিতে। বৈশ্বিক রাজনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয়তাবাদী চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়েই আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার রূপরেখা তৈরি করছে দলটি। এর অংশ হিসেবে সরকারবিরোধী দলগুলোকে একই বৃত্তে এনে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’ গঠনে কোমর বেঁধে মাঠে নামতে যাচ্ছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

নেতারা জানান, দুটি লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে ঐক্যের ‘রোডম্যাপ’। প্রথমত, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি এবং সুচিকিৎসা এবং দ্বিতীয়ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের বিরুদ্ধে পোক্ত আন্দোলন গড়ে তোলা। এজন্য সরকারবিরোধী দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করাতে দুয়েকদিনের মধ্যেই আলোচনা শুরু করবে বিএনপি। গত ৩ জানুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করেন বিএনপির নেতারা।

ওই আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে ঐক্যের রোডম্যাপ প্রস্তুত করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসরাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাতে হলে শুধু বিএনপির ঐক্য নয়, জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ বলা যাবে না। আমরা ভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবো। সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি বৃহত্তর ঐক্যজোট গঠনের লক্ষ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আলোচনা : বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, প্রকাশ্যে ঘোষণা না দিলেও দলে ঐক্যের আলোচনা চলছে গত বছরের মধ্যভাগ থেকেই। গত কয়েক মাস একটি জাতীয় ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে কাজ করছে বিএনপি। বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ বিরোধীদের অভিন্ন দাবিগুলো সমন্বয় করে বিরোধী দলগুলোর আলাপ বহুদূর এগিয়েছে। অধিকাংশ দলই জামায়াতে ইসলামীকে ছাড়ার শর্তে ঐক্যে যেতে রাজি। সূত্র জানায়, ‘জাতীয় ঐক্যের দাবি ও লক্ষ্য’ শিরোনামে ঐক্য গঠনের কাজ চলছে। একটি খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর কাছ থেকেও আলাদা প্রস্তাব চাওয়া হবে। প্রস্তাবগুলো সমন্বয় করে মূল প্রস্তাব তৈরি হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে দেয়ার ঘোষণা আসবে। তবে সেক্ষেত্রে ২০ দলীয় জোটকে ‘স্বতন্ত্র’ রাখা হবে নাকি ‘বৃহত্তর ঐক্য’ থাকবে সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।

যা থাকছে ঐক্যের প্রস্তাবে: কমপক্ষে ১০টি বিষয় সামনে রেখে ঐক্যের প্রস্তাবনায় থাকছে- বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, নিরপেক্ষ সরকার গঠন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শাস্তি প্রত্যাহার এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ইভিএম বাতিল, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করা। বিএনপির তিনজন সিনিয়র নেতাকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে ১২ জন সাবেক ছাত্রনেতাও কাজ করছেন।

ইতিবাচক অবস্থানে সিপিবি : ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত জামায়াতের সঙ্গে জোটগত সম্পর্ক থাকলে বিএনপির নেতৃত্বে কোনো ঐক্য হবে না বলে মত দিয়েছিল কিছু দল। ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি জানালেন, সরকারের বাইরে যেসব দল আছে, তারা সবসময় বৃহত্তর ঐক্যের গঠনে পজিটিভ। কিন্তু এই দলগুলোর মধ্যে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিপিবি ও বাসদ। তবে তারা এখন নরম। তবে জামায়াত ইস্যুকে সামনে এনে অনেকেই বৃহত্তর ঐক্যে যাবে না। তাই বিএনপির উচিত হবে আগে জামায়াত ইস্যু আগে নিষ্পত্তি করার পরে ভিন্ন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসা। জানতে চাইলে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এক লুটেরার হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে আরেক লুটেরার হাতে দেশকে তুলে দিতে কারও সঙ্গে আমরা ঐক্য করতে পারি না।

কে হবেন ঐক্যের নেতা : এবারের বৃহৎ ঐক্যের প্রধান নেতা নির্বাচনের বিষয়ে বেশ সর্তক আলোচনা শুরু হয়েছে দলটির ভেতরে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা স্পষ্ট করার ব্যাপারে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই চিন্তা করেছন। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, বৃহত্তর ঐক্যজোটের নেতৃত্ব বিএনপির হাতেই থাকবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App