×

মুক্তচিন্তা

নববর্ষে ফানুস : আনন্দ বিষাদে পরিণত হচ্ছে!

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ১২:৫৮ এএম

নববর্ষে ফানুস : আনন্দ বিষাদে পরিণত হচ্ছে!

একটি বছর পেরিয়ে গেছে। নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে সারা পৃথিবী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইংরেজি নতুন বছরকে বিভিন্নভাবে বরণ করে নিয়েছে। এর ধরন এবং গড়ন ভিন্ন। তবে আনন্দের উপলক্ষ এক। বর্ষবরণ। উৎসব, পার্বণে-আনন্দে উল্লাসে আজকাল ফানুস উড়ানো বেশ জনপ্রিয়। নতুন বছরকে বরণ করে নিতেও ফানুস উড়িয়েছে, বাজি বা পটকা ফুটিয়েছে। মানুষ তো আনন্দ করতে ভালোবাসে। আনন্দ করবেই। ফানুস উড়ানো বা বাজি ফোটানোও খারাপ কিছু না। কিন্তু এই আনন্দ করতে গিয়ে যদি কারো বিপদ হয়, যদি অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটে তাহলে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এবারের থার্টিফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষকে বরণ করে নিতে বছর শুরুর মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই সারাদেশ থেকে প্রায় ২০০টি অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে ফায়ার সার্ভিস ও ৯৯৯-এর কন্ট্রোল রুমে। এসব অগ্নিকাণ্ডের পেছনের প্রাথমিক কারণ হিসেবে জানা গেছে আমাদের আনন্দের ফানুস ওড়ানো ও বাজি ফোটানো থেকে! আনন্দ করতে গিয়ে উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার কারণ হয়েছে এসব ফানুস বা পটকা। এই অগ্নিকাণ্ডে আমাদের দেশে প্রতি বছর অসংখ্য প্রাণহানি এবং আহত ও সম্পদ ধ্বংসের কারণ হচ্ছে। মাত্র কয়েকদিন আগে সুগন্ধার লঞ্চের আগুনে পোড়া মানুষের সারি এখনো আমাদের স্মৃতিতে দগদগে হয়ে আছে। এখন পর্যন্ত সেই ঘটনায় ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বহু মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে চিৎকার করছে। মানুষের মৃত্যুঝুঁকি আজ নানা কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও মানুষের লক্ষ্য একটি নিশ্চিত জীবন। সেই লক্ষ্যেই সে উপার্জন করছে। সেই লক্ষ্যেই প্রতিদিন কাজ করছে। কিন্তু তা পাচ্ছে না। কারণ সেই মানুষই। দুর্ঘটনা শব্দটির ভেতর আজ বহু মৃত্যু রয়েছে যেখানে একটু সচেতন হলেই রোধ করা যায়। একটু দায়িত্বশীল আচরণ করলেই এ ধরনের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো। মানুষ মানুষকে অবহেলা করার পরিমাণ একটু কমালেই অনেকের জীবন নিরাপদ করতে ভূমিকা রাখা যেতে পারে। আমাদের দেশে বহু ধরনের দুর্ঘটনার মধ্যে অগ্নিকাণ্ড অন্যতম। কখনো বহুতল ভবনে আগুন ধরে মানুষ পুড়ে মারা যায় আবার কখনো রাসায়নিক গুদামে আগুন ধরে। এভাবে প্রতি বছর বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ হয় আগুন। এখন আবার নতুন করে যোগ হলো এসব ফানুস ও বাজি। এভাবে নিজের আনন্দের কারণে অন্যের জীবন ও সম্পদ ঝুঁকিতে ফেলা মানবিক দৃষ্টিতে অপরাধ। অগ্নিকাণ্ড ঘটার পর জানা যায় সেই অগ্নিকাণ্ড ঘটার পেছনের কারণ। সেসব কারণের বিপরীতে একাধিক সুপারিশ করা হয়। জানা যায়, সেই ভবনটি বিল্ডিং কোড মেনেই তৈরি হয়নি। অর্থাৎ দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে বহু প্রাণহানি ঘটার পর এতসব সমস্যা, অনিয়ম সামনে আসে। এই প্রাণহানির সংখ্যা দীর্ঘ হয়। বৃদ্ধি পায় অগ্নিকাণ্ডে আহত এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে যে সুপারিশগুলো করা হয় তার বাস্তবায়ন হলে এ ধরনের ঘটনা অনেকটাই রোধ করা যেত। ২০২২ সালকে সাদরে বরণ করেছি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে নতুন একটি বছর আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে। পার করে আসা বছর অর্থাৎ ২০২০ সালও শুরু হয়েছিল কিছুটা আতঙ্ক নিয়ে। বিশ্বজুড়েই ছিল করোনা ভাইরাসের তাণ্ডব। ফলে নতুন বছর ঘিরে উদ্দীপনা একটু বেশিই ছিল। তবে আনন্দের আতিশয্যে আমাদের কী করা উচিত আর কী করা উচিত না তা ঠিক করা উচিত। ফানুস ওড়ানো অথবা বাজি ফোটানো আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। তবে সেটা ততক্ষণই উত্তম যতক্ষণ তা কারো ক্ষতির কারণ না হয় বা দুর্ঘটনার কারণ না হয়। যা এবার ঘটেছে তা যেন আর কোনো বছর না ঘটে সেদিকে আমাদেরই লক্ষ্য রাখতে হবে।

অলোক আচার্য : শিক্ষক ও লেখক, পাবনা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App