×

জাতীয়

সহিংসতা-প্রাণহানির মধ্য দিয়ে শেষ পঞ্চম দফা ইউপি ভোট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:১৭ পিএম

সহিংসতা-প্রাণহানির মধ্য দিয়ে শেষ পঞ্চম দফা ইউপি ভোট

বুধবার ইউপি নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ভোটাররা। ছবি: ভোরের কাগজ

ইউনিয়ন পরিষদ ভোটের পঞ্চম ধাপেও ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলাকালেই ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে- গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার জুম্মারবাড়ি ইউনিয়নে ১ জন, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ১ জন, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউনিয়নে ২ জন, চাঁদপুর জেলার কচুয়া ও হাইমচরের দুই কেন্দ্রে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে দুইজন, জামালপুরের বকশীগঞ্জে মেরুরচরে ১ জন ও মানিকগঞ্জে ১ জন নারী নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় প্রায় ৫০ জনকে আটক ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া, নির্বাচনে অনেক স্থানেই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, বোমাবাজি, ব্যালট ছিনতাই, বুথ দখল, প্রার্থীদের ভোট বর্জন, পুলিশের গাড়িতে আগুন, প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এধাপে ৭০৮টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে ৪০টি ইউপিতে ইভিএমে ভোট নেয় ইসি। ইউপি নির্বাচনের বিগত চার ধাপে মোট ৮৪ জন নিহত হয়েছে। যদিও ইসির তথ্যমতে মৃত্যুর সংখ্যা ৬৪ জন।

এদিকে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া পঞ্চম ধাপে দেশের ৭০৮টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোট সুষ্ঠু ও ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। বুধবার (৫ জানুয়ারি) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইউপি ভোট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি জানান, কয়েকজনের মুত্যু হয়েছে , যা অনাকাঙ্খিত। এছাড়া সংঘর্ষের কারণে ৯টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলেও জানান তিনি।

আবার ভোট গণনায় বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত খবরে আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এগিয়ে থাকলেও বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের পিছে পিছে নিঃশ্বাস ফেলছেন বলে জানা গেছে।

পঞ্চম ধাপের ভোট নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার জুম্মারবাড়ি ইউনিয়নের একটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে আবু তাহের (৩৮) নামে এক মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকের ওপর হামলাসহ গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী মেম্বার প্রার্থী রাসেল আহমেদের (ফ্যান) প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ স্বজনদের। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে সাঘাটা উপজেলার জুম্মাবাড়ি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জুম্মাবাড়ি আদর্শ কলেজ কেন্দ্রের বাইরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবু তাহের জুম্মারবাড়ি ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের মো. ওমর আলীর ছেলে।

চাঁদপুর জেলার কচুয়ায় নির্বাচনী সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন শরীফ হোসেন, তার বাড়ি হাতিরবন্ধ গ্রামে। দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এছাড়া একই জেলায় হাইমচরের দুই কেন্দ্রে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন অজ্ঞাতনামা আরো একজন। ধারণা করা হচ্ছে- ওই যুবক বহিরাগত। জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মিলন মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অপর দিকে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে জাকির হোসেন নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আরও একজন সংঘের্ষে মারা গেছে। রামেশ্বরপুর জাইগুনি গ্রামে দুপুরে এ সংঘর্ষ হয়। সে সময় আহত জাকিরকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ৩৫ বছরের জাকিরের বাড়ি গাবতলীর রামেশ্বরপুর গ্রামে।

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় নির্বাচনী সহিংসতায় ১ জন নিহত হয়েছে। তার নাম অংকুর দত্ত (৩৮)। তিনি সিংহরা দত্ত বাড়ির নেপাল দত্তের ছেলে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চাতরী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান থানা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আনোয়ার খালেদ। চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জামালপুরের বকশীগঞ্জে মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংর্ঘষ হয়েছে। এ ঘটনায় আল আমিন (২২) নামে একজন মৃত্যু হয়েছে। আল-আমিন বাঘাডুবা গ্রামের আচ্ছা মিয়ার ছেলে।

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে নির্বাচনী সহিংসতার মধ্যে পড়ে স্ট্রোক করে ছলেমন খাতুন (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ দুপুরে ভোট চলাকালে উপজেলার বাচামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ওই নারীর প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ছলেমন খাতুনের বাড়ি উপজেলার বাচামারা গ্রামের খোরশেদ আলমের স্ত্রী।

এদিকে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার আমিশাপাড়া ইউনিয়নের বাচারগাঁ ভোটকেন্দ্রের কাছেই একটি ঝোপ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেশীয় তৈরি এলজি উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার সকালে স্থানীয়রা ভোট দিতে এসে ঝোপে অস্ত্রটি দেখতে পেয়ে কেন্দ্রের পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে এলজিটি উদ্ধার করে।

এছাড়া বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App