×

সাহিত্য

শিল্পকলায় শুরু ১০ দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা উৎসব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:৫৩ পিএম

শিল্পকলায় শুরু ১০ দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা উৎসব

বুধবার শিল্পকলায় শুরু হওয়া ১০ দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা উৎসবে জমে ওঠে গান-বাদ্যের আসর। ছবি : ভোরের কাগজ

শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেই উৎসবের আমেজটা টের পাওয়া গেল। পৌষের শীত সন্ধ্যায় ঠাণ্ডা হিম বাতাসে উৎসবের আমেজটা নতুন মাত্রা পেল। উৎসবের প্রবেশ মুখেই নানা পিঠার সুগন্ধে জিভে জল আসার জোগাড়। স্টলগুলো ঘুরে দেখা গেল বাঙালি ঐতিহ্যের নানা রকম পিঠা। হৃদয় হরণ, ডিম সুন্দরী, বিবি খানা, চালতা পাতা, জামাই পিঠা, পুলি, ভাপা, চিতই, পাটিসাপটা, মাংস পিঠা, নকশা, পাকন, শামুক, ডিম, গোলাপসহ মজার মজার নামের সব পিঠার দেখার মিলল। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি স্টলেই তৈরি করা হচ্ছে গরম গরম পিঠা। টাটকা পিঠার স্বাদ চাইলে চুলা থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই খেয়ে ফেলতে পারেন পছন্দের পিঠাটি। ঝাল পিঠার পাশাপাশি হাঁসের মাংস ও মুরগির মাংসের সঙ্গে রয়েছে চাপটি খাওয়ার ব্যবস্থা। সেটাও তৈরি করে দেওয়া হবে একদম চোখের সামনেই। উৎসবে প্রায় ৫০টি স্টলের পিঠার সমাহার যেমন ঠিক তেমনি স্টলের নামেও দেখা গেল বৈচিত্র্য। আর এর মধ্যে নৃত্যের তালে আর গানের সুরে পিঠা কেনা ও খাওয়ায় শিল্পকলা একাডেমিজুড়ে ফুটে উঠেছে চিরচেনা বাঙালি সংস্কৃতির শ্বাশ্বতরূপ।

এর আগে একাডেমির কফিহাউজের মুক্তমঞ্চ থেকে নানা রঙের বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দশদিনের এই পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন উদ্বোধনী আয়োজনের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ সময় উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের বিভিন্নস্থান থেকে বেলুন পৌষের সাঁঝের আকাশে বেলুন ওড়ান অনুষ্ঠানে আগতরা।

জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ আয়োজনে এটি উৎসবের পঞ্চদশ আসর।

জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের আহবায়ক ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যজন আতাউর রহমান, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ, উৎসবের পৃষ্ঠপোষক সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক জাফর সিদ্দিকী, নৃত্যশিক্ষক আমানুল হক, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম ও শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন শিল্পকলা একাডেমির সচিব মো. আসাদুজ্জামান।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কে এম খালিদ বলেন, পিঠা বাঙালির চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। শীত আর পিঠা একে অপরের পরিপূরক। বাংলার গ্রামের মা, চাচি, খালা, বোন, ভাবিদের চিরায়ত সেই ঐতিহ্য নগরজীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে। আবহমান বাংলার এই ঐতিহ্যকে তুলে ধরার লক্ষ্যে পিঠা উৎসবকে দেশব্যাপি ছড়িয়ে দিতে হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ বিভাগীয় পর্যায়ে জাতীয় পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছিল। অদূর ভবিষ্যতে জেলা পর্যায়েও আয়োজন করা হবে এই উৎসব। সারাদেশের পিঠাশিল্পীদের অংশগ্রহণে প্রায় ৫০টি স্টল দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের উৎসব।

আতাউর রহমান বলেন, পিঠা উৎসব আমাদের বাঙ্গালিত্বের অর্জন। নিজস্ব সংস্কৃতির উৎসব। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বদেশ না হলে আজ এই মুক্ত ভূমিতে দাড়িয়ে কথা বলতে পারতাম না। এ অর্জন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্য এসেছে।

আমানুল হক বলেন, পিঠা উৎসবের মাধ্যমে আনন্দ উদযাপন হচ্ছে। এ উৎসব ঐতিহ্যেরই অংশ।

লিয়াকত আলী লাকী বলেন, বাংলাদেশ পিঠা পুলির দেশ। আর জীবনকে উদযাপনের উৎসব হচ্ছে পিঠা উৎসব। এর পেছনে আমাদের মা, খালা আর নানীরা নান্দনিকতায় ফুটিয়ে তোলেন পিঠার সৌন্দর্য।

পিঠা উৎসবে আসা ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক এর শিক্ষার্থী সেজান মাহমুদ বলেন, শীতেই বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়। শহুরে সমাজে সেই ঐতিহ্যের ধারা কিছুটা মলিন হয়ে গেলেও এমন পিঠা উৎসবের আয়োজন বাঙালি ঐতিহ্য রীতিনীতিকে কিছুটা মনে করিয়ে দেয়। উৎসবের আমেজ লাগে মনে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থী তানভীর আদর বলেন, ক্লাস আর পরীক্ষার ব্যস্ততায় এবার বাড়িতে বেশিদিন কাটাতে পারিনি মা-বাবার সঙ্গে। শীতের এ সময়টায় খেলাধুলা আর মায়ের হাতের পিঠা খেয়েই অনেকটা সময় পার করে দিতাম। স্মৃতিগুলো মনে পড়লে বিষণ্ন হয়ে উঠতাম। তবে এ পিঠা উৎসব সেই কষ্টের কিছুটা হলেও লাঘব করেছে।

উৎসবের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে পিঠা খাওয়া ও বিকিকিনির পাশাপাশি প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে নাচ, গান, আবৃত্তি, অ্যাক্রোবেটিকসহ ও পথনাটকসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। আগামী শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) শেষ হবে দশদিনের এই পিঠা উৎসব। সমাপনী আসরে সেরা পাঁচজন পিঠা শিল্পীকে দেয়া হবে সম্মাননা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App