×

সারাদেশ

পীরের কারণে ভোট দিলেন না চাঁদপুরের নারীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:০২ পিএম

পীরের কারণে ভোট দিলেন না চাঁদপুরের নারীরা

চাঁদপুরে পীরের নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে কাউনিয়া হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রে ভোট দিচ্ছেন সাবেক সাংসদ ড. শামছুল হক ভূঁইয়ার স্ত্রী চিকিৎসক আনোয়ারা হক। ছবি : সংগৃহীত

ভোটকেন্দ্রে গেলে নারীদের পর্দার খেলাপ হবে- পীরের ফতোয়া মেনে নারীরা কেউ ভোট দিতে যাননি। এমনকী তারা মনে করছেন, পীরের এ নির্দেশ অমান্য করলে মহামারিরূপে ছড়িয়ে পড়বে কলেরা-বসন্ত। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে।

ওই এলাকার নারীরা এর আগে জাতীয় পরিচয়পত্র নিলেও কখনোই ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি। জানা গেছে, এবারের ইউপি নির্বাচনে দুই-একজন সচেতন নারী চুপিসারে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিয়েছেন। অন্যদিকে ভোটকেন্দ্রে পুরুষের লাইন ছিল দীর্ঘ। এ দৃশ্য ভোটগ্রহণে দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবাক হয়েছেন।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে ১২ হাজারের বেশি নারী থাকলেও সেখানে গুটিকয়েক নারী ছাড়া কেউ ভোট দেননি। এ বিষয়ে চরমান্দারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসা আব্দুল আউয়াল (৫০) বলেন, নারীদের ভোট দিতে জৈনপুরের হুজুরের নিষেধ আছে। তাই নারীরা ভোট দিতে আসছেন না।

কাউনিয়া শহীদ হাবিবউল্লাহ হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন সাবেক সাংসদ ড. শামছুল হক ভূঁইয়ার স্ত্রী চিকিৎসক আনোয়ারা হক। তার মতো আরও কয়েকজন সচেতন নারী ভোট দিলেও প্রার্থীদের নারী এজেন্ট এমনকি নারী প্রার্থীদেরও কেন্দ্রে দেখা মেলেনি।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, জেলার তিনটি উপজেলার ২৮টি ভোট কেন্দ্রগুলো সবকিছু স্বাভাবিক দেখলেও রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে নারীদের ভোট দিতে না দেখে অবাক হন। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগে জেলা প্রশাসকসহ এখানে এসে নারীদের ভোটদানে উদ্বুদ্ধকরণ সভা করেছি। কিন্তু তাতেও ফল মেলেনি।

স্থানীয়রা জানান, ষাটের দশকে ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া বাজারের পূর্ব পাশে বসবাস করতেন জৈনপুরের পীর মওদুদুল হাসান। ওই সময় এলাকায় কলেরা-বসন্ত মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মহামারি থেকে রক্ষা পেতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এ সময় পীর মওদুদুল হাসান জানান, নারীদের বেপর্দার কারণেই এ মহামারি। তাই নারীদের কখনোই পর্দার খেলাপ করা যাবে না। এর কিছুদিন পর ভারতের জৈনপুরে চলে যান পীর মওদুদুল হাসান। স্বাধীনতার পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সুবিধাবাদীরা তার কথার ওপর রঙ চড়িয়ে প্রচার করেন, নারীরা ভোট দিলে এলাকায় আবারও কলেরা-বসন্ত মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়বে। ব্যস, সেই থেকে আজ পর্যন্ত নারীদের ভোট দেওয়া বন্ধ! ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম কাউনিয়া, চর পক্ষিয়া, চর মান্দারি, উত্তর ও দক্ষিণ সাহেবগঞ্জ, সাহেবগঞ্জ, গৃদকালিন্দিয়া, চর মুঘুয়া গ্রামের নারীরা যুগের পর যুগ ধরে নিজের ইচ্ছায়ই ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App