×

মুক্তচিন্তা

ডেটিং অ্যাপ বন্ধের উদ্যোগ নিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:৪৬ এএম

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জায়ান্ট ফেসবুক নতুন একটি ডেটিং অ্যাপ চালু করেছে। ‘স্পার্কড’ নামের এ অ্যাপ থেকে চার মিনিটের ভিডিও ডেটিং করা যায়। সরাসরি মেসেজিংয়ের পরিবর্তে ছোট ভিডিওর মাধ্যমে ডেটিং করার নতুন অ্যাপ এটি। ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারকারীর বয়স অবশ্যই ১৮ বা তার বেশি হতে হবে। যাদের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিঙ্গেল তারাই এই সাইট ব্যবহার করতে পারে। বন্ধু তালিকায় থাকা কারো নাম সম্ভাব্য ম্যাচ হিসেবে আসবে না এই সাইটে। ফেসবুক গ্রুপ ও ইভেন্ট থেকে তথ্য নিয়ে সম্ভাব্য ম্যাচ দেখানো হবে। অ্যাপটির মাধ্যমে কাউকে কোনো ছবি বা ওয়েবসাইট লিঙ্কও পাঠানো যাবে না। সিক্রেট ক্রাশ হিসেবে মোট ৯ জনের নাম তালিকায় অ্যাড করা যায়। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২৫টি দেশে চালু হয়েছে ফেসবুক ডেটিং অ্যাপ। ২০২০ সালে অ্যাপটি ব্যবহারকারী সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ কোটি। মূলত ফেসবুক এই সেবা চালু করেছে অর্থ আয়ের জন্য। এ কারণে প্রাইভেসি রক্ষার প্রতিজ্ঞা তারা রাখছে না। কোন ধরনের মানুষকে আমি সঙ্গী হিসেবে চাই সে-সংক্রান্ত তথ্য তারা বিক্রি করে থাকে। এভাবে তারা ব্যক্তিগত জীবনের আরো গভীরে প্রবেশ করতে থাকে। ডেটিং অ্যাপ জনপ্রিয় হতে শুরু করে ২০১৬ সালের দিকে। এখন বাজারে ই-হারমোনি, হিঞ্জ, দ্য লিগ, টিন্ডার ও বাম্বল ডেটিং অ্যাপের পাশাপাশি কমিউনিটিভিত্তিক অ্যাপও আছে। আছে সমকামী, ধার্মিক, কৃষক ও বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে আলাদা অ্যাপ। বর্তমানে এটি বিনোদনের পরিবর্তে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র কয়েক মিনিটের ভিডিওতে নিজের ব্যাঙ্গাত্মক বাজেভঙ্গি কিংবা রোম্য সংলাপের ঠোঁট দেখানোর, কিংবা দেহের কিছু অংশ দেখানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে তরুণ প্রজন্ম। যুবসমাজের একটি বৃহৎ অংশ ডেটিং অ্যাপের অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই অ্যাপের করাল গ্রাস থেকে তাদের সরিয়ে আনতে না পারলে জাতি খুব তাড়াতাড়ি নৈতিক অবক্ষয়ের অতলে হারিয়ে যাবে। সুস্থ ধারার ভিডিওর পাশাপাশি এই ভিডিওগুলোতে আছে যৌন উসকানিমূলক ভিডিও। যা কোমলমতি যুবাদের মনে হতাশা সৃষ্টিসহ নারীর প্রতি আসক্তি বাড়িয়ে দেয়। এমনকি এর মাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে বাংলাদেশ থেকে ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নারী পাচার করে দিচ্ছে তারা। ধরতে গেলে ডেটিং নামের এই সাইটটি যেন এখন নারী ও শিশু পাচারকারীদের মূল সংগঠন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সাইটে নানা রকম কুরুচিপূর্ণ আচরণ, মনোযোগ আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ ভিডিও দেখিয়ে থাকে তরুণ-তরুণীরা। রাতভর চলতে থাকে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা। অনেকেই না বুঝে রাতারাতি তারকা হওয়ার উদ্দেশ্যে যোগ দেয় এসব সাইটে। তারকা বানিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করা হয় অনেক তরুণীকে। গ্যাংয়ের কবলে পড়ে অধিকাংশই মাদকাসক্তিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এসব অ্যাপের ব্যবহার যুবকদের বিপথগামী করছে। নষ্ট হচ্ছে নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। তরুণ ও কিশোররা গ্যাংয়ে জড়িয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে, হয়ে উঠছে সহিংস। লাইভে এসে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দিয়ে এবং যৌনতার ফাঁদে ফেলে কৌশলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কাড়ি কাড়ি টাকাও হাতিয়ে নিচ্ছে। এই অ্যাপের প্রভাব যে শুধু অনলাইনেই বিচরণ করছে তা নয়, বাস্তব সমাজেও পড়ছে এর চিত্র। তাদের পোশাকের ভেতরেও নেই কোনো মার্জিত ছাপ। তাই নৈতিক এবং সামাজিক অবক্ষয় রোধে বাংলাদেশে ডেটিং অ্যাপের মতো ভিডিওভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত। আগামী দিনে এমন ধরনের অ্যাপের নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাঁচতে এবং নতুন প্রজন্মকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে এই অ্যাপ বন্ধ করতে হবে। জাতিকে আলোর পথ দেখাতে কিংবা জাতিকে নৈতিক শিক্ষা দিতে বা অপসংস্কৃতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এসব মাধ্যম বন্ধ করে দিতে হবে। যুগ যুগ ধরে নারীর ওপর সহিংসতা রোধের জন্য এবং দেহ ব্যবসা কিংবা নারী ও শিশু পাচার রোধে এসব মাধ্যম বন্ধের উদ্যোগ নিতেই হবে। সমাজ যেন অপসংস্কৃতির দিকে ধাবিত না হয়, সেই চিন্তা করে হলেও এই অ্যাপটি অপসারণ করতেই হবে। নতুবা সমাজ অন্ধকারে ধাবিত হবে। জাতি কখনো আর আশার আলো দেখতে পারবে না। আবির হাসান সুজন শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App