×

জাতীয়

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে না: বিজিএমইএ সভাপতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ০১:৩৭ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে না: বিজিএমইএ সভাপতি

বুধবার ইআরএফ ডায়ালগে বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক হাসান। ছবি: ভোরের কাগজ

করোনার নতুন ভাইরাস ওমিক্রনের আঘাত যেন পোশাক কারখানায় না পড়ে সে বিষয়ে সতর্ক অবস্থানের কথা জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক হাসান বলেছেন,  র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বাণিজ্যে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

তিনি বলেছেন, করোনায় সময় যে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়েছিল সেটা যেন আরও কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয় এমন নির্দেশনা এরই মধ্যে কারখানা মালিকদের দেওয়া হয়েছে।

অর্থনৈতিক খাতে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ইআরএফ ডায়ালগে বুধবার (৫ জানুয়ারি) বিজিএমইএ সভাপতি এ সব কথা বলেন।

এসময় ফারুক হাসান বলেন, পোশাক খাতে ভালো কর্মপরিবেশ এবং নিরাপদ কারখানায় বাংলাদেশ এখন বিশ্ব সেরা, রানা প্লাজা বা অন্য কোনো দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে বিষয়ে বিজিএমইএ এখন সতর্ক, তাই ক্রেতার অনুমোদন ছাড়া বাহিরের কোনো কারখানায় সাব কন্টাক্টিং এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ শক্ত অবস্থান নিয়েছে।

ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এ ডায়ালগে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বর্তমানে প্রচুর ক্রয়াদেশ থাকলেও কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং জাহাজ ও কন্টেইনার সংকটে সেটার সুফল ঘরে তোলা যাচ্ছে না। এজন্য সরকারের কাছে ব্যবসা সহায়ক কিছু নীতি চেয়ে তিনি বলেন পোশাক খাতই এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিত শক্তি তাই একে টিকিয়ে রাখতে হবে। আগামীতে উন্নয়নশীল দেশে উর্ত্তীর্ন হলে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে পণ্যের বহুমুখী কারণ এবং নতুন বাজার খোঁজা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

পোশাক শিল্পে বড় বড় কোম্পানি বিশেষ করে গ্রিন ফ্যাক্টরিগুলো পুঁজিবাজারে আসবে কিনা জানতে চাইলে ফারুক হাসান বলেন, এ বিষয়ে ইতোমধ্যে পোশাক মালিক ও বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের শীতল সম্পর্ক, র‌্যাব ও র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার প্রতি আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা, আগামী বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আগামী নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়ী হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রত্যাশা যে কারখানায় উৎপাদন ও পণ্যের সরবরাহ ব্যহত হয়, এমন কোনো কর্মসূচি যাতে তারা না নেয়। সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে সেই পরিবেশ থাকতে হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না ব্যবসা করতে গেলে রাজনৈতিক আশীর্বাদ লাগে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স ২০ থেকে ৩০ বছর আগে নেওয়া। তিন দশক আগে বাংলাদেশ যে ধরনের পণ্য তৈরি করতো এখন তার চেয়ে ভিন্ন ও উন্নত পণ্য তৈরি করছে। ফলে পুরানো বন্ড লাইসেন্সে অনেক পণ্যেরই উল্লেখ নেই, কিন্তু ওই লাইসেন্সধারী কারখানার নতুন পণ্যের প্রয়োজন হচ্ছে। তিনি বলেন, লাইসেন্সে উল্লেখ না থাকলেও ব্যবহারিক ঘোষণাপত্রে (ইউডি) তা থাকছে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অনেক সময় পণ্য ছাড় করছে না। এতে ব্যবসা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এ নিয়ে আগামী সপ্তায় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে অভিযোগ করেন যে, ব্যবসায়ীরা নতুন বাজার, পণ্য, ডিজাইনে যাচ্ছেন না। কিন্তু যাওয়ার সুযোগ কোথায়। কাস্টমসের জটিলতার মত অনেক জটিলতার পেছনে ব্যবসায়ীদের দৌড়াতে হয়। ফলে এ ধরনের বিধি বিধান সহজ করে দিলে ব্যবসা সহজ হবে।

করোনার প্রভাব মোকাবেলার প্রণোদনার ঋণ পরিশোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক কারখানা ইতিমধ্যে ঋণের কিস্লি দেওয়া শুরু করেছে। আর কিছু প্রতিষ্ঠান পারছে না। কারণ ওইসব প্রতিষ্ঠানের ক্রেতারা মূল্য পরিশোধ করেনি। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় সময় দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ের রপ্তানি বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমত বেড়েছে আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে। এছাড়া করোনার সময়ে ক্রেতাদের অনেক দাবি দেশের রপ্তানিকারকরা রেখেছেন। বিশেষকরে পরে ডেলিভারি, দেরিতে মূল্য পরিশোধ, ডিসকাউন্ট ইত্যাদি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যেকারণে ক্রেতাদের সঙ্গে রপ্তানিকারকদের একটি সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ফলে এখন ক্রেতারা তাদের বাড়তি চাহিদার পণ্য বাংলাদেশ থেকেই নিচ্ছেন। এছাড়া করোনার কারণে মানুষের ভ্রমণসহ অন্যান্য ব্যয় কমেছে। ফলে পশ্চিমারা তাদের অন্য খাতের অর্থ পোশাক কেনায় ব্যয় করছে। পোশাকের সামগ্রিকভাবে মূল্য সামান্য বাড়লেও কাটিং ও মেকিং চার্জ বাড়েনি।

আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রকৃত পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকের সংখ্যা প্রকাশ করা হবে। সাব কন্ট্যাক্টের বিষয়ে বিজিএমইএ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। আগামীতেও থাকবে বলে তিনি জানান। কারণ হিসেবে বলেন, তাজরীণ ফ্যাশনের মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি তারা চান না। অবশ্যই সাব কন্ট্রাক্ট হবে, তবে তা একই ক্রেতার পণ্য উৎপাদন করে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এবং ক্রেতার সম্মতি সাপেক্ষে। যেসব কারখানা বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর সদস্য হয়নি, তাদের নিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সদস্য হওয়া বাধ্যতামুলক করার নিয়ম দাবি করেন। এছাড়া পোশাক কারখানা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে জেলা পর্যায়ে নেওয়ারও চেষ্টা চলছে। এজন্য দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা হচ্ছে। পোশাকের ন্যুনতম দর বিষয়ে তিনি বলেন, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ যৌথভাবে একটি কমিটি করেছে। এ কাজটি হবে, তবে সময় লাগবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, সেইসব কারখানাকে ব্যাংক ঋণ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App