×

জাতীয়

সংসদ প্রাণবন্ত করার তাগিদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:৪৪ এএম

বিশ্লেষকদের মতে, ‘৭০ ধারা বড় বাধা’, সংশোধনীর দাবি, কার্যকর বিরোধী দলের বিকল্প নেই

গণতান্ত্রিক বিকাশের অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে একটি প্রাণবন্ত সংসদ। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সেই স্পন্দনটুকুই যেন নেই- এমন অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকার পাশাপাশি দুই বছর ধরে করোনা মহামারির কারণেও দায়সারাভাবে চলছে সংসদ। তাছাড়া সংসদীয় প্রসিডিংসের কারণেও কিছুটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। একটি কার্যকর ও প্রাণবন্ত সংসদের জন্য বিরোধী দলকে আরো বেশি সুযোগ দিতে হবে। সাংবিধানিক সংস্কার ও সংসদীয় প্রসিডিংসে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।

জাতীয় সংসদ প্রাণবন্ত নয়- এমন অভিযোগ রয়েছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ মহাজোটের অন্য দলগুলোরও। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবিসহ সংসদ ও গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোও আওয়ামী লীগ বা মহাজোট সরকারের সময়ে দশম ও চলতি একাদশ জাতীয় সংসদ প্রাণবন্ত নয় বলে মন্তব্য করেছে। সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের মনে করেন তারা নামে মাত্র বিরোধী দল, তাদের প্রায় সব কথা বা মতামত উপেক্ষা করা হচ্ছে। গণতন্ত্র চর্চার প্রাণকেন্দ্র জাতীয় সংসদকে কার্যকর ও প্রাণবন্ত করতে হলে বিরোধী দলকে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

বিরোধী দলসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, প্রতিটি সংসদে তাদের অকাট্য যুক্তিকে অগ্রাহ্য করে একাদশ সংসদের প্রতিটি অধিবেশনে ডজন ডজন বিল পাস হয়েছে শুধু সরকারের সুবিধার্থে। গড়ে মাত্র ৩২ মিনিট সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হয় সংসদে। একাদশ সংসদের এ পর্যন্ত ১৫টি অধিবেশনে প্রায় ৮০টির বেশি বিল পাস হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ১৪তম অধিবেশনের ৯ কার্যদিবসে ৯টি বিল পাস হয়। আবার ১৬ কার্যদিবসে ২০টি বিল পাসেরও রেকর্ড রয়েছে একাদশ সংসদে। যদিও বিলগুলোয় বিরোধী দলের ব্যাপক কার্যকর বিরোধিতা বা সংশোধনীকে অগ্রাহ্য করা হয়।

এসব বিষয়ে জি এম কাদের ভোরের কাগজকে বলেন, আমি অনেকবার বলেছি সংসদে পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি বলতে যা বোঝায় তা যদি প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তাহলে সংবিধানের ৭০ ধারা রাখা যাবে না। এটা সাংঘর্ষিক। এটাকে

কিছুটা সংশোধন করতে হবে। এখানে বলা আছে- সরকারি দলের এমপিরা সরকারের কোনো হুইপের বিরোধিতা করতে পারবেন না। এটা থাকলে সংসদীয় গণতন্ত্র থাকবে না। কাদের মনে করেন, সরকারের অ্যাকাউন্টেবিলিটি বলতে যা বোঝায়, তা বজায় রাখতে হলে সরকারি দল ও বিরোধী দল যারাই পার্লামেন্টের সদস্য, তাদের নিজস্ব মতামত দেয়ার সুযোগ দিতে হবে। শুধু সরকারের মন্ত্রিসভায় যারা আছেন, তারা সরকারের মতামত তুলে ধরবেন। এখানে ৭০ ধারা বজায় থাকলে চলবে না। ইংল্যান্ড, আমেরিকায় যেমন রয়েছে- সেখানে সরকারি দলের অনেক সদস্য সরকারের বিভিন্ন নীতি বা আইনের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন। পৃথিবীর অনেক দেশে এ প্রথা চালু আছে। সেখানে সরকারের অ্যাকাউন্টেবিলিটি বজায় থাকে, পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি শক্তিশালী থাকে। এখানেও সংবিধানের ৭০ ধারা অন্তত আংশিক সংস্কার করা দরকার। বিশেষ করে তারা বাজেট ও অর্থ বিলে ভোট দিতে বাধ্য থাকবে, কিন্তু কোনো বিল বা আইন পাসের সময় বিরোধিতা করতে পারবে; প্রয়োজনে বিলটি ফেরত পাঠানোর সুযোগ থাকতে হবে সংসদে। কিন্তু এখানে সে সুযোগ সেই। তাছাড়া বিরোধী দলে আমরা জাতীয় পার্টি থাকলেও আমাদের কোনো মতামত সংসদে গ্রহণ করা হয় না। আমরা নামে মাত্র বিরোধী দলে বসে থাকি।

জি এম কাদের বলেন, এছাড়া সরকার যেন আইনের বিরুদ্ধে না যায়, সেজন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করতে হবে। বিশেষ করে আইন বিভাগকে একেবারেই সরকারের নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপমুক্ত করতে হবে। আমাদের সংবিধানে ১০৯ ও ১২২ ধারা সংশোধনের প্রয়োজন, এটা একেবারে সাংঘর্ষিক। জি এম কাদের বলেন, হাইকোর্টের বিচারকদের বহিষ্কার করার জন্য সংবিধান সংশোধনী করা হয়, যাতে আমরা ব্যাপক বিরোধিতা করি; কিন্তু তা অগ্রাহ্য করে বিলটি পাস করে সরকার। যদিও কোর্ট তা বাতিল করেছে। এটা সে অবস্থায় পড়ে আছে। এখন সরকারের সর্বময় ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে চলে যাচ্ছে। যদি সব কিছু তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে তিনি জবাবদিহিতা ও আইনের ঊর্ধ্বে থাকেন। এটা দ্রুত সংশোধন করা দরকার। হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগের বিষয়ে দ্রুত আইন করারও তাগিদ দেন তিনি।

এছাড়া সংসদে সব বিষয়ে বিরোধী দলকে যথাযথ মর্যাদা দেয়া, তাদের মতামত বা সংশোধনী গ্রহণ করারও দাবি জানান জি এম কাদের। তিনি বলেন, যদিও ৭০ ধারা সংশোধন করলে সরকার মনে করে সংসদে এমপি বেচা-কেনা হবে, সংসদ অস্থিতিশীল হবে; তাহলে আমরা কেন বলছি সংসদ হলো গণতন্ত্রের সুতিকাগার। আমরা ৭০ ধারা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছি বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের উপযুক্ত নয়। তাহলে আমরা সংসদীয় গণতন্ত্র করলাম কেন। এ দুটো একে অন্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কিন্তু এটা সংশোধন না হলে সংসদীয় গণতন্ত্র-জবাবদিহিতা থাকবে না। সুতরাং সাংবিধানিকভাবে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে, সরকারকেও সংসদীয় প্রসিডিংসে পরিবর্তন আনতে হবে, তাহলে সংসদ কিছুটা হলেও প্রাণবন্ত হবে বলে মনে করেন তিনি।

তবে জাতীয় সংসদ সংসদ প্রাণবন্ত নয়, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, করোনাকালীনও একাদশ জাতীয় সংসদ সব সময় কার্যকর এবং প্রাণবন্ত ছিল। সংসদে সব ধরনের কাজকর্ম সঠিক সময়ে সংবিধান ও সংসদীয় প্রসিডিংস মেনে চলছে।

স্পিকার বলেন, চলতি একাদশ সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করছে। এমনকি বিএনপির যে ছয়জন এমপি আছেন, তারাও সংসদে যথাযথ ভূমিকা রাখছেন। তাছাড়া যেসব বিল সংসদে পাস হয়, তার আগে সেগুলো সংসদীয় কমিটিতে কয়েকটি বৈঠকের পর চূড়ান্ত হয়। এটা নিয়ে সংসদে যথেষ্ট সময় ধরে আলোচনা হয়। বিরোধীরা এতে অংশ নেন, তারপর পাস হয়।

এ বিষয়ে বিএনপি সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, সংসদে এখন একদলীয় শাসনতন্ত্র কায়েম হচ্ছে। এখানে কোনো বিরোধী দল নেই। বিরোধী দল না থাকলে সংসদ কার্যকর হবে না। এখন জাপা তো ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ মাত্র। পার্লামেন্ট তো একতরফা। সরকারের বয়ান, সরকারের গুনগান চলছে। জনগণের সমস্যা, রাষ্ট্রের সমস্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। বিরোধী দলের সদস্য (তাকে) ছাড়াই তো বিল পাস হলো সংসদীয় কমিটিতে। সরকারি দল নিজের প্রয়োজনে বিল পাস করে। বিরোধীদের কোনো সংশোধনী, বিরোধিতা গ্রাহ্য হয় না। তাছাড়া সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির বিষয়ে বলতে গেলে প্রায়ই তাদের বাধা দেয়ারও অভিযোগ করেন হারুন।

এ বিষয়ে মহাজোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সংসদ প্রাণবন্ত না থাকার বড় কারণ হচ্ছে সংসদ কাজে রাজনীতিকদের দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমপিদের অধিকাংশই হচ্ছেন ব্যবসায়ী। তারা রাজনীতিতে এসেছেন। সংসদে তারা নিজেদের জন্য কথা বলেন আর দলীয় প্রধানকে তুষ্ট করার জন্য বেশি ভূমিকা রাখেন। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে সংবিধানের ৭০ বিধি। এ বিধি থাকার ফলে সরকারি বা বিরোধীদলীয় সদস্যরা দলের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে পারেন না। এর জন্য সংসদে তাদের নিজেদের মতামত তুলে ধরা সম্ভব হয় না। তৃতীয় কারণ হচ্ছে, রাজনীতিক সংস্কৃতির অবক্ষয় ঘটেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে যারা নির্বাচনে টিকেট পাচ্ছেন, তারা অধিকাংশই ব্যবসায়ী বা সংসদে এসে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে সংসদের প্রতি তাদের যে আগ্রহ থাকা দরকার, তা নেই।

মেনন বলেন, আর সবচেয়ে বড় আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই। জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থাকলেও তারা নিজেরাই বলেন, বিরোধী দল বলে তাদের নাকি চেনাই যায় না। আর বিএনপির যারা আছেন, তারা দলের যেটুকু কথাবার্তা তা-ই বলেন। এছাড়া সংসদে যে বিলগুলো আসে, সেখানে বিরোধী দল বা আমরা কিছু সংশোধনী দেই, যা যথার্থ থাকে। তবে যেহেতু সরকারি দল সংখ্যাগরিষ্ঠ তাই সঙ্গত কারণে ভোটে তা পাস হয়ে যায়। এমন অনেক বিল আছে, যেগুলো সরকার তার প্রয়োজনে পাস করে, সেখানে একদলীয় কর্তৃত্ব কাজ করে। সে কারণে অনেকেই এখন বিল নিয়ে সংশোধনী দিতেও চান না বা বিতর্ক করতে চান না। কেননা প্রায়ই তা গৃহীত হয় না।

মহাজোটের আরেক শরিক দল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু মনে করেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ আংশিক সংশোধনী করা, এছাড়া সংসদ প্রাণবন্ত হবে না। এখানে সরকার পতনের অনাস্থা ভোট ও অর্থ বিল- এ দুটোতে সাংসদদের বাধ্যবাধকতা থাকবে, যার যার দলের হুইপিং মেনে ভোট দিতে হবে। এছাড়া অন্য কোনো ব্যাপারে দলীয় বাধ্যবাধকতা থাকবে না- যেমনটি ইংল্যান্ড বা আমেরিকার পার্লামেন্টে দেখা যায়। তখন এমপিরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন- কোন বিল তিনি মেনে নিতে পারবেন কিনা? বিলের বিরুদ্ধে তাদের কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। যেমন করোনাকালে যারা সংসদের অধিবেশন যোগ দিয়েছেন, তারাও কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। এটা ভালো দিক। তবে বর্তমানে সব দলের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা তেমনভাবে হচ্ছে না, সেটা বোঝা যায় আওয়ামী লীগে বর্তমানে যারা মনোনয়ন পাচ্ছেন, তারা অধিকাংশই ব্যবসায়ী।

ইনু বলেন, যিনি মনোনয়ন দিয়ে তাকে এমপি হতে সহায়তা দিয়েছেন, তার স্তুতি করাটাই যদি তার কাজ হয়ে থাকে, তাহলে তিনি যে জনগণের প্রতিনিধি, জনগণের প্রতি তাদের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, তা তিনি মেনে চলছেন না, তার ব্যত্যয় ঘটাচ্ছেন। জাসদ সভাপতি বলেন, আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকা। এ কারণে সংসদের কার্যকারিতা কিছুটা হলেও ধাক্কা খাচ্ছে।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, জাতীয় সংসদ এখন অনেকটা আনুষ্ঠানিকতার জায়গা হয়ে গেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের যে মানবিক দায়িত্ব ও ভূমিকা, সেগুলো পালনে সাফল্য অর্জন করতে পারছে না সংসদ। বিশেষত জনপ্রতিনিধিত্ব অবস্থান, আইন প্রণয়ন, আইনের সংস্কার, সরকারের জবাবদিহিতা- এসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সংসদ ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র ভূমিকা পালনের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। শুধু বর্তমান সরকারের আমলে নয়; বিএনপি বা অন্য সরকারের আমলের সংসদেরও ক্ষমতাসীনদেরই একচ্ছত্র ভূমিকা ছিল সংসদে। সে কারণে অন্যদের মতামতের কোনো মূল্য দেয়া হতো না। দ্বিতীয়ত, সংসদে বর্তমানে যারা সদস্য হিসেবে আসছেন, তাদের রাজনৈতিক চর্চা কতটুকু, তাদের মধ্যে ৬২ শতাংশের বেশিই ব্যবসায়ী প্রতিনিধি। তাদের মূল পেশা ব্যবসা। স্বাধীনতার সময় এটা ছিল ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ মাত্র। যার ফলে সংসদের যে পেশাগত উৎকর্ষ, সেটা বজায় ছিল। মৌলিক ভূমিকার ঊর্ধ্বে ব্যবসায়িক বিষয়টি প্রাধান্য পায়নি। কিন্তু এখন ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিক সাজা সংসদ সদস্যরা প্রায়ই ভুলে যান, তারা আসলে জনগণের প্রতিনিধি। তাদের কতজনকে জনপ্রতিনিধি বলা যাবে, তা নিয়েও বিতর্ক আছে।

সত্যিকার অর্থে নির্বাচনী যে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের যে এমপি হয়ে সংসদে আসার কথা ছিল, সে বিষয়টি ধ্বংস হয়ে গেছে। তারা মূলত মনোনীত হন; নির্বাচিত হন না। তাদের মধ্যে জবাবদিহি নেই বললেই চলে। তাই তাদের যারা মনোনয়ন দেয়, তাদের প্রশংসা বা স্তুতি করাকেই তারা মুখ্য উদ্দেশ্য বলে মনে করেন। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মূলত তিনটি স্থানে হাত দিতে হবে। প্রথমত, জনপ্রতিনিধি যারা হবেন, তারা যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে জনবিচ্ছিন্ন যে অবস্থানের সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করে এমপিদের জনপ্রতিনিধি হয়ে উঠতে হবে, জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি থাকতে হবে। তৃতীয়ত, সুষ্ঠু নির্বাচন যদি হয়, তাহলে সংসদে ক্ষমতাসীনদের একচ্ছত্র অবস্থান থাকবে না। নির্বাচনে ‘মানি এন্ড মাসল’-এর প্রভাব দূর করতে রাজনীতিক দলগুলোর সংস্কারের দাবি জানান টিআইবির প্রধান নির্বাহী।

অবশ্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান মনে করেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ বা মহাজোট শাসিত সংসদ খুবই প্রাণবন্ত ও কার্যকর। সংবিধানসম্মতভাবে ও সংসদের কার্যপ্রণালিবিধি অনুযায়ী সংসদ অধিবেশন পরিচালিত হয়। এখানে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাদের অনেক বেশি সময়ও দেয়া হয়। তাছাড়া বিএনপির যে ৬ জন এমপি আছেন, তাদেরকেও কথা বলার জন্য বেশি বেশি সুযোগ দেয়া হয়। তারা তাদের মতামত তুলে ধরেন। তাছাড়া দলীয় এমপিরাও সরকারের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে, বিশেষ করে গত কয়েকটি সংসদে আমি নিজে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক খাতগুলোর সমালোচনা করেছি। অনেক এমপির স্বাস্থ্য খাতসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ করেছেন।

তাছাড়া প্রতিটি সংসদীয় কমিটিতে বিরোধীদের সভাপতিসহ সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। সেখানে তারা কোনো বিল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করতে ছাড়েন না। অনেক সময় সরকারের মন্ত্রীরা বিরোধীদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী গ্রহণও করেন। করোনাকালীনও আমরা নিয়মিত সংসদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছি, যা বিশ্বের অনেক দেশে বন্ধ রাখা হয়েছিল। তাই সংসদ প্রাণবন্ত নয়, এটা বলা বিরোধীদের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App