×

জাতীয়

নতুন বছরে সরকারের ১০ চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:৩৯ এএম

** মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন ** গণতন্ত্র-সুশাসন ** রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ** অর্থনীতি গতিশীল রাখা ** ওমিক্রন মোকাবিলা ** মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে উত্তরণ ** রোহিঙ্গা সংকট ** সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ ** কর্মসংস্থান সৃষ্টি ** বাজার নিয়ন্ত্রণ 

পুরনো চ্যালেঞ্জ নিয়েই নতুন বছরের যাত্রা শুরু সরকারের। চলমান মুজিববর্ষ আর স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর সমাপনী উদযাপনের বছরে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিকসহ নানা সংকট সমাধানের চ্যালেঞ্জ সরকারের সামনে। এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ঝুঁকি, চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন, অর্থনীতির বর্তমান অগ্রগতি ধরে রাখা, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষদাঁত ভেঙে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখাসহ ১০টি বিষয়কে প্রধান বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তবে কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত না করে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ক্ষমতাসীনদের। নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী- গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ, টেকসই উন্নয়নে বদ্ধপরিকর সরকার। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ উপহার দেয়ার লক্ষ্যে অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলেও আশাবাদী সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।

চলার পথ যতই অন্ধকারাচ্ছন্ন, বন্ধুর কিংবা কণ্টকাকীর্ণ হোক, তাতে না থেমে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বলেন, যত রক্তক্ষরণ হোক, সব পদদলিত করে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে এগিয়ে যাব- এটিই আমার প্রতিজ্ঞা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা বলছেন, বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়েছে। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ উপহার দেয়াই সরকারের লক্ষ্য।

মেগা প্রকল্পে আশার আলো : তিনটি মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছর। এর মধ্যে আগামী বিজয় দিবসের আগেই পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া, আগামী ডিসেম্বরেই মেট্রোরেল চালু করা এবং কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া। পূর্ণগতিতে বাকি মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করা সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আমাদের নিজেদের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এটা ঠিক, দেশে মেগা প্রকল্পগুলোতে কিছু দুর্নীতি হয়। তবে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথোপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে। বিজ্ঞান, আধুনিকতা, প্রযুক্তির দিকে এগোতে হবে আমাদের।

গণতন্ত্র ও সুশাসন : নতুন বছরের শুরুতে সবার দৃষ্টি থাকবে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার দিকে। ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি। তবে বিএনপি সংলাপে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, গণতন্ত্র নিয়ে ভাবমূর্তি সংকটে থাকা বাংলাদেশের জন্য একটি যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, নতুন বছর ২০২২ সালে গণতন্ত্রকে সচল দেখতে চাই আমরা। কিন্তু গণতন্ত্র যদি দুই চাকার সাইকেল হয়, তাহলে ২০২১ সালে আমরা অর্থাৎ জাতি সেই সাইকেলের একটিমাত্র চাকা দেখেছি। আরেকটি এক চাকা একেবারেই সচল ছিল না। বরং পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ছিল। ২০২২ সালে এই চাকা সচল হবে কিনা আমি জানি না।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা : করোনা ভাইরাসের স্থবিরতা পেরিয়ে সরব হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। রাজনীতির নিত্যদিনের সংস্কৃতি বাকযুদ্ধের জাল বোনা কিংবা পলিটিক্যাল ব্লেইম গেমও ছিল সদ্যবিদায়ী বছরজুড়ে। নতুন বছরেও রাজনৈতিক তর্কযুদ্ধ থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তাদের মনে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। পুরনো চ্যালেঞ্জ। একটি ভালো নির্বাচনের জন্য ভালো প্রস্তুতি নেয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া সরকার ও বিরোধী দল তাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকাও চ্যালেঞ্জ। সমালোচনার সংস্কৃতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো চ্যালেঞ্জ। চলতি বছর রাজনীতিতে কোনো ম্যাজিক আসবে বলে মনে হয় না। রাজনীতির জায়গায় সংলাপ, ইসি গঠন নিয়ে তর্কযুদ্ধ চলবে, তেজ বাড়বে। গুরুতর নেতিবাচক বা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক কিছু হবে বলে মনে হয় না।

অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা : আগামী অর্থবছরে অর্থনীতির আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি ১০০ বিলিয়ন ডলার হতে ১৯ বছর লেগেছে। এখন আমাদের অর্থনীতির আকার ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার হয়েছে। আগামী অর্থবছরে আমাদের অর্থনীতির আকার হবে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। তবে কোভিড মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি বা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া ভর্তুকি ব্যবস্থাপনা, টাকার মান নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। এসব মোকাবিলা করা গেলে ২০২১ সালের শেষের দিকে অর্থনীতি যে গতিশীল ধারায় ফিরে এসেছিল তার টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। বিনিয়োগে চাঞ্চল্য আনা সম্ভব হবে। এসব না করা গেলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ওমিক্রন ঝুঁকি : গত দুই বছর ধরে করোনা ভাইরাসের আক্রমণের মধ্যে নতুন করে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ২৮ হাজার ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন প্রতিদিন নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে ৫০০ জনের বেশি কোভিড রোগী। বাংলাদেশে মোট শনাক্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫৩৯ জন। একটার পর একটা করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন আসছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর সেটা বাংলাদেশেও আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে পারাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। শতভাগ মানুষের জন্য করোনা ভাইরাসের টিকা নিশ্চিত করাও এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, কোভিডের দুটি বিষয়। একটি চলমান ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ও অন্যটি ওমিক্রন। ১৩১টি দেশে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশে টিকা নেয়ার হার অর্জন করা যায়নি। এতে একটি বড় হুমকি রয়ে গেছে। হু করোনা সুনামি বলে অভিহিত করেছে। প্রয়োজন সবাইকে অতিদ্রুত টিকার আওতায় আনা এবং অতি ঝুঁকিপূর্ণদের বুস্টার ডোজের আওতায় আনা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। উপসর্গ হলেই টেস্ট করানো। নতুন করোনা রোগীদের জিনোম সিকোয়েন্স দরকার। তাহলে বোঝা যাবে করোনার ধরন কী। প্রতিটি জনসচেতনতা কাজে তরুণদেরসহ জনগণকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। পাড়া-মহল্লায় ছোট কমিটি করে প্রতিটি মানুষকে করণীয় বিষয়ে উদ্ধুদ্ধ করা দরকার। এসব যথাযথ পালন করলে চলমান বছর ভালোভাবে কাটাতে পারব আমরা।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে উত্তরণ : আইনশৃঙ্খলা বিশেষ বাহিনী র‌্যাব এবং প্রতিষ্ঠানের সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানো, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রকাশ বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে একতরফা হিসেবেই দেখছে বাংলাদেশ। তবে সরকার মনে করছে, আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তন সম্ভব হতে পারে। ইতোমধ্যে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনকে। এ চিঠিতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও সংস্থাটির সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন আব্দুল মোমেন। ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের আশাবাদ ব্যক্ত করার পাশাপাশি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন ও মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ডে র‌্যাবের ভূমিকার কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন আব্দুল মোমেন। ব্লিঙ্কেনকে পাঠানো আব্দুল মোমেনের চিঠিতে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার বিষয়টি রয়েছে। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন সংলাপে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত (নিষেধাজ্ঞা) অপ্রত্যাশিত। র‌্যাব প্রতিষ্ঠান হিসেবে যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য। প্রতিষ্ঠানটির কারণে সন্ত্রাস, মাদক ও মানবপাচার কমেছে। তাই এই সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে তাজ্জব মনে হয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকট : ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা নিয়ে চলছে বাংলাদেশ। এই সংকট থেকে উত্তরণে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহায়তা। তবে শিগশিগরই এই সংকটের সমাধান হবে বলে মনে করছেন না কূটনীতিকরা। সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ জমির ভোরের কাগজকে বলেন, এজন্য চীন-ভারত মিয়ানমারকে কিছু বলে না। ইইউ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা আমাদের পক্ষে বললেও জাপান নিশ্চুপ, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড কিছুই বলছে না। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশ সরকার বারবার ইস্যুটি তুলছে, রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়েছি এর মানে এই নয়, তাদের বোঝা বইব। তবে সুরাহা হচ্ছে না। ইউএনডিপি, আইএমএফ কিছুই বলছে না। রোহিঙ্গারা দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। পুরো এলাকায় মাদকদ্রব্য পাচার থেকে নানা ঘটনা ঘটছে। রাশিয়া-চায়নায় বিশেষ দূত পাঠানো উচিত আমাদের।

সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ : নতুন বছরেও সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, চলতি বছর মরণকামড় দিতে পারে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। সেই সঙ্গে নানা ইস্যুতে ঘোলা জলে মাছ শিকারের অপচেষ্টার পাশাপাশি বড় ধরনের নাশকতায় সক্রিয় মৌলবাদী শক্তিসহ জঙ্গিগোষ্ঠী। এক্ষেত্রে সরকারি দলকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। এ ব্যাপারে ইতিহাসবিদ ও বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে ৭২-৭৫ সাল ছাড়া সব সময় মৌলবাদ বিরাজ করেছে। এরশাদ তো রাষ্ট্রধর্মই করেছিলেন। শেখ হাসিনার আমলে মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশয় দেয়া হচ্ছে না। তবে ধর্মাশ্রিত দল এবং মানুষের সংখ্যা কম নয়। মানসজগত যদি আলোকিত না হয় তাহলে মৌলবাদ নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। বঙ্গবন্ধুর সময় অসাম্প্রদায়িক মানসজগত তৈরি হয়েছিল, যা জিয়ার আমলে ধ্বংস হয়ে যায়।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস ভোরের কাগজকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে আমার ব্যক্তিগত ধারণা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নতুন করে উসকে দেয়া হবে। সম্প্রীতিকে নষ্ট করার একটি আশঙ্কা থাকবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধভাবে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে করে অপশক্তি মাথাচাড়া না দিতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে মানুষের মধ্যে মানবিকবোধ জাগ্রত করা, বিজ্ঞানমনস্কতা, প্রগতির পক্ষে তরুণ সমাজকে যাতে গড়ে তোলা যায় এজন্য রাষ্ট্রকে আরো মনোযোগী হতে হবে। প্রত্যেককে নিজ দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি : পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ আর ২৭ লাখ বেকার। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ হলেও যুব বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। করোনা ভাইরাসের কারণে তা কয়েকগুণে বেড়ে গেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার কাজ করছে মন্তব্য করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন ভোরের কাগজকে বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোভিড। বাংলাদেশের শ্রমশক্তির যেসব দেশে যাতায়াত রয়েছে- মধ্যপ্রাচ্য, সৌদি আরব- এসব জায়গাগুলোর গতি ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ। দক্ষতা উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ। তবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা কাজ করছি।

বাজার নিয়ন্ত্রণ : দেশে ডিজেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। কিন্তু তার আগে থেকেই চাল, সয়াবিন তেল, চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। বর্তমানে মোটা চালের দাম জায়গা ভেদে ৪২ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশে ২০২১ সালের শেষে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশে। চলতি বছরে বাজার নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, চ্যালেঞ্জ ভোক্তাকে ন্যায্য মূল্যে পণ্য ও সেবা পৌঁছে দেয়া। এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণের ওপর নির্ভর করছে ভোক্তা সহনীয় মূল্যে পণ্য সেবা পাবে কিনা। এজন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা, পণ্য সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখতে হবে। বাজারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভোক্তাকে পণ্য সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রয়োজন বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর মনিটর। চাঁদাবাজি যেন না হয়। কেউ যেন নয়ছয় করতে না পারে। উৎপাদন পর্যাপ্ত রাখতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App