×

জাতীয়

বঙ্গভ্যাক্সের চূড়ান্ত অনুমোদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:০৬ এএম

বঙ্গভ্যাক্সের চূড়ান্ত অনুমোদন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দি!

ফাইল ছবি

অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে গত ২৩ নভেম্বর মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের নৈতিক অনুমোদন পায় গে্লাব বায়োটেক প্রস্তুতকৃত করোনা প্রতিরোধী টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’। চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করার পর বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তার সুরাহা হয়নি। ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আবেদনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আছে এবং তা মন্ত্রণালয়ের বিবেচনার বিষয়। এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো বক্তব্যই মিলছে না কারো কাছে। তবে অভিযোগ আছে, দেশে টিকা উৎপাদন ও আমদানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বঙ্গভ্যাক্সের অনুমোদনের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে।

জানা যায়, দেশে টিকা উৎপাদনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইনসেপ্টা, বেক্সিমকোসহ বেশ কয়েকটি দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি টিকা উৎপাদনে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সংযুক্ত করছে। চীন থেকে প্রযুক্তি এনে পুরোপুরি উৎপাদন করে অথবা চীনে উৎপাদিত টিকা বাল্কে এনে বাজারজাত করবে প্রতিষ্ঠানগুলো। এদিকে গ্লোব বায়োটেক এবং বঙ্গভ্যাক্স টিকার সিআরও (পরীক্ষামূলক প্রয়োগ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান) হিসেবে কাজ করা ক্লিনিক্যাল রিচার্স অর্গানাইজেশন লিমিটেড টিকার অনুমোদন পাবার ক্ষেত্রে পুরোপুরি আশাবাদী। খুব শিগগিরই এই অনুমোদন মিলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

গ্লোব বায়োটেকের হয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনাকারী দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাড়ার অপেক্ষায় আছি। বিষয়টি ইতিবাচক দিকে এগুচ্ছে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। ১০/১২ দিন আগে ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আলোচনা বেশ ভালো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই আমরা চূড়ান্ত অনুমোদন পাব। আর অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করতে পারবেন দাবি করে অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের যে পরিকল্পনা, তাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই টিকা প্রয়োগ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, যে কোনো টিকা তৈরির পর কয়েকটি ধাপে নানা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগও কয়েক ধাপে করতে হয়। সর্বশেষ মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তা নির্দিষ্ট রোগ প্রতিরোধে এন্টিবডি তৈরিতে সফলতার মুখ দেখলে তবেই তা টিকা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। টিকার অনুমোদন পেতে এত দেরি হচ্ছে কেন? অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান এই বিষয়টিকে প্রভাবিত করছে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, এমন কোনো কিছু আমার জানা নেই।

গ্লোব বায়োটেকের ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর গত বছরই গ্লোবের কারখানা পরিদর্শন করে টিকা উৎপাদনের লাইসেন্স দিয়েছিল। আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা ইতিবাচক সাড়া পাব।

ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবেচনার বিষয়। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েই আছে। এ বিষয়ে এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।

প্রসঙ্গত; কোভিড-১৯ টিকা আবিস্কারের দৌড়ে গ্লোব বায়োটেকই একমাত্র বাংলাদেশি কোম্পানি। গ্লোবের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ টিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০২০ সালের ২ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে টিকা আবিষ্কারে সফলতার দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ১ অক্টোবর তাদের উদ্ভাবিত টিকা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম বলে নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বায়ো-আর্কাইভ। ৫ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে, প্রাণীদেহে তাদের ওই সম্ভাব্য টিকা ‘কার্যকর ও সম্পূর্ণ নিরাপদ’ প্রমাণিত হয়েছে।

গ্লোব বায়োটেক দাবি করে আসছে, বঙ্গভ্যাক্স অতি সংক্রমণশীল ডেল্টাসহ করোনাভাইরাসের সব ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে শতভাগ কার্যকর। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর গ্লোব বায়োটেককে বঙ্গভ্যাক্স উৎপাদনের অনুমতি দেয়। এরপর গত বছরের ১৭ জানুয়ারি ‘বঙ্গভ্যাক্স’ মানব দেহে ট্রায়ালের নীতিগত অনুমোদনের জন্য বিএমআরসির কাছে আবেদন করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App