×

জাতীয়

দেশে ওমিক্রনের গুচ্ছ সংক্রমণ শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:২৩ এএম

সেপ্টেম্বরেই দেশে ডেল্টার দাপট একটু একটু করে কমতে থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী ছিল তখন দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটাই ছিল নিয়ন্ত্রণে। এরই মধ্যে ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণের খবর পেলেও বাংলাদেশে এই ধরনে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের খবর সরকারিভাবে জানানো হয় গত ১১ ডিসেম্বর। এরপর গত ২৭ ডিসেম্বর একজন এবং ২৮ ডিসেম্বর আরো চারজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্তের তথ্য আসে জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জার (জিআইএসএআইডি) ওয়েবসাইটে। ওই ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার দেশে নতুন করে আরো তিনজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে ওমিক্রন ধরা পড়েছে ১০ জনের। যারা সবাই ঢাকার বাসিন্দা।

এদিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা কম থাকলেও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। সংক্রমণের হার দেড় শতাংশের কম ছিল দীর্ঘদিন। এমনকি এই হার ১ শতাংশের নিচেও নেমেছিল। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে তা ২ শতাংশের উপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই হার ২ দশমিক ৭৪ শতাংশে উঠেছে।

রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত যাদের শরীরে ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে তাদের সবার সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস ছিল। দেশে ওমিক্রনের গুচ্ছ সংক্রমণ হয়েছে বলে মনে করেন চিকিৎসা বিজ্ঞানী শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী এবং আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন।

অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী ভোরের কাগজকে বলেন, জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজটি আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত সুসংঠিতভাবে করা হচ্ছে না। তাই প্রকৃত চিত্রটি পাওয়া যাচ্ছে না। যেহেতু ওমিক্রন অনেক বেশি সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম এবং এর তীব্রতা কম, তাই অনেকে সংক্রমিত হলেও ঠাণ্ডা-জ¦র মনে করে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। আরটিপিসিআর পরীক্ষায় যাদের নমুনা পজেটিভ আসবে তাদের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিং করা গেলে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেশি হতো।

ডা. মুশতাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, এতদিন ওমিক্রনের বিক্ষিপ্ত সংক্রমণ ছিল। এখন গুচ্ছ সংক্রমণ হচ্ছে। সেটি হচ্ছে ঢাকায়। গুচ্ছ সংক্রমণের পরবর্তী ধাপটিই হচ্ছে কমিউনিটি বা সামাজিক সংক্রমণ। আমাদের সতর্ক হতে হবে। এখন পর্যন্ত যাদের দেহে ওমিক্রন ধরা পড়েছে তাদের সবারই বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস আছে। এখনো পর্যন্ত বলা হচ্ছে, ১০ জনের দেহে এই ভাইরাসের ধরন শনাক্ত হয়েছে। এই সংখ্যাটি হয়তো আরো বেশি। কারণ আমরা এখনো আক্রান্ত সবার জিনোম সিকোয়েন্সিং করতে পারছি না। শুরুর দিকে যতজন রোগী শনাক্ত হবে তাদের সবার নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা গেলে এই সংখ্যা আরো বাড়বে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও সরকারি সব ক্ষেত্রেরই সচেতনতা দরকার। এর কোনো একটি দিকে ঢিল দিলেই সংক্রমণ বাড়বে। দেশে প্রবেশপথগুলোতে যাত্রীদের আরো নমুনা পরীক্ষায় বেশি জোর দেয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫২টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৮ হাজার ৫২২টি। ৫১২ জনের নমুনায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে। শনাক্তদের মধ্যে ৪২৯ জনই ঢাকা বিভাগের, যা মোট আক্রান্তের ৮৩ শতাংশের বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সুস্থ হয়েছেন ২৯০ জন। ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার ২২ হাজার ৬৬৭টি নমুনা পরীক্ষায় ৫০৯ জন রোগী শনাক্ত হয়। ৭ জনের মৃত্যু ও শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত বুধবার নমুনা পরীক্ষা হয় ২০ হাজার ৯১৪টি। ভাইরাসের উপস্থিতি মিলে ৪৯৫টিতে। ১ জনের মৃত্যু ও শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। মঙ্গলবার ১৮ হাজার ৯৩৮টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয় ৩৯৭ জন। ১ জনের মৃত্যু হয়। আর নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ১০ শতাংশ। সোমবার ১৭ হাজার ২৭১টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৭৩টিতে সংক্রমণ ধরা পড়ে। ১ জনের মৃত্যু ও রোগী শনাক্তের হার ছিল ২ দশমিক ১৬ শতাংশ।

বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং মৃত্যু ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৯১ হাজার ৪৮৮টি। শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫৩৯ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ১০১ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৭২ জনের। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৯৫৭ জন পুরুষ এবং নারী ১০ হাজার ১১৫ জন। ২৪ ঘণ্টায় যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বয়স বিবেচনায় ১ জনের বয়স বিশোর্ধ্ব। অন্যজন ষাটোর্ধ্ব। ১ জন নারী এবং ১ জন পুরুষ। বিভাগ বিবেচনায় ১ জন ঢাকা বিভাগের আরেকজন খুলনা বিভাগের। ২ জনই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App