রিটার্ন দাখিলে সাড়া কম : রাজস্ব আয় বাড়াতে ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন হোক
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৫০ এএম
সময় বাড়িয়েও রিটার্ন দাখিলে কাক্সিক্ষত সাড়া মেলেনি। এমতাবস্থায় প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ঘাটতি বেড়েই চলেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ হিসাবে চলতি অর্থবছরে ৭০ লাখ টিআইএনধারীর মধ্যে ইতোমধ্যে রিটার্ন জমা দিয়েছেন সাড়ে ২১ লাখ মানুষ। ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট অসুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে ২০২১-২২ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা ৩০ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। এর জন্য বিভিন্ন কারণও রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়ায় রিটার্ন দাখিলে স্থবিরতা দেখা দেয়। এতে রাজস্ব ঘাটতি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব আহরণ হয় মাত্র ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে করা হয় ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। এটিও অর্জন হয়নি। চলতি অর্থবছরের জন্য রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। মহামারিকালে মানুষের আয়-উপার্জন কম। ব্যবসা-বাণিজ্য কমে গেছে। আমদানিও কম। তাহলে ট্যাক্স আসবে কোত্থেকে? দোকানপাটে বিক্রি নেই, ফলে ভ্যাট আদায়ও কম। রিটার্ন দাখিলও কম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার-আয়তন, বাণিজ্যসহ অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত আমলে নিলে নির্দিষ্ট রাজস্ব আহরণ কঠিন কিছু নয়। পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে এটা সম্ভব। সরকারের লক্ষ্য ছিল ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে আয় বাড়বে। কিন্তু ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলেও লক্ষ্যমাত্রার উন্নতি নেই। এতে ভ্যাট আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা আদায় কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে এনবিআরের জন্য। এমনি পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করের আওতা বাড়ানোসহ নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তবে এসব পরিকল্পনা খুবই শ্লথ গতির। বিনিয়োগ বাড়াতে পারলেই কেবল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব। রাজস্ব আয় বাড়ানো এর শর্ত। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে দরকার করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি। সেখানে রাজস্ব প্রদানে সেবা নিশ্চিত, অনুকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আইন-কানুন সময়োপযোগী করা গুরুত্ব পাবে। পরিকল্পনাজনিত সমস্যা তো রয়েছেই, সঙ্গে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক নানা জটিলতা। আছে দুর্নীতির অভিযোগও। এসব বিষয়ে সরকারকে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। বিশেষ করে করদাতাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে রাষ্ট্রীয়ভাবে আরো উৎসাহিত করতে হবে, প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে, জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে, ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও সহজীকরণ করতে হবে, চালিয়ে যেতে হবে আইনি ও কাঠামোগত সংস্কারগুলো।