×

জাতীয়

মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরমতম বছর ২০২১: আসক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ০২:২৬ পিএম

মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরমতম বছর ২০২১: আসক

শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ভোরের কাগজ

মানবাধিকার ইস্যুতে মানুষের সহ্য ক্ষমতা অতিক্রম করেছে। বর্তমান অবস্থাকে বর্বরতার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। সবমিলিয়ে ২০২১ সালকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরমতম বছর বলা যায়। এ পরিস্থিতি থেকে উন্নতি ঘটাতে মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষের সমন্বয়ে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। যারা গত এক যুগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্ত করে দেখবে।

শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান লিটন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গত ৫ বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিবেচনায় এ মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালের বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আসকের পরিচালক নীনা গোস্বামী, নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল, জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির, সহকারী সমন্বয়কারী অনির্বান সাহা প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে আসকের উপস্থাপিত তথ্যানুসারে, ২০২১ সালে সারাদেশে ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৩২১ নারী। এরমধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৭ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৯ জন। যৌন হয়রানী ও উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন ১২৮ নারী। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানীর শিকার হয়েছেন ৭৭ পুরুষ। উত্ত্যক্তকরণে আত্মহত্যা করেছেন ১২ নারী। যৌন হয়রানীর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী ও ৫ পুরুষসহ খুন হয়েছেন মোট ৮ জন। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬৪০ নারী৷ যার মধ্যে নির্যাতনের কারণে মারা গিয়েছেন ৩৭২ জন ও আত্মহত্যা করেছেন ১৪২ জন। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২১০ নারী। এরমধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যার শিকার হন ৭২ নারী ও আত্মহত্যা করেন ১৩ নারী। সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১২ নারী।

এদিকে, শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যু, ধর্ষণের পরে হত্যা, ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে নিহত হয়েছে মোট ৫৯৬ শিশু। বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৪২৬ শিশু। ধর্ষনের শিকার হয়েছে ৭৭৪ শিশু, যৌন হয়রানীর শিকার হয় ১৮৫ শিশু, বলৎকারের শিকার হয়েছে ৭৮ শিশু।

আসক জানায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ, ক্ষমতাসীন দলের সাথে বিরোধী দলের এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীন কোন্দলসহ মোট ৯৩২টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে মোট ১৫৭ জন, আহত হয়েছে ১০ হাজার ৮৩৩ জন। ২০২১ সালে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৬৭২টি সংঘাতের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৭২ জন, আহত হয়েছে ৭ হাজার ২০১ জন। এছাড়া পৌর ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে ৮৩টি ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও ৭৮৮ জন আহত হয়েছে। ১৪৪ ধারা জারির ঘটনা ঘটেছে ২০ বার।

আসকের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ২০৪টি প্রতিমা, পূজামণ্ডপ, মন্দির ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৮৪টি বাড়িঘর ও ৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রদায়িক হামলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩ জন নিহত এবং কমপক্ষে ৩০০ জন আহত হয়েছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

বছরটিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে কমপক্ষে ১১৩৪টি। নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২১০ সাংবাদিক। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ১৬ জনসহ মোট ১৮ বাংলাদেশী সীমান্ত হত্যার শিকার হয়েছে। গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ২৮ জন। অপহরণ, গুম ও নিখোঁজের শিকার হয়েছেন ৭ জন। তাদের একজনের খোঁজ মেলেনি। মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নতির জন্য সংবাদ সম্মেলনে আসকের পক্ষ থেকে ১২ টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App