×

মুক্তচিন্তা

সম্ভাবনাময় নদী পর্যটন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৪৭ এএম

সম্ভাবনাময় নদী পর্যটন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নদীকেন্দ্রিক পর্যটনকে কাজে লাগিয়ে, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি লাভ করেছে। বর্তমান সময়ে নদী পর্যটন সম্ভাবনাময় একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো নদীমাতৃক দেশে সেটি হতে পারে সোনায় সোহাগা। বাংলাদেশের অধিকাংশ শহর নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে রাজধানী ঢাকা, কীর্তনখোলা নদীর তীরে বরিশাল শহর, কর্ণফুলী নদীর তীরে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম অবস্থিত। এছাড়াও প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত বাংলার গ্রামগুলোও নদীর স্পর্শ থেকে মুক্ত নয়, বরং গ্রামের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে নদীর অবদান অপরিসীম। দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দূষণের স্বীকার। দখলদারি কিংবা কলকারখানার বর্জে একসময়ের প্রমত্তা নদীগুলো আজ মরণদশায় জর্জরিত। কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এগিয়ে এলে, নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করা কঠিন হলেও অসম্ভব কিছু নয়। এখনই সময় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালিসহ ঢাকার চারপাশের নদী ও খালগুলোকে দূষণমুক্ত করার। রাজধানী ঢাকার কর্মব্যস্ত মানুষের একটু অবকাশ যাপনের জন্য হলেও এ নদীগুলোকে দখল-দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে পর্যটনমুখী করে গড়ে তোলা দরকার। নদী আর মানুষের সম্পর্ক অনেক গভীর। নদীর প্রতি ভালো লাগা মানুষের মধ্যে সব সময়ই থাকে। তাই তো নদীর তীরে বেড়াতে যাওয়া, তরুণ-তরুণীদের পছন্দের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। নদীকেন্দ্রিক পর্যটন গড়ে উঠলে কিশোর-তরুণদের মোবাইলের স্ক্রিনবন্দি জীবন থেকে বেরিয়ে আনা সহজ হবে। এ শিল্পের বিকাশ ঘটাতে নদী সংরক্ষণের বিকল্প নেই। আবার নদীকেন্দ্রিক পর্যটন গড়ে উঠলে নদী রক্ষাও সহজ হবে। কেননা নদী-তীরবর্তী মানুষ এ খাতে বিনিয়োগ করে লাভবান হবে। ফলে তারা নদীর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে এবং নদী রক্ষায় এগিয়ে আসবে। দেশি কিংবা বিদেশি সব পর্যটকেরই নদীর প্রতি ঝোঁক রয়েছে। নৌকায় চরা, নদীর তীরের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য উপভোগ করা, সূর্যাস্ত দেখা ইত্যাদি বিষয়গুলো একজন পর্যটককে যেমনি আনন্দ দেয়, তেমনি নদীর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয় তাদের। পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা করারও সুযোগ তৈরি হবে পর্যটকদের। একসময়ের মাঝির পাল তোলা নৌকা কিংবা নৌকাবাইচের মতো বাংলাদেশের হারাতে বসা ঐতিহ্য ফেরানো সম্ভব হবে। হাওর-বাঁওড়, খাল, বিল, ঝিল, নদ-নদীতে ভরা এদেশে নদীকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প গড়ে উঠলে তরুণরাও বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে। পর্যটন শিল্প গড়ে তুললেই হবে না, সেটা অবশ্যই পরিকল্পিত পর্যটন হতে হবে। নদী যাতে প্লাস্টিক দূষণের স্বীকার না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। পর্যটকদের অবশ্যই নদীতে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্লাস্টিকের বোতল, চিপস বা বিস্কিটের প্যাকেট ইত্যাদি সঠিক স্থানে না ফেলার কারণে সেগুলো পরিবেশ দূষণের কারণ হচ্ছে। যা কখনো কাম্য নয়। দেশের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্র যাতে দূষণমুক্ত থাকে সে জন্য এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে। অন্যদিকে পর্যটন শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিরাপত্তা। কিন্তু দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ধর্ষণ, যৌন হয়রানির মতো নানা অপরাধমূলক কার্য সংঘটিত হতে দেখা যায়। সম্প্রতি কক্সবাজারে ধর্ষণের ঘটনা তারই নমুনা মাত্র। এছাড়াও এসব স্পটে পর্যটকদের খাবার-দাবার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনতে চড়া মূল্য গুনতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই পর্যটকদের ভোগান্তির নানা চিত্র সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে; যা এ শিল্পের বিকাশে অন্তরায়। বাংলাদেশের মতো দিগন্ত বিস্তৃত শস্য-শ্যামল মাঠ, নদী-নালা, খাল, বিল, পুকুর, হাওর-বাঁওড়ে সমৃদ্ধ- এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ কোথায় আছে? দুঃখের বিষয় হলো, এমন একটি দেশ পেয়েও আমরা নদীকেন্দ্রিক পর্যটন গড়ে তুলতে পারিনি। তবে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে; যা আমাদের আশান্বিত করে। সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠে নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী পর্যটন এগিয়ে যাবে- এটাই প্রত্যাশা।

মারুফ হোসেন : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App