×

জাতীয়

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৩১ এএম

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা

কৃষি। ফাইল ছবি

>গত অর্থবছরে রপ্তানি আয় ১০০ কোটি ডলার > আগামী ৩ বছরে রপ্তানি বাড়বে ৫ থেকে ৬ গুণ

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও বিশ্ববাজারে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে রয়েছে পিছিয়ে। সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় কাক্সিক্ষত মানের রপ্তানি হচ্ছে না কৃষিপণ্যের। তবে সম্প্রতি রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন আশা জাগাচ্ছে কৃষিপণ্য। করোনা মহামারির মধ্যেই গত অর্থবছরে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের মাইলফলক অতিক্রম করেছে এই খাত। বর্তমান সরকার পণ্য সংরক্ষণ ও রপ্তানিতে সুযোগ-সুবিধা দেয়ায় এই খাতের ব্যবসায়ীদের যুগোপযোগী উদ্যোগে কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। গত চার বছরে এই খাতে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী তিন বছরের মধ্যে কৃষিপণ্য রপ্তানির পরিমাণ পাঁচ থেকে ছয় গুণ বাড়বে এবং রপ্তানি আয়ের দিক থেকে তৈরি পোশাক খাতের পরই স্থান হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশসহ বর্তমানে ১৪৪টি দেশে বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়। একই সঙ্গে বাড়ছে রপ্তানি হওয়া পণ্যের তালিকাও। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৫ কোটি ডলারের। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে আয় করেছে ১০৩ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই (জুলাই-আগস্ট) কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে ২১ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ১৭ কোটি ৮২ লাখ ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশের বেশি। সেই হিসাবে বছর শেষে এই খাতের রপ্তানি আয় ১২৫ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে ব্যবসায়ীরা তিন বছরে বাজার ছয় গুণ করার যে সম্ভাবনা দেখছেন, তা মোটেও অবাস্তব নয়। এ জন্য সরকারকে নীতি সহায়তা জোরদার করতে হবে। পুঁজির জোগান নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পথে উন্নততর পরিবহন সুবিধা বাড়াতে হবে। রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের যে তালিকা রয়েছে, তা এখনো খুবই সংকীর্ণ। একে সম্প্রসারণের অনেক সুযোগ রয়েছে এবং তা করতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে অনেক বেশি তৎপর হতে হবে। বিভিন্ন দেশে এখনো শুল্ক-অশুল্ক যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। পণ্যের গুণগত মান বাড়ানোর ওপর আরো বেশি জোর দিতে হবে।

কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে বেশি রপ্তানি হয় রুটি, বিস্কুট ও চানাচুরজাতীয় শুকনা খাবার, ভোজ্যতেল ও সমজাতীয় পণ্য, ফলের রস, বিভিন্ন ধরনের মসলা, পানীয় এবং জ্যাম-জেলির মতো বিভিন্ন সুগার কনফেকশনারি। বিস্কুট, রুটিজাতীয় শুকনা খাবার রপ্তানি করে বিদায়ী অর্থবছরে দেশীয় কোম্পানিগুলো ২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করেছে- যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৪৬ শতাংশ বেশি। এর বাইরে চা, শাকসবজি ও ফলমূলও রপ্তানি হয়েছে।

একসময় চা রপ্তানি করে বেশ ভালোই আয় করত বাংলাদেশ। কিন্তু এখন তা তলানিতে নেমে এসেছে। গত অর্থবছরে মাত্র ৩৫ লাখ ৬০ হাজার ডলারের চা রপ্তানি হয়েছে। তবে এখন শাকসবজি রপ্তানি থেকে বেশ আয় করছে বাংলাদেশ। প্রতিবছরই বাড়ছে এ খাতের রপ্তানি। গত অর্থবছরে ১১ কোটি ৮৭ লাখ ৩০ হাজার ডলারের বিদেশি মুদ্রা এসেছিল শাকসবজি রপ্তানি থেকে। এবার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১২ কোটি ডলার। জুলাই-আগস্ট মাসে এসেছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০২ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যের চেয়ে বেশি ৩৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

কৃষি অর্থনীতিবীদ প্রফেসর গোলাম হাফিজ বলেন, উন্নত দেশগুলো কৃষি খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক থাকে। এ কারণে তারা পণ্যের আন্তর্জাতিক মান সনদের ওপর খুব বেশি গুরুত্বারোপ করে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডকে সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমদানিকারক দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী কৃষিপণ্য উৎপাদনেও স্বাসস্থ্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। অনেক কৃষিপণ্যে দ্রুত পচন ধরে এবং জীবাণুর দ্রুত বংশবৃদ্ধি হয়। দেশব্যাপী সেসব পণ্যের সঠিক সংরক্ষণব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। একইভাবে পচনরোধী পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানিতে যে গতি এসেছে, উত্তরোত্তর তা আরো শক্তিশালী হবে। এতে দেশ যেমন সমৃদ্ধ হবে, দেশের কৃষকরাও লাভবান হবে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। এখন আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি বিদেশে রপ্তানি করার জন্য। বিদেশে রপ্তানির জন্য যেসব মানদণ্ড থাকা দরকার তা পূরণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে মানদণ্ড নির্ণয়ের ল্যাব, উন্নত মানের আধুনিক প্যাকেজিং হাউস করা হচ্ছে। আশা করি, আগামী অর্থবছরে কাক্সিক্ষত মানের কৃষিপণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App