×

অর্থনীতি

আর্থিক অন্তর্ভূক্তির জন্য দেশে নীতি-সহায়তার বড় অভাব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৪৬ পিএম

আর্থিক অন্তর্ভূক্তির জন্য দেশে নীতি-সহায়তার বড় অভাব

পিআরআই-ইআরএফ আয়োজিত “বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভূক্তি: প্রয়োজনীয়তা ও চর্চা” এক শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে বক্তারা। ছবি: ভোরের কাগজ

২০১০ সালে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে আর্থিক সেবায় অন্তর্ভুক্ত করে বিকাশ। বর্তমানে ১০ কোটির বেশি মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে বিকাশের মতো ১৬টি প্রতিষ্ঠান। তবে সেবা সহজতর না হওয়ায় বিপুল সুযোগ থাকার পরও তা এগোচ্ছে না। অন্যদিকে সঠিক নীতি-সহায়তার অভাবে লোকসান করছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো।

সরকারি সহায়তা পেলে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় শতভাগ মানুষকে যুক্ত করে আর্থিক অন্তর্ভূক্তিকরণের আওতায় আনা গেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করেছে বেসসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)।

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এর কার্যালয়ে পিআরআই-ইআরএফ আয়োজিত “বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভূক্তি: প্রয়োজনীয়তা ও চর্চা” এক শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে এসব কথা বলেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, গবেষনা পরিচালক ড. আব্দুর রাজ্জাক ও পরিচালক ড. বজলুল এইচ খন্দকার।

বাংলাদেশের উন্নয়নে আর্থিক অন্তর্ভূক্তিকরণের ভূমিকা শীর্ষক প্রবন্ধে আহসান এইচ মনসুর বলেন, আর্থিক অন্তর্ভূক্তিকরণ কতটা জরুরি তা আমরা করোনায় উপলদ্ধি করেছি। প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ মানুষকে নগদ সহায়তা দিতে চেয়ে তা পুরোপুরি পারেননি আর্থিক অন্তর্ভূক্তি না থাকার কারণে। সরকারি তথ্যভান্ডারের দুর্বলতার কারণে মানুষকে এ সেবার মধ্যে আনা যায়নি।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বিস্তার ঘটলে তাতে নীতি সহায়তার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকাশের মাধ্যমে আমরা এখন টাকা পাঠানো, কেনাকাটা, হাসপাতালের বিল, বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ সরকারি সব পরিসেবার বিল ও বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠাতে পারছি। তবে বিকাশের মতো আর কেউ পারছে না। নগদ কিছুটা করলেও এখনো তাকে লাইসেন্স দেয়া যায়নি। মানুষ বিশ্বাসহীনতায় ভুগছে।

সরকারের নীতি সহায়তা নিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমও শুরু করা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকাশ সিটি ব্যাংকের সহায়তায় ক্ষুদ্র ঋণ চালু করেছে। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্র সংস্থাগুলোর উ্চচহারের ঋণ থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকার ব্যক্তিখাতে বিপুল পরিমাণ অর্থছাড় করে। এসব অর্থ ব্যাংকিং চ্যালেনে দিলে বহু লোক আর্থিক অন্তর্ভূক্তির মধ্যে আসতেন। এতে একদিকে যেমন স্বচ্ছতা আসতো, অন্যদিকে সব মানুষের দোড় গোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছাতো।

“সামাজিক সুরক্ষা ও ব্যক্তি পর্যায়ে সরকারের অর্থ বিতরণের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভূক্তিকরণ” শীর্ষক প্রবন্ধে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকার বাজেটের মাধ্যমে ২৮ হাজার কোটি টাকা সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় করেন। এ অর্থ ব্যাংকিং চ্যালেনে বিতরণ হলে আর্থিক অন্তর্ভূক্তি বাড়বে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা সবখাতেই গর্ব করার মতো সফলতা পেয়েছি। তবে বৈষম্য বেড়েছে। মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে তা কমানো সম্ভব।

ইআইইউ গ্লোবাল মাইক্রোস্কো ফিন্যান্স রিপোর্ট ২০২০ অনুযায়ী, সামগ্রিক আর্থিক অন্তর্ভূক্তিতে ৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ৪৪ তম বলে আরেকটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেন ড. বজলুল এইচ খোন্দকার।

“জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভূক্তি কৌশল: মূল সমস্যা এবং বাস্তবায়ন” শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি বলেন, দারিদ্র্য দূর করার জন্য আর্থিক অন্তর্ভূক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের উচিত ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং সেবার আওতায় দরিদ্র ও নারীদের অন্তর্ভূক্তি করা।

তিনি বলেন, এখন আমাদের যুব সমাজ প্রযুক্তি ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে চায় তাই সরকারের উচিত এই বিষয়ে আর্থিক কৌশল নির্ধারিত করা।

ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথীর বক্তৃতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায় বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা সাধারণত আইনের আলোকে কাজ করেন। নতুন করে ইনোভেশন খুব কম হয়। তবে আর্থিক অন্তর্ভূক্তির জন্য আমরা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সহজতর করছি। এজেন্ট ব্যাংকিং ও ব্যাংকের উপশাখা বাড়াচ্ছি।

তিনি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভূক্তিতে পিছিয়ে থাকার পেছনে আমাদের দেশের মানুষের মেন্টালিটিও একটি কারণ। আমাদের মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ সঞ্চয় করেন। অনেক দেশে এটি ২৮ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লব পদ্ধতির সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। ডাটাবেসের অভাবের কারণে আমরা এটি সঠিকভাবে বিতরণ করতে পারি না।”

অনুষ্ঠানে দেশের ঋণ গ্রহণ, ক্রেডিট কার্ড পরিচালন, সঞ্চয়, বীমাসহ সব খাতেই ব্যয় অনেক বেশি ও হয়রানীর কথা উল্লেখ করেন অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App