×

জাতীয়

চলবে পরিবেশবান্ধব বাস, হবে আন্ডারগ্রাউন্ড বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৩৩ এএম

চলবে পরিবেশবান্ধব বাস, হবে আন্ডারগ্রাউন্ড বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
আধুনিক নাগরিক সেবা নিশ্চিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও তুরস্কের আঙ্কারা সিটি করপোরেশন ‘সিসটার কনসার্ন সিটি’ হিসেবে কাজ করবে। এ জন্য দুই শহরের নগর পিতাদের মধ্যে এ নিয়ে একটি সমঝোতা হয়েছে। এ নিয়ে একমত হয়েছেন দুই সিটির মেয়র। একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবেন বলেও অঙ্গীকার করেছেন তারা। এর মাধ্যমে শহরের বর্জ্য ব্যবস্থায় সফলতা, জলাবদ্ধতা ও মশক নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ ও ঐতিহ্য রক্ষাসহ শহরের জন্য আবশ্যিক নাগরিক সেবাগুলো কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা ঢাকার সঙ্গে শেয়ারিং করবে আঙ্কারা।

সপ্রতি দুই শহরের মেয়রের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম শহরটির বর্জ্যব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয় পরিদর্শন করেন। আঙ্কারা সফরকালে তিনি শহরটির মেয়র মনসুর ইয়াভাস ও ডেপুটি মেয়র সেলিম সিরপান লৌকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানান। তাতে সাড়া দিয়েছেন তারা। জানা গেছে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়েই তারা বাংলাদেশে আসছেন।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, আঙ্কারা শহরটি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। এই আদলে ডিএনসিসি এলাকা সাজানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছি। দুই সিটি করপোরেশন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করব। সিস্টার কনসার্ন হিসেবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে আঙ্কারার মেয়র। আঙ্কারা সিটি করপোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সফলতার কৌশলটি আমরা কাজে লাগাব। পাশাপাশি আমাদের নগর ব্যবস্থাপনাকে কীভাবে আরো সফল করা যায়, সে বিষয়েও কাজ করব। আমরা এই সম্পর্ক অন্যান্য শহরের মাঝেও স্থাপন করতে চাই।

তিনি বলেন, দুই শহরের বন্ধুত্ব দীর্ঘায়িত করতে এরই মধ্যে ঢাকার বনানীর একটি পার্ক তুরস্কের জাতির জনক কামাল আতাতুর্কের নামে নাম করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া বনানীতে একটি সড়কও রয়েছে তার নামে। অন্যদিকে, আঙ্কারাও সে দেশের সবচেয়ে বড় পার্কটি করেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। এ ছাড়া একটি সড়কের মাঝে তার আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। আরোও কিছু দ্বিপক্ষীয় কাজ আমরা করব। এভাবে দুই শহরের মাঝে সম্পর্ক গভীর হবে।

তুরস্কের আদলে হচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ড বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র : তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা ও অন্যতম শহর ইস্তান্বুলের আদলে রাজধানী ঢাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) মাধ্যমে চারটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নগরবাসী এসটিএসের সুড়ঙ্গ মুখের ঢাকনা সরিয়ে ময়লা ফেলতে পারবেন। যা চলে যাবে মাটির নিচে থাকা নির্ধারিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে। সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা ল্যান্ড ফিলে নিয়ে যাবেন।

সূত্র জানায়, ডিএনসিসির চারটি নির্ধারিত স্থান হচ্ছে ৩০০ ফুট এলাকা, মিরপুরে ৬০ ফুট সড়ক, আগারগাঁওয়ের শহীদ মাহবুব সরণি এবং হাতিরঝিলের শুটিং ক্লাব। এরই মধ্যে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে (বিএমটিএফ) এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন আবাসন কোম্পানিগুলোকে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মাটির নিচে স্থাপনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ডিএনসিসির বর্র্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। সব বর্জ্য ল্যান্ডফিলের নেয়া সম্ভব হয় না। কিছু অংশ নগরে থেকে যায়। এ কারণে যত্রতত্র ময়লা পড়ে থাকে। এছাড়া বর্জ্য নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। ল্যান্ডফিল্ডগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একাধিক অবৈধ চক্র। কোনোভাবেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না করপোরেশন। এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে নতুন এই উদ্যোগ নিচ্ছে ডিএনসিসি।

আন্ডারগ্রাউন্ড বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বর্জ্যরে কারণে অনেক স্থানে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অনেক এলাকায় মাটির ওপরে জায়গা সংকটের কারণে ময়লা রাখা যাচ্ছে না। ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে এই উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। তুরস্কের ইস্তান্বুল ও আঙ্কারা শহরেও এমন ব্যবস্থাপনা রয়েছে। এই ব্যাবস্থাপনার কারণে সেখানকার রাস্তাঘাট অত্যন্ত পরিপাটি, যা দেখলে যে কারোরই মন কাড়বে।

তিনি বলেন, আমিও এভাবে নগর সাজাব। এই আন্ডারগ্রাউন্ড বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সফলতা নিয়ে আমি আঙ্কারার মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করব। তারা কীভাবে এই প্রক্রিয়াটি সফল করেছেন, সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেব। যেহেতু আমাদের মাটির ওপরে জায়গা সংকট রয়েছে। তাই আমরা পর্যায়ক্রমে শহরের প্রতিটি এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঘর নির্মাণ করব। যেন আমরা বিশেষ পদ্ধতিতে বর্জ্যগুলো সংগ্রহ করে ডিসপোজাল করতে পারি। ঢাকায় নামবে পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক বাস : তুরস্কের আদলে রাজধানীর ডিএনসিসি এলাকায় মেয়র আতিকুল ইসলাম যে সিস্টার কর্নসান সিটি তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক বাস। আগামী দুই বছরের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় পরিবেশবান্ধব এই বাস নামানো লক্ষ্যে পরিকল্পনা শুরু করা হয়েছে।

রাজধানীতে বর্তমানে ১২০টি কোম্পানির মালিকানাধীন প্রায় সাত হাজার গণপরিবহন চলাচল করছে। এসব গণপরিবহনের মধ্যে মাত্র ৩০৮টি বাস সিএনজিতে চলে। বাকি বাসগুলো চলে ডিজেলের মাধ্যমে। ফলে যানবাহন থেকে প্রতিনিয়ত নির্গত কালো ধোঁয়া পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায়। এছাড়া বিআরটিসির নিবন্ধন অনুযায়ী ১১ লাখের বেশি যানবাহন রয়েছে, যা প্রতিনিয়ত কার্বন নিঃসরণ করে। গত অক্টোবর মাসে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৬) আগত দর্শনার্থীদের জন্য ইলেকট্রিক বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে জানান দেয়া হয়, পরিবেশের জন্য জ্বালানি তেল দ্বারা চালিত যানবাহন ক্ষতিকর। সম্মেলন থেকে ইলেকট্রিক বাসের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়।

সম্মেলনে ইলেকট্রিক বাসের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। পাশাপাশি এ ধরনের যানবাহন চালুর জন্য পরিবেশবাদীরা জোর দাবি তুলেছেন। ওই সম্মেলনে মেয়রদের নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রোগ্রামে অংশ নেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি জানান, সম্মেলনে গিয়ে তিনি এ ধরনের বাস দেখে অভিভূত হয়েছেন। সেখান থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মতে, এতে রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণ অনেকাংশে কমবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত হবে। সেই মোতাবেক তিনি দেশে এসে দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের মেয়র ফজলে নুর তাপসের সঙ্গে ইলেকট্রিক বাস চালুর ব্যাপারে আলাপ করেন। পরে বাংলাদেশে চালু হতে যাওয়া বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা ব্যবস্থায় এ ধরনের ইলেকট্রনিক বাস যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় দুই সিটি করপোরেশন।

মেয়র আতিক মনে করেন, ইলেকট্রিক বাস চালু করলে বায়ুদূষণ রোধের পাশাপাশি জ্বালানি ব্যয় কমবে। আর নাগরিকরা একটি নিরাপদ ও আরামদায়ক যানবাহন পাবে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন শহরের মেয়রদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, ঢাকাকে যানজটমুক্ত শহর হিসেবে গড়তে হবে। আর বায়ুদূষণ রোধে আমি এটা করেই ছাড়ব। এরই মধ্যে অনেক দূর এগিয়েছি। তুরস্কের মেয়রের সঙ্গেও আমি এ বিষয়ে কথা বলব। যেসব শহরে ইলেকট্রিক বাস চালু রয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাব।

তিনি বলেন, আমি জলবায়ু সম্মেলনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই। ঢাকায় এটা কার্যকর করেই ছাড়ব। আমি মনে করি, ঢাকাকে বাঁচাতে হবে। সেই দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিয়েছেন। বিদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সুন্দর পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করব।

জানতে চাইলে মেয়রের সঙ্গে আঙ্কারা সফরে থাকা ডিএনসিসির ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসমাইল মোল্যা বলেন, আসলে প্রযুক্তি কোনো দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। আমরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে চাই। সারা বিশ্বের সব সিটি করপোরেশনের সঙ্গে এমন সম্পর্ক অব্যাহত রাখার চেষ্টা আমাদের থাকবে। এটা দুই দেশের সম্পর্ক সমুুন্নত রাখবে। বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা তুরস্কের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি যুক্ত করতে চাই। অন্যান্য সিটির উত্তম অভিজ্ঞতাগুলোও কাজে লাগাব। ফলে আমাদের সঙ্গে সবার সম্পর্ক বাড়বে। যেখানেই মানবিক বিকাশ, সেখানেই আমরা মেয়রের নেতৃত্বে কাজ করতে চাই। আশা করছি, আমরা নগরবাসীকে একটি পরিচ্ছন্ন কনসার্ন সিটি উপহার দিতে পারব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App