×

জাতীয়

পুলিশ পাহারায় ধর্মচর্চা করতে চান না হিন্দুরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৭:৪০ পিএম

পুলিশ পাহারায় ধর্মচর্চা করতে চান না হিন্দুরা

শনিবার বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তাদের কথা থেকে এসব দাবি উঠেছে। ছবি: ভোরের কাগজ

পুলিশ পাহারায় ধর্মচর্চা করতে চান না হিন্দুরা
  • দুর্গাপূজায় তিনদিনের ছুটিসহ ১০ দফা দাবি
  • নতুন সভাপতি জে এল ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার

হিন্দুদের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিতে ১০ দফা দাবি দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকারি দল আওয়ামী লীগকে দাবিগুলো পূরণ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ধর্ম নিয়ে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দিতেও হিন্দুদের সাবধান করা হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) সংগঠনের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তাদের কথা থেকে এসব দাবি উঠেছে। এসময় তারা পুলিশ পাহারায় ধর্মচর্চা করতে চান না বলেও দাবি জানান।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ১ কোটি ২৫ লাখ হিন্দু ভোটার রয়েছেন। যা মোট ভোটারের ১০ শতাংশ। এই ভোটার যেদিকে যাবে সেদিকেই সরকার গঠন হবে। কাজেই নির্বাচনের আগে হিন্দুদের ন্যায্য হিস্যা মেটাতে হবে। এরআগে শুক্রবার থেকে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দু’দিন ব্যাপী সম্মেলন শুরু হয়েছে। আজ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি হয়েছে। আগামী দু’বছরের জন্য বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হয়েছেন জে এল ভৌমিক এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব।

[caption id="attachment_325675" align="aligncenter" width="700"] সভাপতি জে এল ভৌমিক ও সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার[/caption]

কাউন্সিল অধিবেশনে সংগঠনের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জ্জি সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে সরকারের প্রতি ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। পরে সংগঠনের ৬২ জেলা শাখার প্রতিনিধি এই দাবিকে সমর্থন জানান। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, মক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধান পূর্ণাঙ্গরূপে ফিরিয়ে আনতে হবে। সব প্রকার সাম্প্রদায়িকতার অবসানে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ কর্তৃক ঘোষিত ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতি, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে বাস্তবায়ন করতে হবে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করে প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। জাতিগত সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আইনকানুন বাতিল করতে হবে। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বিলুপ্ত করে হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন করতে হবে। দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও উন্নয়নের দ্রুত আইন প্রণয়ন করতে হবে। হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন না করা পর্যন্ত ট্রাস্ট পরিচালনায় ব্যয় নির্বাহের জন্য রাজস্ব বাজেটে হিন্দুদের সংখ্যানুপাতে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে এবং মঠ, মন্দির নির্মাণ ও উন্নয়নে প্রতিবছর বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে। টোল ও হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করে ধর্মীয় শিক্ষকদের সম্মানজনক বেতনের নিশ্চয়তা দিতে হবে ও শারদীয় দুর্গাপূজায় ৩ দিনের সরকারি ছুটি দিতে হবে।

সিলেট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গোপীকা শ্যাম পুরকায়স্থ এই ১০ দফা দাবিকে সমর্থন করে বলেন, দেশে এখন ১৯৭১ সালের চিন্তার ব্যতয় ঘটছে। একারণে হিন্দুরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডাবলু কুমার ঘোষ বলেন, মন্দির রক্ষার জন্য আসামি হয়েছি। এর চেয়ে দুঃখের কী হতে পারে! কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল কর বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের জীবন ঝূঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ৫শ জনকে অপহরন করেছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্যে তাদেরকে উদ্ধার করতে হয়েছে। কুমিল্লা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নির্মল পাল বলেন, গত দুর্গাপূজায় নির্যাতনের সময় যাদের নিরাপত্তা দেয়ার কথা ছিল সেদিন তারা আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। যারা রক্ষা করবেন তারা ‘কালসাপ’ হয়েছিলেন। তিনি বলেন, যারা নির্যাতন করল তারা তিনমাসের মধ্যে জেল থেকে বেরিয়ে আসে। আর হিন্দু সম্প্রদায়ের যারা সন্দেহজনকভাবে জেলে যায় তারা তিনবছরেও বের হতে পারে না। এই বৈষম্য কেন? খুলনা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণপদ দাস বলেন, ২০১২ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন হয়েছে। কিন্তু গত ১০ বছরেও এর বাস্তবায়ন না হওয়ায় হিন্দুরা কোনো সুবিধাই পাচ্ছে না। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার পরও কেন এর বাস্তবায়ন নেই তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। চট্টগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল পালিত বলেন, উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ। সেই সময়ে সাম্প্রদায়িকতা এদেশের জনগণকে বিভক্ত করবে-আমরা এটা প্রত্যাশা করি না। দেশের পুলিশের যে সক্ষমতা রয়েছে তাতে কারা অপরাধী তা সহজেই পুলিশ বের করতে পারে। তবু আমাদের আশ্রয় চাইতে হয়, বিচার দাবি করতে হয়-দেশের ৫০ বছরে এসে এমন চিত্র অনাকাঙ্খিত। আমরা এর সমাধান চাই। তিনি বলেন, পুলিশ পাহারায় ধর্মচর্চা করতে চাই না। দেশের ৫০ বছরে এসে এমন দাবি আমাদেরকে হতাশ করে। বরগুনা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুখ রঞ্জন শীল বলেন, অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে। সাবধানে ফেসবুক চালাতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App