×

জাতীয়

উৎকণ্ঠা-উৎসাহের মধ্যে চতুর্থ ধাপে ইউপি ভোট রবিবার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:৫৫ পিএম

চলমান সহিংসতার মধ্যেই কাল রবিবার চতুর্থ ধাপে দেশের ৮৩৮ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। দেশের ৫৮টি জেলার ১১৮টি উপজেলার এসব ইউপিতে গতকাল শুক্রবার প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে। আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতীহীন ভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। ৮৩৮টির মধ্যে ৩৮টি ইউপিতে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে।

এ ধাপে ভোটের আগেই একক প্রার্থী হিসেবে ৪৮ চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে চেয়ারম্যান পদে ৭৯০ ইউপিতে ভোট হবে। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১১২ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১৩৫ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে চতুর্থ ধাপে ইউপি ভোট নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন ইসি। শনিবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালটসহ ভোটসামগ্রি পৌঁছে গেছে। প্রস্তুত রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।

আজ শনিবার ইসির যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, আগামীকাল ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে ৫৮ জেলার, ১১৮টি উপজেলায় ৮৩৮টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে কেন্দ্র প্রতি মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, আনসার ও অঙ্গীভূত আনসারের ২২ জনের ফোর্স। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের ১টি করে টিম প্রতি ইউপিতে মোবাইল ফোর্স হিসেবে এবং প্রতি তিনটি ইউপির জন্য ১টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন রয়েছে।

এছাড়াও প্রতি উপজেলায় র‌্যাবের রয়েছে ২টি মোবাইল টিম ও ১টি স্ট্রাইকিং টিম, বিজিবির ২ প্লাটুন সদস্য নিয়োজিত আছে মোবাইল টিম হিসেবে। আর ১ প্লাটুন নিয়োজিত রয়েছে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। আবার উপকূলীয় প্রতি উপজেলার জন্য ২ প্লাটুন কোস্ট গার্ড মোবাইল টিম হিসেবে ও ১ প্লাটুন ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে। তাদের সহায়তায় রয়েছে র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আর্মড ফোর্সসহ ব্যাপক স্টাইিকং ফোর্স। তারা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করছেন। ইতিমধ্যে বেআইনী অস্ত্র উদ্ধার, লাইসেন্স প্রাপ্ত অস্ত্র জমা, চাঁদাবাজ, মাস্তান, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের কাজ শুরু করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে যেমন উৎসাহ উদ্দীপণা বিরাজ করছে তেমনি রয়েছে শঙ্কাও। কেননা বিগত তিন ধাপের ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতায় প্রায় ৬০-৭০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত শতাধিক। এদিকে আগের ধাপগুলোর মতোই চতুর্থ ধাপ ও আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় পঞ্চম ধাপের নির্বাচনকে সামনে রেখে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটে চলেছে।

গত শুক্রবার চতুর্থ ধাপে প্রচারের শেষ দিনেও বিভিন্ন এলাকায় সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া স্থানীয় কয়েকজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি ভেঙে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে, তাদেরকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। তার পরেও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার প্রচারণা নিয়ে গন্ডগোল বেশী হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মেম্বার পদের প্রার্থীরাও অনেক সময় সহিংসতা ঘটাচ্ছে। অনেকের আশঙ্কা, ভোটের দিনও সহিংসতা, অনিয়ম আরো ব্যাপকভাবে হতে পারে।

এদিকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ইসি প্রতিটি ধাপের নির্বাচনকে আইনানুগ এবং সহিংসতামুক্ত করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে চলমান সহিংসতা রোধে মাঠ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার সম্প্রতি এক পত্রে (ডিও) মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের কাছে সহিংসতা বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবার অনুরোধ জানান। যার প্রেক্ষিতে মন্ত্রী পরিষদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ডিসিদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সহিংসতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে হতাহতের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। বিষয়টি ইসির নজরে এসেছে এবং বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে বলে ইসি আশা করে। তা ছাড়া নির্বাচনের আগে অনিয়ম রোধে বিশেষ করে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

চিঠিতে পুলিশ কর্মকর্তাদেরও ইউপি নির্বাচনে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন এবং কোনো রকম হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা যাতে না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, ৮৩৮ ইউনিয়ন পরিষদের তফসিল ঘোষিত হলেও ইতিমধ্যে ৪৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হওয়ায় ৭৯০ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ভোট হচ্ছে। যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিন হাজার ৮১৪ জন প্রার্থী। নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৯ হাজার ৫১৩ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩০ হাজার ১০৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন।

৮৩৮ ইউপিতে মোট ভোটার এক কোটি ৬২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৬০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৮০ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৯ জন। মোট ৯ হাজার ২২৪টি ভোটকেন্দ্রের ৪৯ হাজার ৮৩২টি ভোট কক্ষে এ ধাপে ভোট হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App