ঘটনাস্থল কক্সবাজার : ধর্ষণ সামাজিকভাবেই প্রতিরোধ করতে হবে
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৫৩ এএম
দেশব্যাপী যে হারে ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে, এ কোন বর্বরতার মধ্যে আমরা বসবাস করছি? সর্বশেষ, কক্সবাজারে সপরিবারে বেড়াতে গিয়ে এক নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে তুলে নিয়ে স্বামী ও সন্তানকে জিম্মি করে দুই দফায় তিন যুবক ধর্ষণ করে বলে ওই নারী জানিয়েছেন। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। সাত আসামির মধ্যে তিনজনকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করেছে র্যাব। এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সোচ্চার ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। কেবল যেসব ঘটনা জানাজানি হয়, সেগুলোই প্রকাশিত হচ্ছে। এর বাইরে যে অসংখ্য ঘটনা রয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ৯০ শতাংশের ওপরে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশিত হয় না। লোকলজ্জা, পারিবারিক ও সামাজিক লজ্জার কারণে এসব ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়। বিচারহীনতা ও ভয়ের সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। শুধু ধর্ষণ নয়, একই সঙ্গে ধর্ষণ ও হত্যার বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে এরই মধ্যে। শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না ধর্ষকদের থাবা থেকে। জাতীয়ভাবে বড় প্রতিবাদ না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন জোরালো ভূমিকা দেখা যায় না। সাধারণত দরিদ্র ও দুর্বল ঘরের মেয়েরাই ধর্ষণের শিকার হয়। দীর্ঘমেয়াদে মামলা চালানোর মতো অর্থ ও সময় তাদের পরিবার দিতে পারে না। সামাজিকভাবেও তাদের অবস্থান শক্তিশালী নয়। বিপরীত দিকে অর্থবিত্ত বা সামাজিকভাবে প্রভাবশালীরা বা তাদের মদতপুষ্টরাই ধর্ষণের মতো অপরাধ করে। ফলে এসব ক্ষেত্রে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে, মামলা নিলেও তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে টালবাহানা করে, অপরাধীদের বাঁচিয়ে প্রতিবেদন দেয় কিংবা অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের দেখতে পায় না। এরকম অভিযোগ অজস্র। স্বীকার করতেই হবে যে, ধর্ষকরাও আমাদের সমাজেরই কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য। তাদের বখে যাওয়ার দায় রয়েছে পরিবার-সমাজেরও। তরুণদের সুস্থ-সুন্দর মন ও মূল্যবোধসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না, এটাও স্পষ্ট। মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গেও এরকম অপরাধের হার বৃদ্ধির যোগসূত্র আছে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ যে মাত্রায় বেড়েছে, লাগাম টেনে না ধরা গেলে তা সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নেবে। ধর্ষণ প্রতিরোধে জরুরি অপরাধীর যথার্থ শাস্তি নিশ্চিত করা। দুর্বল ভিকটিমদের পক্ষে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। অপরাধ তদন্তে ও অপরাধীদের বিচারাধীন করায় পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়তে এগিয়ে আসতে হবে ব্যক্তি-সংগঠনকে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারীদের নিরাপত্তা দিতে হবে। আমরা চাই কক্সবাজারের ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীদের দ্রুত খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।