×

আন্তর্জাতিক

ওমিক্রন রোধে মাস্ক পরতে হবে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০২:০৭ পিএম

বিশ্বব্যাপী ওমিক্রন সংক্রমণের জেরে মাস্ক পরার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দ্রুততার সঙ্গে মাস্কের উৎপাদন বৃদ্ধি, মাস্ক কেনা ও মাস্ক বিতরণ করার জন্য সদস্য দেশগুলোর প্রতি সুপারিশ সংস্থাটির। গত বুধবার নিজেদের ওয়েবসাইটে এই সুপারিশ তুলে ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১০৬টি দেশে তা ছড়িয়ে পড়েছে। জিম্বাবুয়ে–ফেরত দুজন নারী ক্রিকেটারের করোনা পরীক্ষায় পাওয়া ভাইরাসটির জিন বিশ্লেষণ করে ১০ ডিসেম্বর ওমিক্রন শনাক্ত করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। অবশ্য ওই দুই নারী ক্রিকেটার ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

করোনার নতুন এই ধরন বাংলাদেশে কী গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে, সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে বা নিচ্ছে, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে আক্রান্তদের চিকিৎসার প্রস্তুতি কী আছে-দেশের মানুষের মনে এ ধরনের প্রশ্ন আছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘আমরা করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। নতুন কারও শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’

নতুন এই ধরন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো উপসংহারে এখনো পৌঁছাতে পারেননি ভাইরাস বিজ্ঞানী ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা। তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ওমিক্রনের অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রয়েছে। ঝুঁকি মূল্যায়ন করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, উদ্বেগের একাধিক কারণ আছে।

প্রথমত, ডেলটা ধরনের চেয়ে ওমিক্রন দ্রুত বেশি মানুষকে আক্রান্ত করেছে। দেড় থেকে তিন দিনের মধ্যে আক্রান্তর সংখ্যা দ্বিগুণ হতে দেখা যাচ্ছে। বেশি মানুষ আক্রান্ত হওয়ার অর্থ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়বে।

এমতাবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে মাস্কের ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাধারণ মানুষের জন্য তারা পৃথক সুপারিশ করেছে। তারা বলেছে, অনুমোদিত মাস্ক ও মেডিকেল মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, যেসব স্থানে এক মিটারের শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা সম্ভব নয়, সেখানে মাস্ক পরতে হবে। মাস্কের ব্যাপারে নীতি নির্ধারকদের করণীয় বিষয়েও সুপারিশে বলা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, মাস্ক পরার ব্যাপারে দুই ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। হাসপাতাল, ব্যাংক, রেস্তোরাঁ, অফিসে অর্থাৎ বদ্ধ জায়গায় থাকা সব মানুষকে মাস্ক পরে থাকার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদিকে মানুষ যেন মাস্ক না পরে ঘরের বাইরে না যায়, সে ব্যাপারে জোর প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।

অবশ্য ওমিক্রন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আলাদা কোনো প্রস্তুতি নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, ‘ওমিক্রন মোকাবিলার জন্য আমাদের পৃথক কোনো প্রস্তুতি নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বাড়তি কোনো প্রস্তুতির কথা বলেনি। আমাদের আগে যে প্রস্তুতি ছিল, সেগুলোকেই প্রয়োজনমাফিক সক্রিয় করে তুলছি।’

মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আড়াই থেকে দুই কোটি মাস্ক মজুত আছে। আমরা খুব শিগগির তা দেশের হাসপাতালগুলোতে পাঠিয়ে দেব। অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে অবহিত করার জন্য প্রচার-প্রচারণা শুরু করব।’

গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক এবং দেশের সব সিভিল সার্জনের সঙ্গে একাধিক সভা করেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা শহরে এবং ঢাকার বাইরের কোভিডের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোকে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

রাজধানীর মহাখালীর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কোভিড হাসপাতালে শয্যা আছে ১ হাজার ৫৪টি। গতকাল রোগী ভর্তি ছিল ২৭ জন। হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘গত কয়েক মাসে রোগী কমেছে। আমাদের আগেই প্রস্তুতি ছিল। হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন আছে। পর্যাপ্ত হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা আছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি ১১৮টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা আছে। এসব হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ২৯ হাজার ৮৩টি, হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা আছে ২ হাজার ১৯টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে ২ হাজার ৩৩৪টি। সারা দেশে করোনা রোগীর জন্য সাধারণ শয্যা আছে ১৩ হাজার ৫২৮টি এবং আইসিইউ শয্যা আছে ১ হাজার ২১৩টি। গতকাল সারা দেশে রোগী ভর্তি ছিল ৭৩৫ জন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App