×

মুক্তচিন্তা

ভাইরাল সংস্কৃতি এবং আমাদের বিকৃত মানসিকতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:১৪ এএম

প্রত্যেক মানুষই নিজের কাজে সফল হতে চায়, নিজের কাজকে ছড়িয়ে দিতে চায় বিশ্বব্যাপী। বর্তমানে প্রযুক্তির অভাবনীয় সহজলভ্যতার ফলে মানুষ যে কাজই করুক না কেন, তা দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কিংবা ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে বিশ্বব্যাপী প্রচার করা যায়। ভালো কাজ ছড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা থাকা স্বাভাবিক বিষয় হলেও আজকাল ফেসবুকসহ লাইকি, টিকটক এবং এমন কিছু অ্যাপসের মাধ্যমে অশ্লীল, রুচিহীন ও নিম্নমানের ফানি ভিডিও করে নিজের পরিচিতি বাড়ানোর প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যুব সমাজের মাঝে। বিশেষ করে লেখাপড়া না করা কিংবা করলেও পরিবারের শাসনের বাইরে থাকা ছেলেমেয়েরাই এসবে লিপ্ত হচ্ছে। আর অতি উৎসাহী ফেসবুক প্রজন্ম সমালোচনা করার জন্য হলেও এসব শেয়ার করে ছড়িয়ে দিচ্ছে সর্বত্র। মূলত এসব ভিডিও করা ব্যক্তিরা চায় ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক তাদের কাজের প্রচার হোক সর্বত্র, অতি উৎসাহী ব্যক্তিরা ভিডিও নির্মাণকারীদের উদ্দেশ্য সফল করে দেয় শেয়ার দিয়ে। ভাইরাল সংস্কৃতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক কাজে ভাইরাল হচ্ছে সেদিকে ভাবার সময় নেই তাদের। দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর কিংবা সুস্থ বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা ইতিবাচক ব্যাপার হলেও আজকাল সস্তা জনপ্রিয়তার নেশায় ছুটছে ইউটিউবাররা। নিজেদের প্রচার কিংবা অর্থ আয়ের নেশায় তারা এতটাই মত্ত যে, কোন কাজটা ঠিক হচ্ছে, আর কোনটা ভুল, তা তাদের ভাবার সময় নেই। ক্রিয়েটিভ কাজে সময় ব্যয়ের চেয়ে ভাইরাল ইস্যুগুলোকে নিয়ে কাজ করে সমাজে ভুল বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি ধর্মও। বাংলাদেশের একজন আলোচিত ও সমালোচিত ধর্মীয় বক্তা গিয়াস উদ্দীন তাহেরীর এক মাহফিলে গাওয়া এক মুর্শেদী গান নিয়ে বিবেকহীন ও অশিক্ষিত ইউটিবাররা তৈরি করেছে ডিজে গান। যেখানে উদ্যম বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে মাহফিলে গাওয়া মুর্শেদী গানের হুবহু অংশ। এই গানটি তাহেরীর নিজস্ব না হলেও যেহেতু তিনি মাহফিলে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে গেয়েছেন, সেহেতু তার কণ্ঠ সংবলিত গানটি হুবহু ডিজে গানে পরিণত করে প্রচার করা চরম বিকৃত মানসিকতার পরিচায়ক। তাহেরীর কণ্ঠ সংবলিত এ গানটি এখন পার্টি সংয়ে পরিণত হয়েছে। অথচ তাহেরী কোনো রকস্টার নন, বাদ্যযন্ত্র দিয়ে গান গাওয়া কোনো শিল্পী নন। তিনি একজন ধর্মীয় বক্তা। পাশাপাশি তিনি একজন ইসলামী সংগীতশিল্পী। একজন ধর্মীয় বক্তার গাওয়া গানকে ডিজে গানে পরিণত করে ভাইরাল করা হয়েছে। বিনোদনপ্রিয় শ্রোতারাও মজা হিসেবে এই গান বাজাচ্ছেন, যার মাধ্যমে ভুল বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশব্যাপী। শিশু ও তরুণদের মাঝে ধর্মীয় সংগীত ও বক্তাদের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করছে নিঃসন্দেহে। এছাড়াও বহু বক্তার ওয়াজ নিয়ে বিকৃত ভিডিও তৈরি করে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, যা কাম্য নয়। কেননা বক্তারা ওয়াজের ময়দানে ভুল করলেও সেই ভুলকে কেন্দ্র করে ফানি ভিডিও তৈরি করে ছড়িয়ে দেয়া আরো বড় ভুল। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়, বহু মেধাবী এবং কর্মঠ ব্যক্তি তাদের ভালো কাজগুলোকে ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা যে কোনো যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। কিন্তু এসব ছড়িয়ে পড়ে না, ভাইরাল হয় না, আড়ালেই থেকে যায়। অতি উৎসাহী ব্যক্তিরা এসব ছড়িয়ে দিতে মজা পায় না, যদিও বহু ভালো কাজই প্রচার হয় ফেসবুকে, তবে অপ্রয়োজনীয় কাজের তুলনায় খুবই কম। এটা সত্যি যে, দেশব্যাপী বহু অপরাধজনিত কর্মকাণ্ডগুলো যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার এবং ভাইরাল হওয়ার কারণে ঘটনাগুলো প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পেরেছে। এটি বেশ ইতিবাচক হলেও অন্যান্য নেতিবাচক কর্মকাণ্ড দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জুবায়ের আহমেদ : শিক্ষার্থী, বিজেম, কাঁটাবন, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App