×

জাতীয়

ইমো আইডি নিয়ে প্রতারক চক্রের ৫ জন গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:০১ পিএম

ইমো আইডি নিয়ে প্রতারক চক্রের ৫ জন গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকচক্রের ৫ সদস্য। ছবি : ভোরের কাগজ

→  প্রবাসীরাই টার্গেট

→  প্রতারকরা বেশিরভাগই নাটোর ও রাজশাহী এলাকার

→  কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে কাজ করছে ১৭৫ জন

→  এ কাজকে অপরাধ বলেই মনে করে না তারা

→  আর্থিক লেনদেনের জন্য বয়ষ্কদের বেছে নেয়া হচ্ছে

অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দিয়ে ইমো আইডি হ্যাক করে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণার ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মো. হুসাইন আলী (১৯), মো. সুমন আলী (২৩), মো. তরিকুল ইসলাম (২১), মো. শান্ত আলী (১৯) ও মো. সাদ্দাম হোসেন (১৯)। ঢাকা, সাভার ও নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

সিআইডির সাইবার ক্রাইম এন্ড কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টার সূত্র জানায়, নাটোরের বিলমারিয়া পুটিমারি, রাজশাহী বাঘা ও চারঘাট এলাকাগুলোতে সক্রিয় রয়েছে এ ধরণের প্রতারক চক্রের সদস্যরা। তাদের অধিকাংশেরই বয়স ১৬ থেকে ২৮ বছর। কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ১৫০ থেকে ১৭৫ জন মিলে এই প্রতারণার কাজ করে আসছে।

প্রবাসীরাই প্রতারক চক্রটির প্রধান টার্গেট। মানুষকে বোকা বানিয়ে অর্থ আদায়ের ধারণা থেকে গ্রেপ্তারকৃতরা এমন প্রতারণাকে অপরাধ বলেই মনে করে না। আর আর্থিক লেনদেনের জন্য তারা বেছে নেয় প্রবীণ ব্যক্তিদের। এক্ষেত্রে যাদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট আছে, তাদের বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে মোবাইল সিমগুলো সংগ্রহ করে তারা।

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান অভিযুক্ত পাঁচ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা এই অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের টার্গেট করে ইমোতে যোগাযোগ করে তারা। যোগাযোগের সময় প্রতারকরা তাদের কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করে মেয়েলি কণ্ঠে ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলে। একসময় আলাপচারিতায় কিছুটা সখ্যতা গড়ে উঠলে ঘণ্টায় ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকার বিনিময়ে অনৈতিক ভিডিও চ্যাটের প্রস্তাব দেয় তারা। যারা সাড়া দেয় তাদের ইমো ম্যাসেঞ্জারে আসতে অনুরোধ করা হয়। তখন তাদের বলা হয় চ্যাটের জন্য একটি ওটিপি পাঠাতে মোবাইল নম্বর লাগবে। আর নম্বর পেয়ে পাঠানো ওটিপি ক্লিক করে খুললেই অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা।

এরপর মেসেঞ্জার লিস্ট পরীক্ষা করে দেখে চক্রটি। টাকা-পয়সা লেনদেনসহ একান্ত ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও থাকলে সেগুলো টার্গেট করে টাকা চাওয়াসহ ব্লাকমেইল করে থাকে তারা।

অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, ইমো অ্যাপটি অপরেটিং সহজ ও একাধিক মোবাইলে ব্যবহার করার সুবিধার কারণে প্রযুক্তির স্বল্পজ্ঞান থাকা ব্যক্তিরা পছন্দ করেন। ঠিক একই কারণে প্রবাসীরাও দেশের বাড়িতে যোগাযোগের জন্য আ্যাপটি ব্যবহার করে থাকেন। তাই এই অ্যাপাকে টার্গেট হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি।

তিনি আরও বলেন, ইমোতে প্রবাসীদের কাছে টানার জন্য মেয়েদের আকর্ষণীয় ছবি প্রোফাইল হিসেবে ব্যবহার করে তারা। আর ভিডিও চ্যাটের সময় অন্য নারীর ভিডিও দেখালেও আড়াল থেকে মেয়ে কণ্ঠের আওয়াজটি তাদেরই থাকে।

সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ফাঁদে পড়লেও বেশিরভাগ প্রবাসীই অভিযোগ করেন না। বাইরে থেকে সেটি সম্ভবও হয় না। তাই প্রতারকচক্রের টার্গেট হয়ে ওঠে প্রবাসীরাই। তবে একটি কথা বলবো যারা সিম দিচ্ছেন তারা নিজেরাও জানেন না যে তারাও অপরাধী হচ্ছেন। কারণ নিজের সিম অন্যজনকে লেনদেনের জন্য ব্যবহার করতে দিলেও এর মধ্য দিয়ে কোন অপরাধ ঘটলে এর দায় তার ওপরেও বর্তায়। তাই বলবো- সচেতনতার বিকল্প নেই। এ ধরনের চক্রের আরও সদস্যকে আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App