×

সম্পাদকীয়

মুশতারী শফীর বিদায়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:৩৮ এএম

প্রগতিশীল চেতনার বাতিঘর শহীদজায়া মুশতারী শফী চলে গেলেন। গত সোমবার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামসহ দেশের প্রগতিশীল রাজনীতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। এ মহীয়সী নারীর মৃত্যুতে আমরাও শোকাহত এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। মুশতারী শফী ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ফরিদপুর জেলায়। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার স্বামী মোহাম্মদ শফী এবং ছোট ভাই এহসানকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। তার পরিবার একাত্তরে চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় তিনি ওই বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসেবে কাজ করেন। তিনি একাধারে মুক্তিযুদ্ধের শব্দসৈনিক, সমাজ সংগঠক, নারী নেত্রী, সাহিত্যিক ও উদ্যোক্তা। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে তিনি আমাদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন শহীদজায়া হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান ঈর্ষণীয়। বিশেষ করে নারী সমাজকে বিনির্মাণে তিনি আত্মনিয়োগ করেছেন। একটি শোষণমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে সংগ্রাম করে গেছেন তিনি মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিটি সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। নারী অধিকার মুক্তি বলি, শ্রমিকের অধিকারের কথা বলি কিংবা যে কোনো অধিকার আদায়ের কথা বলি সর্বক্ষেত্রেই একটি নাম উজ্জ্বলতর, নামটি বেগম মুশতারী শফীর। মুশতারী শফী একজন সাহিত্যিক। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন, মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী, চিঠি জাহানারা ইমাম, মুক্তিযুদ্ধের গল্প, নারী বল-আমরাও মানুষ, একুশের গল্প, বিপর্যস্ত জীবন, আমি সুদূরের পিয়াসী, আকাশ বোধন উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি লিখেছেন অনেক প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী, কিশোর গল্পগ্রন্থ এবং স্মৃতিচারণমূলক লেখা। স্বাধীনতাযুদ্ধে অনন্য ভূমিকার জন্য ২০১৬ সালে লাভ করেন বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ। ২০২০ সালে অর্জন করেন ‘রোকেয়া পদক।’ বাংলাদেশে নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ মুশতারী শফী তার কর্মের মধ্য দিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App