×

জাতীয়

পদে পদে বৈষম্য ও বঞ্চনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:১৫ এএম

পদে পদে বৈষম্য ও বঞ্চনা

সরকারের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি সংস্থা অপ্রতিবন্ধী নারীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করলেও সেই কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী নারীরা অবহেলিত

  • তথ্য উপাত্ত ও আইন-নীতিমালায় বৈষম্যের চিত্র
  • কারো কাছে নেই জনসংখ্যার সঠিক তথ্যও

বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের সব নাগরিকের অধিকার নিশ্চিতের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন পাস করে। এ আইনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সাম্য, ন্যায্যতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ‘সুবর্ণ নাগরিক’ হিসেবে ২০১২ সালে ঘোষণা করে সরকার। উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজের বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা। সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও সুবর্ণ নাগরিকদের ভাগ্যের উন্নয়ন খুব একটা হয়নি।

আইন-নীতিমালায় আছে অধিকারের কথা : ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১ প্রণয়ন করে সরকার। পরবর্তীতে এ আইনটি বাতিল করে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩’ পাস করে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের সুরক্ষা দানের অনন্য দলিল। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫, ১৭, ২০ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে অন্য নাগরিকদের সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমসুযোগ ও অধিকার দেয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের অধিকার বিষয়ে জাতিসংঘ সনদ (সিআরপিডি) এবং ঐচ্ছিক প্রটোকলে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। সিআরপিডি রাষ্ট্রের প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরসহ সব নাগরিকের মানবাধিকারের পূর্ণ ও সমান অধিকার ভোগ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে। ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) সামনে রেখে বাংলাদেশে অনগ্রসর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়ন, অংশগ্রহণ ও সুরক্ষাকে এগিয়ে নিতে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য উপাত্ত ও আইন-নীতিমালায় বৈষম্যের চিত্র: বিভিন্ন পরিসংখ্যা ও গবেষণার তথ্য বলছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, সামাজিক সহযোগিতা ও সামাজিক সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার থেকে প্রায় সময়ই বঞ্চিত হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে যারা নারী; তারা একই সঙ্গে ‘নারী’ ও ‘প্রতিবন্ধী’ হওয়ায় বিভিন্ন পরিসরে দ্বিগুণ বৈষম্য, দারিদ্র্য এবং যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তথ্য বলছে, দেশের ৯৯ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারী দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। প্রতিবন্ধী নারীদের ৯৬ শতাংশই মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। আর ১ শতাংশেরও কম প্রতিবন্ধী মেয়েশিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী শিশুদের উপস্থিতির হার মাত্র ৪০ দশমিক ২৯ শতাংশ। ৩ ভাগের ১ ভাগ প্রতিবন্ধী দরিদ্রতার কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে পারে না। প্রতিবন্ধীদের মধ্যে বিয়ের হার অপ্রতিবন্ধীদের তুলনায় অনেক কম, আবার বিয়ে-বিচ্ছেদের হার বেশি। আর পুরুষ প্রতিবন্ধীর তুলনায় নারী প্রতিবন্ধীর ক্ষেত্রে এসব মৌলিক চাহিদা প্রাপ্তিতে অসমতার হার বেশি। ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি থাকায় দেশের অধিকাংশ প্রতিবন্ধী মৌলিক মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া রাষ্ট্রীয় বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ অর্থ বাস্তবসম্মত ও যথেষ্ট নয় এবং যে বরাদ্দ দেয়া হয় তাও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে যথাযথভাবে তাদের কাছে পৌঁছায় না। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, পরিবহন, সার্বিক অবকাঠামো, সম্পদের ওপর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতির কারণে উন্নয়নে প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানায় সংস্থাটি। এদিকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ আইনটি কোনো কোনো আইনের ওপর প্রাধান্য পাবে তা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। এর ফলে ‘লুনেসি’ আইনে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিরা উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পদ পাবে না উল্লেখ থাকায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উত্তরাধিকার সম্পদ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু আইনে প্রতিবন্ধীদের সম্পত্তিতে অধিকার নেই। প্রতিবন্ধী মানুষকে প্রতিভা বিকাশ ও কর্মসংস্থানে সম্পৃক্ত না করার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জাতীয়ভাবে মোট দেশজ উৎপাদনের হারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নে সম্পৃক্ত না করার কারণে মোট দেশজ উৎপাদনের ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ সমপরিমাণ ক্ষতি হয়। বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে চাকরি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের কাজের যথেষ্ট পরিসর থাকলেও তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ন্যাশনাল ফোরাম অব অর্গানাইজেশন্স ওয়ার্কিং উইথ ডিসঅ্যাবিলিটিস (এনএফওডব্লিউডি) এক গবেষণায় বলা হয়, মোট প্রতিবন্ধীর মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি খাতে চাকরি করছে আর ১৭ শতাংশ বিভিন্ন বেসরকারি খাতে।

জনসংখ্যা অনুপাতে বরাদ্দের স্বল্পতা : প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রে ভিন্নতা রয়েছে। এক কথায় প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা কত তার সঠিক হিসাব নেই কারো কাছে। বাংলাদেশে সমাজসেবা অধিদপ্তরের চলমান ‘প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপের (৮ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা মাত্র ২৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৩ জন। আর বেসরকারি সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা দেড় কোটির বেশি। তাদের মধ্যে অর্ধেকসংখ্যক নারী। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫, ১৭, ২০ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে অন্যান্য নাগরিকদের সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমসুযোগ ও অধিকার দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদ দায়দায়িত্বের অংশ হিসেবে ২০০৫-০৬ অর্থবছর হতে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচি চালু করা হয়। বর্তমানে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০ লক্ষ ৮ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৭৫০ টাকা হিসেবে ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মোট বরাদ্দের মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ প্রতিবন্ধিতা খাতে (ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক) দেয়া হয়েছে, যা মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ।

সরকারের যত সুযোগ-সুবিধা : ভাতা দেয়ার পাশাপাশি জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ও আওতাধীন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বিনামূল্যে সহায়ক উপকরণ বিতরণ করা হয়। যা চলমান রয়েছে। প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ২০০৯-২০১০ থেকে বিনামূল্যে থেরাপি (আর্লি ইনন্টারভেনশন) সেবা দিয়ে আসছে সরকার। ৬৪টি জেলায় ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে অটিজমসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে থেরাপিউটিক, কাউন্সেলিং ও রেফারেল সেবা এবং সহায়ক উপকরণ দেয়া হয়। এ পর্যন্ত কৃত্রিম অঙ্গ, হুইল চেয়ার, ট্রাইসাইকেল, ক্রাচ, স্ট্যান্ডিং ফ্র্রেম, ওয়াকিং ফ্রেম, সাদাছড়ি, এলবো ক্র্যাচ, আয়বর্ধক উপকরণ হিসেবে সেলাই মেশিনসহ সহায়ক উপকরণ প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। ২০০৯-১০ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত ৮ হাজার ৯৪১টি সহায়ক উপকরণ বিতরণ করা হয়। পরবর্তীতে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৪ হাজার ১১৭টি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ হাজার ৩৫০টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১২ হাজার ১৩৫টি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২ হাজার ১৫১টি সহায়ক উপকরণ বিতরণ করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮ হাজার ৮০০টি সহায়ক উপকরণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত ২ দশকে সার্বিকভাবে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি জাতীয় উন্নয়ন কার্যক্রম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে বিবেচিত হচ্ছে এ কথা সত্যি। কিন্তু তাদের পরিসংখ্যানগত অবস্থান বিবেচনায় কাক্সিক্ষত ফলাফল এখনো অর্জিত হয়নি। তাদের অধিকাংশই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশ নেয়ার সুযোগ পায় না। সমাজে পিছিয়ে থাকা এই মানুষগুলোর জীবন-জীবিকার কথা আলাদা করে কেউ বলে না। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় মাসে ৭৫০ টাকা করে প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেয়া হচ্ছে, যা জীবনধারণের চাহিদা পূরণে এবং প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা বিবেচনায় অনেক কম। উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে প্রতিবন্ধীরা এখনো সরকার বা বিরোধী কোনো দলের কাছে ভোট রাজনীতির অঙ্গ হয়ে উঠতে পারেনি। ভোট ব্যাংক হিসেবে আকর্ষক নন বলেই হয়তো তারা অবহেলিত। অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীবান্ধব পরিবেশ ও বিশেষায়িত সেবা দেয়ার ব্যবস্থা নেই।

এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইন-নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষেত্রবিশেষে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া যে অন্তর্ভুক্তিমূলক, তা বলা যাবে না। জাতীয় বাজেটে এ খাতের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বরাদ্দ নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে কিছু ব্যয় করা হয়, কিন্তু তা পর্যাপ্ত ও সমন্বিত নয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওপর মূল দায়িত্ব, কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা দেখছি, মুদ্রাস্ফীতি ও প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা বিচারে কিছু বরাদ্দ সাম্প্রতিককালে বেড়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রয়োজনের তুলনায় তা পর্যাপ্ত ও অন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App