×

জাতীয়

মুশতারী শফীকে শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৩:১৭ পিএম

মুশতারী শফীকে শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদজায়া বেগম মুশতারি শফীকে সর্বশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন হাজারো মানুষ। ছবি : সংগৃহীত

বরেণ্য সাহিত্যিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, নারীনেত্রী ও শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফীকে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে সর্বশেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে তাকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। তার মরদেহে একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

শ্রদ্ধা জানানোর পর বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক কর্মী নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, ষাটের দশকে মুশতারী শফী চট্টগ্রামকে একত্রিত করেছিলেন। তিনি যে সংগঠন তৈরি করেছেন, তা ৬৮, ৬৯ সাল হয়ে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অপরিসীম অবদান রেখেছে। তাঁর সাহস ছিল অনুকরণীয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা মুশতারী শফীকে জেনেছি, চিনেছি এবং একসঙ্গে রাজপথে থাকার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। আমরা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সময়ের মানুষ।

শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। শহীদ মিনারে মুশতারী শফীর প্রতি একে একে শ্রদ্ধা জানায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, বটতলা, বাংলাদেশ তাঁতী লীগ, সুবচন নাট্য সংসদ, নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগ, আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।

সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহীদজায়া মুশতারী শফী মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি দুই ছেলে, চার মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মুশতারী শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গভীর শোক প্রকাশ করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল নবী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অশোক সাহা।

বেগম মুশতারী শফী ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে এদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে সম্মুখ সারিতে ছিলেন। ১৯৬০ এর দশকে তিনি চট্টগ্রামে ‘বান্ধবী সংঘ’ নামের একটি নারী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তার সম্পাদনায় বান্ধবী নামের একটি পত্রিকাও ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় তার চট্টগ্রামের বাসভবনেই হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা। বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপসহ প্রগতিশীল নেতা এবং শিল্প সংস্কৃতির ব্যক্তিত্বগণের কর্মকাণ্ড ছিল এই বাসাকে ঘিরে।

মুক্তিযুদ্ধে তার পরিবার সাহসী ভূমিকা পালন করেছিল। তার স্বামী ডা. শফী মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র-গোলাবারুদ নিজের হেফাজতে রেখেছিলেন। এ কারণে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সদস্যেরা তাকে এবং মুশতারী শফীর ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। স্বামী ও ভাইকে হারিয়েও মনোবল অক্ষুণ্ণ রেখে চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যান মুশতারী শফী। স্বাধীন দেশে প্রগতিশীল সংস্কৃতির সংগ্রাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন, নারীমুক্তির আন্দোলন, নাগরিক আন্দোলনসহ সব ক্ষেত্রে রাজপথে সোচ্চার থেকেছেন।

মুশতারী শফী একজন সাহিত্যিক। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’, ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী’ এবং ‘চিঠি, জাহানারা ইমামকে’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি লিখেছেন অনেক প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী, কিশোর গল্প গ্রন্থ এবং স্মৃতিচারণমূলক লেখা। স্বাধীনতাযুদ্ধে অনন্য ভূমিকার জন্য ২০১৬ সালে লাভ করেন বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ। ২০২০ সালে অর্জন করেন ‘রোকেয়া পদক।’ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তিনি ছিলেন একজন প্রথম সারির সংগঠক ও নেত্রী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে গঠিত গণজাগরণ মঞ্চেও তিনি সক্রিয় ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App