মওলানা ভাসানি জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হকির প্রথম সেমিফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়া ৬-৫ গোলে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করে। বেশির ভাগ হকিপ্রেমীদের প্রত্যাশা ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হকির ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান ফাইনালে লড়বে। বিশ্ব হকি র‌্যাঙ্কিংয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ১৬, পাকিস্তান ১৮। মাঠের লড়াইয়েও আজ র‌্যাঙ্কিংয়ের সেই ছাপ পরিলক্ষিত হয়েছে। পিছিয়ে পড়া পাকিস্তান শেষ কোয়ার্টারে স্কোরলাইন যখন ৫-৫ করে, ম্যাচের আর কয়েক মিনিট বাকি। শেষ কয়েক মিনিটে স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়ে কোরিয়া জয়সূচক গোল করে ফাইনাল নিশ্চিত করে। শেষ গোলটিসহ চারটি গোল করে কোরিয়ার জয়ের নায়ক জং হুয়ান জাং। ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চতুর্থ আসরে চতুর্থ স্থান লাভ করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। মঙ্গলবারের আগে এটি ছিল দেশটির সেরা সাফল্য।

অপরদিকে আজ এই হারের ফলে ২০১১ সালে শুরু হওয়া এশিয়ার এই অভিজাত টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হল তিনবারের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। দিনের অপর সেমিফাইনালে ভারত-জাপানের মুখোমুখি হবে। এ ম্যাচে যারা জিতবে তারা ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার মোকাবেলা করবে। ভারত-জাপান ম্যাচে যারা হারবে তারা বুধবার পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলবে। আজ গোল আর পাল্টা গোলে দারুণভাবে জমে ওঠে প্রথম সেমিফাইনাল। দুই দলই খেলেছে দ্রুতগতির আক্রমণাত্মক হকি। ফলে পেন্ডুলামের মতো দুলেছে ম্যাচের ভাগ্য। অদম্য কোরিয়া গোলের সুযোগ নষ্ট করেনি।

ম্যাচের প্রথম কোয়ার্টারে তৃতীয় মিনিটে ওমর ভুট্টোর ফিল্ড গোলে দারুণ সূচনা পায় পাকিস্তান। ১১ মিনিটে জ্যাং জং ইয়োন পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে গোল করে কোরিয়াকে সমতায় ফিরিয়ে আনেন। পরের মিনিটে আরেক পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিক দিয়ে সিনিয়র দলে ক্যারিয়ার শুরু করা এ ডিফেন্ডার।

দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ২২ মিনিটে জুনাইদ মঞ্জুর ফিল্ড গোল করে পাকিস্তানকে সমতায় ফেরান। তবে ২৫ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার গোলে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে কোরিয়াকে ফের এগিয়ে নেন ৩৭ বছর বয়সি জ্যাং জং ইয়োন। ২০০৭ ও ২০১১ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সর্বোচ্চ গোলদাতার এটি ছিল প্রতিযোগিতার সপ্তম গোল।

৩০ মিনিটে আফরাজের ফিল্ড গোলে ফের সমতায় ফিরে পাকিস্তান (৩-৩ করে)। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই  ইয়াং জি হুনের পেনাল্টি কর্নার গোলে ৪-৩ ব্যবধানের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় কোরিয়া।

তৃতীয় কোয়ার্টারে ৪৪ মিনিটে ফিল্ড গোল করে কোরিয়াকে ৫-৩ ব্যবধানে পৌঁছে দেন জিং জুন উ। চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টারে ম্যাচের ৪৭ মিনিটে দুটি পেনাল্টি কর্নার পায় পাকিস্তান। প্রথম প্রচেষ্টা বিফলে গেলেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় গোল করে ব্যবধানে কমিয়ে ৫-৪ করেন মুবাশার আলী।

৫১ মিনিটে ফের মুবাশার আলীর পেনাল্টি কর্নার গোলে (৫-৫) সমতায় ফিরে আসে পাকিস্তান। তবে ৫৬ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে প্রতিযোগিতায় নিজের অষ্টম গোল করে কোরিয়াকে ম্যাচে শেষ বারের মত এগিয়ে দেন জ্যাং জং ইয়োন (৬-৫)। শেষ মুহুর্তের ওই গোল আর পরিশোধ করা হয়নি পাকিস্তানের। ফলে হার মেনে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয় তারা।