×

সারাদেশ

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে হেলে পড়া ভবন ভাঙা হচ্ছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫:৪৮ পিএম

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে হেলে পড়া ভবন ভাঙা হচ্ছে

মঙ্গলবার দুপুর থেকে ভবনগুলো ভাঙার কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। ছবি: ভোরের কাগজ

আশ্রয় ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ এলাকাবাসীর

চট্টগ্রাম নগরের মাদারবাড়ি এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের খাল খনন কাজের জন্য হেলে পড়া ভবনগুলো ভাঙছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে ভবনগুলো ভাঙার কাজ শুরু করে সিডিএ। এর আগে সোমবার রাতে হেলে পড়া ভবনগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের বাসিন্দারা মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। হেলে পড়া ভবনের পরিবারের সদস্যরা তাদের পুর্নবাসন এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। এদিকে খাল পাড়ে নির্মিত হেলে পড়া ভবনগুলো নির্মাণের সময় নকশা মানা হয়নি বলে দাবি করছে সিডিএ। খাল পাড়ে ১৫ ফুট জায়গা ছেড়ে ভবন নির্মাণের বিধান থাকলেও এক্ষেত্রে তা মানা হয়নি এবং ভবন নির্মাণের সময় ইমারত বিধিমালা মানা হয়নি বলেও দাবি করছেন সিডিএ কর্মকর্তারা।

ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নগরের মাদারবাড়ির স্ট্র্যান্ড রোডের পার্বতী ফকির পাড়া এলাকায় গুলজার খালের পাশে গত সোমবার রাতে একটি তিনতলা ভবন, একটি দোতলা, একটি মন্দির ও একটি কাঁচা ঘর হেলে পড়ে। ভবনগুলোতে অন্তত ১৫টি পরিবার থাকত। ভবন হেলে পড়ার সংবাদ পেয়ে রাতেই ফায়ার সার্ভিসের একটি দল গিয়ে খাল ঘেঁষে গড়ে ওঠা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন দুটির বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে শুরু করে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই হেলে পড়া ভবন দুটি ও এর আশেপাশের ঝুঁকিপূর্ণ বেশকয়েকটি পরিবারের লোকজনকে সরিয়ে নেয় ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসনের লোকজন।

মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ভাঙা শুরু করে সিডিএ। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের বাসিন্দারা প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে তা না ভাঙার দাবি জানান। তবে প্রকল্পের কর্মকর্তারা তাদের জানান, ঝুঁকি কমাতেই ভবনগুলো ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছে সিডিএ। এখন ভবন দুটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। তিনটি ভবন হেলে পড়ার পাশপাশি খালপাড় ঘেঁষে গড়ে তোলা আরও কয়েকটি স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পাশের আরো দুটি ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে বাসিন্দারা ভবনগুলো ছাড়তে শুরু করেছেন।

হেলে পড়া ভবন দুটির মধ্যে স্বপন দাশ ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন তিন তলা একটি এবং শ্যামল দাশের মালিকানাধীন দোতলা ভবনটি অপরটি। এছাড়া তাদের ভবন দুটি সংলগ্ন একটি জগন্নাথ ও বিষ্ণু মন্দির কাত হয়ে কিছু অংশ দেবে গেছে।

ওই ভবন দুটি সংলগ্ন গুলজার খালে সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের অধীন খাল সংস্কার ও খনন কাজ কাজ করছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা। এলাকাবাসীর দাবি খনন কাজের ফলে ওই ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে হেলে পড়েছে। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন ভবন ভেঙে ফেলার কারণে তারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। হেলে পড়া দোতলা ভবনের বাসিন্দা আরতি দাশ ভোরের কাগজকে বলেন, খালের প্রতিরোধ দেয়ালের কাজ শুরু করার পর থেকে আশপাশের ভবনগুলো হেলে পড়তে শুরু করে। সিডিএকে বারবার বলা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের আর্থিক সঙ্গতিও ভালো নয়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পথে বসতে হবে। ভবনমালিকেরা দাবি করেছেন, তারা নকশা অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ করেছেন। ধার কর্জ করে ভবন করেছেন। এখন এভাবে ভবন হেলে পড়ায় মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন।

আশ্রয় ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলনকারীদের একজন রত্না দাশ ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের এখানকার অবৈধ নাগরিক বলা হচ্ছে। খাল খননের কারণে ভবন হেলে গেছে। সিডিএ এর জন্য দায়ি। কোন কথা ছাড়াই ভবন ভেঙে ফেলছে। আমরা এখন কোথায় যাবো। আমাদের থাকার কোন জায়গা নেই। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে পারলে, আমরা কি দোষ করেছি। আমরা তো দেশের নাগরিক। আমাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

মঙ্গলবার সকালে হেলে পড়া ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা পরিদর্শনে যান সিডিএ কর্মকর্তারা। এ সময় চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সিডিএ কর্মকর্তারা বলছেন, খালের পাড় ঘেঁষে গড়ে তোলা ভবনগুলোর কোনো অনুমোদন নেই। খালের সংস্কারকাজ শুরুর আগেই অবৈধ ভবনগুলো ভেঙে ফেলার জন্য সিডিএ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু ভবন মালিকরা সেটা আমলে নেননি। তবে ভবন মালিকরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, সিডিএ কর্মকর্তারা মৌখিকভাবে তাদের ভবন থেকে সরে যেতে বলেছিল। এ বিষয়ে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। দুই বছর আগে কিছুদিন খালে কাজ করেছিল। এরপর চলে যায়। দুইমাস আগে আবারও কাজ শুরু করলেও তাদের কিছু জানানো হয়নি।

ঘটনাস্থলে থাকা সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, ‘খালের ১৫ ফুট দূরে ঘর নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। এরপরও খালের পাশে ঘর নির্মাণ করেছে, তাদের অপসারণ করতে সময় দেওয়া হয়। কিন্তু অপসারণের বদলে তারা বর্ধিত করেছে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই খালের কাজ শুরু করতেই ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনগুলোর নির্মাণের সময় নকশা মানা হয়নি। বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। খালের পাড়েই ওয়ালের ওপর ভবনটি নির্মাণ করেছে। তাছাড়া ভবনের নিচেও কোনো ফাউন্ডেশন নেই। তাই ভবনগুলো হেলে পড়েছে।

জলাবদ্ধতা নিরসণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী ভোরের কাগজকে বলেন, এই ভবনের কিছু অংশ খালের মধ্যে পড়েছে। বর্ধিত অংশ আগে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। ভবনটি সিডিএর নকশা অনুযায়ী নির্মাণ করা হলে এভাবে হেলে পড়ার কথা না। প্রকল্পের কাজের জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল। প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের জন্য খালের পাশে শিট পাইল দেওয়া হয়েছিল। ভবন মালিক ও বাসিন্দাদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল।

সিডিএ’র অথরাইজেশন অফিসার-২ প্রকৌশলি মোহাম্মদ হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, ভবনগুলোর কোনো অনুমোদন নেই। তারা সিডিএ’র কোনো প্ল্যান না নিয়ে তা করেছে। খাল খনন কাজের জন্য তাদের আগে থেকেই সতর্ক করা হলেও তাতে কান দেয়নি। আমরা আপাতত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর কিছু অংশ ভেঙে দিচ্ছি। এতে ঝুঁকি কমবে পাশাপাশি পরবর্তীতে মালিকেরা নিয়ম অনুযায়ী ভবন আবার নির্মাণ করতে পারবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App