×

জাতীয়

ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু আজ, প্রথম দিনে যাচ্ছে জাপা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৪৫ এএম

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হচ্ছে আজ। নির্বাচন কমিশন গঠনে এখনও আইন প্রণয়ন না হওয়ায় এবারও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতিকে সার্চ কমিটির পথে যেতে হচ্ছে।

তারই অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আজ থেকে নির্বাচন কমিশনে তালিকাভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করছেন। সোমবার (২০ আগস্ট) বিকেল চারটায় জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে এর সূচনা হবে।

তবে দলগুলোর পক্ষ থেকে ইসি গঠনে আইন প্রনয়নের দাবি জানানো হবে বলে জানা গেছে। যারা রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেবেন তাদেরকে আইইডিসিআর এবং বিএসএসএমইউ থেকে কোভিড টেস্ট বাধ্যতামূলক বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। ফলে এর আগেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন নিয়োগ দেবেন। এ কমিশনের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ লক্ষ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। প্রথম দিনের আলোচায় অংশ নিতে ইতোমধ্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সৃষ্ট রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজকের সংলাপে অংশ নিচ্ছেন বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সংলাপে দ্বিতীয় দল হিসাবে যাচ্ছে সরকারের জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনার একদিন পর জাসদের সঙ্গে সংলাপ হবে। অর্থাৎ ২২ ডিসেম্বর বিকেলে রাষ্ট্রপতি জাসদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে। এর পরে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী ও মহাজোটের শরীক দল ওয়াকার্স পার্টির, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টি, সাম্যবাদী দলসহ বেশ কয়েকটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে বঙ্গভবন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, নতুন ইসি গঠনে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গেই রাষ্ট্রপতি আলোচনা করবেন। আলোচনা শেষে আপিল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি যিনি প্রধান বিচারপতি নন, তার নেতৃত্বে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। এতে হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক, নিয়ন্ত্রকসহ (সিএজি) দু-তিনজন বিশিষ্ট নাগরিক থাকবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, সোমবার থেকে সংলাপ শুরু হচ্ছে। এখানে দলগুলোর মতামত নেবেন রাষ্ট্রপতি। তার পরে তিনি একটি সার্চ কমিটি গঠন করবেন, যার আহ্বাহক হবেন আপিল বিভাগের একজন জেষ্ঠ্য বিচারপতি যিনি প্রধান বিচারপতি নন, তার নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। এর পরে সংলাপে বিভিন্ন দল যে নামগুলো প্রস্তাব করবেন সেগুলো রাষ্ট্রপতি তাদের কাছে দেবেন। এর থেকে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে এই সার্চ কমিটি রাষ্ট্রপতিকে পেশ করবেন। পরে এর থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন কবরেন। এ বিষয়ে আইনের দাবি তুলছে বিভিন্ন দলগুলো আইন কবে হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন মন্ত্রী জানান, এটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, এটা করতে আগামী দু’তিনটি সংসদীয় অধিবেশনে আলোচনা করে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত বা আইন প্রণয়ণ করা যেতে পারে। তবে সময় লাগবে। এক্ষুনি এটা সম্ভব হবে না।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, গতবার ইসি গঠনের সময় ৩১টি দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবারও এই ৩১ দল তো রয়েছেই। তবে শেষ পর্যন্ত কতটি দল হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হয়ে গেলে আমন্ত্রিত দলগুলোকে দাওয়াত কার্ড পাঠাব। জাতীয় পার্টি যেহেতু বিরোধী দল, তাই তাদের দিয়েই এ সংলাপ শুরু হবে। নিবন্ধিত দল ৩৯টি হলেও অনেক ছোট ছোট দলের আগ্রহ না থাকায় গতবার তাদের সঙ্গে সংলাপ হয়নি।

এদিকে বিএনপি ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে তারা ‘অর্থহীন’ সংলাপে যাবে না। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অতীতে রাষ্ট্রপতির ডাকে সংলাপে গিয়ে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। কোনো সংলাপেই জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি। এগুলো সম্পূর্ণ লোকদেখানো এবং আইওয়াশ ছাড়া আর কিছুই নয়। বিএনপির সংসদীয় দলের প্রধান এমপি হারুনূর রশীদ ভোরের কাগজকে জানান, তারা এখনো সংলাপের চিঠি পায়নি। তবে চিঠি পেলেও দল সংলাপে যাবে কিনা তা দল বসে সিদ্ধান্ত নেবে। এ বিষয়ে দলের মহাসচিব ভালো বলতে পারবেন।

সংলাপ প্রসঙ্গে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, আমরা সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রপতির আহ্বানে সংলাপে যাচ্ছি। তবে সেখানে কি ধরনের আলোচনা হয় সে বিষয়ে আমরা আমাদের মতামত দেব। ইসি গঠনের জন্য কোন নাম দিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এখনো ঠিক করিনি। তবে সোমবার সকালে বৈঠক রয়েছে, সেখানে আলোচনা হবে, রাষ্ট্রপতি চাইলে আমরা আমাদের মতামত জানান।

এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, তারা সংলাপের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ সোমবার বিকেল চারটায় জাপা অংশ গ্রহণ করছে। চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেবে। তিনি আরও বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতির এই আমন্ত্রণকে ইতিবাচকভাবেই দেখছি। তবে আমরা চাইবো সার্চ কমিটির মাধ্যমে না হয়ে ইসি গঠন আইনের মাধ্যমে হোক। সংসদে এ বিষয়ে দ্রুত আইন পাশ করার জন্য আমরা আহ্বান জানাব।

এদিকে ২২ ডিসেম্বর বিকেল চারটায় সংলাপে অংশ নেবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), যারা ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের সদস্য। দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতারের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বসবেন। রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, মন্দের ভালো সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা সংলাপে অংশ নেব। সংলাপে দলের প্রস্তবনাগুলো তুলে ধরা হবে। তবে সার্চ কমিটির মাধ্যমে এবারে হলেও দ্রুত এ বিষয়ে সংসদে আইন পাশ করার আহ্বান জানানো হবে বলে জানান ইনু।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলবো একাদশ সংসদ নির্বাচন যেমন ভোটের আগের রাতে শেষ হয়েছিল তেমন হলে ইসি গঠন করে লাভ কি? সিপিবি ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি জানাবে বলে জানান তিনি। এদিকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা বলবো নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধানে যে আইনের কথা বলা হয়েছে তা যেন করা হয়। আমরা চাইবো স্বাধীন কর্মক্ষণ ইসি, যারা নির্বাচনী আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে কুণ্ঠিত বা কারো নির্দেশের অপেক্ষা করবে না, স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে সক্ষম হবে তেমন কমিশন। তবে আইন প্রণয়নের ওপর জোর দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বাসদের সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে আমরা আমন্ত্রণ পেয়েছি। তবে আমরা সংলাপে আইন প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দেব। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া জানান, তার দল সংলাপে অংশ নেবেন। চৌদ্দ দলের শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বসর মাইজভান্ডারি বলেন, চৌদ্দ দল শিগগিরই একটা আলোচনায় বসবে। বৈঠকে কারা কারা যাবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জানা গেছে, গতবারের মতো এবারও নিবন্ধিত ৩১টি দলের সঙ্গে সংলাপ হবে। দেশের দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি গতকাল পর্যন্ত সংলাপের আমন্ত্রণ পায়নি। মূলত সংলাপের শেষে এ দুটি দলের সঙ্গে বসতে পারেন রাষ্ট্রপতি। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া বলেন, আওয়ামী লীগ এখনো পর্যন্ত আমন্ত্রণপত্র পায়নি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, সব রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নিলে যা হবে, অংশ না নিলেও তাই হবে। আমাদের সংলাপের অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। সাবেক এই আমলা আরও বলেন, আমরা ইসি গঠনে আইন করার কথা বলে আসছি। আইনের খসড়া করে দিয়েছি; সরকার তা আমলে নিচ্ছে না।

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে এবার তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথবার ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে ডাকেন। তবে বিএনপি তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় থাকায় ওই সংলাপ থেকে কার্যকর কোন ফল বেরিয়ে আসেনি।

দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সংলাপ শুরু হয়। চলে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। বঙ্গভবনে পর্যায়ক্রমে মোট ৩১টি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নেয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App