×

জাতীয়

গৌরবময় বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০৫ এএম

গৌরবময় বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী

ফাইল ছবি

একাত্তর থেকে ২০২১। অর্ধশতকের দিনবদলের যাত্রা। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস। মহান একাত্তরের এই দিনে ঘড়ির কাটায় যখন ৪টা বেজে ৩০ তখন, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নতমস্তকে আত্মসমপর্ণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বিজয় অর্জন হয়েছিল বীর বাঙালির। আজ মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির গৌরবের দিন। বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন। যেসব বীর সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে এই পতাকা ও মানচিত্র এসেছে, তাদের শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমেই এই দিবসের মহিমা প্রকাশ পাবে আজ। বিজয়ের পঞ্চাশতম বার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে আজ ওই স্মরণীয় মুহূর্তে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ নেবে জাতি।

বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী- সব মিলিয়ে এবারের বিজয়ের উদ্যাপনে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সড়কদ্বীপ ও মোড় আলোকসজ্জিত করা হয়েছে। আজ সকালে জাতীয় পতাকা শোভা পাবে আঙিনায় আঙিনায়। গতকাল থেকেই ঢাকার অলিগলিতে মাইকে বাজতে শোনা যায় বঙ্গবন্ধুর রেকর্ড করা ভাষণ ও মুক্তির গান।

গত ৫০ বছরে নানা বিচ্যুতি সত্তে্ব বাংলাদেশের রয়েছে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। দারিদ্র্যের তলাবিহীন ঝুড়ির বদনাম গুছিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদালাভ। জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর এগিয়ে কলঙ্কমোচনের পথে এগিয়ে যাওয়া, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে দায়মুক্তির ইতিহাস তৈরি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে এগিয়ে যাওয়ার আদর্শিক লড়াইয়ের পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ বিশে^ রোলমডেল। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্টোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঘরে ঘরে বিজলি বাতির ঝলকানি, সাবমেরিন ক্যাবল থেকে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটালাইট- সবই বিস্ময়কর অগ্রগ্রতির নাম বাংলাদেশ। আর এসব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে গত এক দশকে। এর আগে জাতির পিতা ও চার নেতার হত্যাকাণ্ড, ক্ষত-বিক্ষত সংবিধান, কুখ্যাত ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ, জিয়া-এরশাদের স্বৈরশাসন, হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ২১ বার হামলা, পেট্রল বোমায় মানুষ হত্যা, সারাদেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা, জঙ্গি বাংলাভাইদের উত্থান বিশ্বে বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করেছিল বারবার। অন্ধকারের সেসব দিনরাত্রি পেরিয়ে আলোর পথে যাত্রা করেছে বাংলাদেশ, যার ফলস্বরূপ কোভিড বিশ্বেও সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে বাংলাদেশ। রূপকল্প-২০৪১ এর আগেই উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে জাতি।

ফিরে দেখা একাত্তর : স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে দীর্ঘ সংগ্রামদীপ্ত পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর দ্বিজাতিতত্তে¡র ভিত্তিতে যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়েছিল, সেখানেও বাঙালিদের ওপর নেমে এসেছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ-নির্যাতন। প্রথম আঘাত এসেছিল মাতৃভাষার ওপর। ১৯৫২ সালে বুকের রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে বাংলা মায়ের সন্তানেরা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বিশ্বে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে স্বাধিকার চেতনার স্ফুরণ ঘটেছিল, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কালক্রমে তা স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধে অংশ নিতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন। একাত্তরের ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো জনতার সামনে তার ঐতিহাসিক ভাষণে শত্রুদের মোকাবিলার জন্য যার কাছে যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র, নিরপরাধ, ঘুমন্ত বাঙালির ওপর। বর্বর হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল তারা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে সেই রাতেই তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। তবে এর আগেই তিনি বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বার্তা দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণায় তিনি বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।

দেশের বীরসন্তানেরা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ সংগ্রামে আত্মনিবেদন করেন। দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রামের পর ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং ২ লাখ মা-বোনের ত্যাগ ও সহায়-সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বাঙালি। আজ থেকে ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করেছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। লাল-সবুজ পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন বিজয়ী বাঙালিরা। সেই পতাকা উঁচিয়ে চলছে প্রগতির পথে বাঙালির অভিযাত্রা।

বিজয়ের ৫০ বছর উদযাপন : আজ ১৬ ডিসেম্বর প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর সরকারের দায়িত্বশীল, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি ক‚টনৈতিক ও প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা শ্রদ্ধা জানাবেন। শ্রদ্ধা জানাবেন বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এরপরই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। ১২টায় গণভবনে ডাকটিকেট অবমুক্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোয়া ১২টায় গণভবনে পর্যটন ব্র্যান্ড নেম মুজিব বাংলাদেশ সংবলিত লোগো উন্মোচন করা হবে। সাড়ে ৪টায় জাতিকে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ পড়াবেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল। আগামী শনিবার দুপুর আড়াইটায় বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ধানমন্ডি ৩২নং ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত বিজয় শোভাযাত্রা করবে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে বিজয় শোভাযাত্রা আয়োজন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে সারাদেশে যথাযথ মর্যাদায় মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App