লাখো শহীদের রক্তে কেনা স্বাধীনতা জাতির জীবনে এক গর্বিত অধ্যায়। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) ছিল জাতির কাঙ্ক্ষিত বিজয়ের ৫০তম দিন। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর জন্য এবারের বিজয় দিবস বাঙালির কাছে ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। যার কারণে রাজপথ থেকে গলিপথ সর্বত্রই ছিল বিজয়ের বাঁধভাঙা ঢেউ। বয়সের ভেদ ভুলে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা মেতেছিল আনন্দ আর উল্লাসে। রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গণের মানুষেরাও নানা আয়োজনে উদযাপন করেছে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। নাচ, গান, প্রদর্শনী, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে সাজানো ছিল বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালা। যেখানে বার বার ধ্বনিত হলো সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার শপথ।
ছায়ানট
আলাপন, স্মৃতিচারণ, গীত-আলেখ্য, একক সংগীত, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট।
বিকেল চারটা ৩১ মিনিটে বিজয়ের ক্ষণে ছায়ানট ভবনের সামনে গীতি আলেখ্য ‘রূপান্তরের গান’ পরিবেশনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় ছায়ানটের এই আয়োজন।
দেশাত্মবোধক গান, কবিতা ও নাচের সম্মিলনে সাজানো ছিল শাহরিয়ার কবির রচিত এই গীতিআলেখ্য। এরপর নতুন আঙ্গিকে সাজানো গীতিআলেখ্য “রূপান্তরের গান” মঞ্চস্থ হয় ছায়ানট মিলনায়তনে। এতে কণ্ঠ দেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও জয়ন্ত রায়। আর শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে গান পরিবেশন করেন। সেইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থার সদস্যরা।
এর আগে ছায়ানট ভবনের সামনে জাতীয়সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী, সাধারন সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা, সহ সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল, নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট
আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজয় উদযাপন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয় এই আয়োজন।
এরপর সম্মেলক কণ্ঠে ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে/লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি’ গেয়ে শোনায় গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে দলীয়নৃত্য পরিবেশন করে নাচের দল স্পন্দন ও বহ্নিশিখার শিল্পীরা।
একক সংগীত পরিবেশন করেন- মহাদেব ঘোষ, বিশ্বজিৎ রায়, আরিফ রহমান, শিমুল সাহা, শ্রাবণী গুহ রায়, মহনা দাস, নবনীতা জাইদ চৌধুরী। দলীয়সংগীত পরিবেশন করে- ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, ভিন্নধারা, সমস্বর।
আবৃত্তি করেন- নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকুলি, অনন্যা লাবনী পুতুল, ইকবাল খোরশেদ, বেলায়েত হোসেন। এর আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, লেখক মফিদুল হক, মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন- আজহারুল হক আজাদ। আয়োজনের সভাপতিত্বে ছিলেন বিজয় উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক, অভিনয়শিল্পী ঝুনা চৌধুরী।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, যাত্রাপালা ও শিশু কিশোরদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সম্প্রতির বাংলাদেশ’ শিরোনামের বিজয় উৎসব।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতীয়সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সকাল ১০টায় শুরু হয় সমাপনী দিনের আয়োজন। এরপর সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নেয়, কল্পরেখা, নৃত্যজন, মৈত্রী শিশুদল, এসওএস শিশুপল্লী, কল্যাণপুর স্কুল এন্ড কলেজ, খেলাঘর, বধ্যভূমির সন্তানদল, উদয়ন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আর সন্ধ্যা ছয়টায় যাত্রাপালা ‘গঙ্গা থেকে বুড়িগঙ্গা’ পরিবেশন করে মানিকগঞ্জের চারণিক অপেরার যাত্রাশিল্পীরা।
বিকেলে মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমি পীঠের আসরে স্মৃতিচারণ করেন শহীদের সন্তান। সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নেয়- চারুলতা একাডেমি, ঢাকা সিটি স্কুল, বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস, বধ্যভূমির সন্তানদল, সংগীত সমাজ কল্যাণপুর, যুববান্ধব কেন্দ্র (বাপসা)।
চ্যানেল আই
বিভিন্ন সেক্টরের বীর মুক্তিযুদ্ধাদের অংশগ্রহণে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে উদযাপিত হলো বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী ‘বিজয়ের ৫০’। সকালে ৫০টি পায়রা এবং ৫০টি লাল-সবুজ বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্ধোধন পর্বে অংশ নেন বিভিন্ন সেক্টরের বীর মুক্তিযুদ্ধোরা, ইমপ্রেস গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুর রশীদ মজুমদার, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি., চ্যানেল আই পরিচালনা পর্ষদ সদস্য জহিরউদ্দিন মাহমুদ বাবু এবং চ্যানেল আই-এর পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজসহ আরও অনেকে। দেশের গান করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা।
স্মৃতিচারণ করেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা ও অনুষ্ঠানে আগত মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশিষ্টজনরা। শিল্পী মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চিত্রাঙ্কন করেছেন একদল শিল্পী। কবিতা আবৃত্তি করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম, লায়লা হাসানসহ অনেকে। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ, ক্ষুদে গানরাজ এবং বাংলার গানের শিল্পীরা। নৃত্য পরিভেমন করেছেন চ্যানেল আই সেরা নাচিয়েরা।
অনুষ্ঠানে আগত মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরীয় পরিয়ে তাদের হাতে সম্মাননাসূচক ক্রেস্ট তুলে দেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম, চ্যানেল আই পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা।
শিল্পকলা একাডেমি
বর্ণিল অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের মহান বিজয় দিবস উদযাপন করল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে সকাল আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত দেশাত্ববোধক ও বাউল সংগীত পরিবেশনা, স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, শিশু চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা ও আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এ সময় একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীসহ একাডেমির কর্মকর্তারা স্মৃতিসৌধে ফুলদিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
দ্বিতীয় পর্বে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন পুলক হাসান, বাঁধন, শাহনাজ বেলী, তানিয়া নাহিদ, লেলিন, রিনা আমিন, আবু বকর সিদ্দিক, ফাহমিদা আলম, রাফি তালুকদার, সোহান, হিমাদ্রী, সুচিত্রা রাণী সূত্রধর, মোহনা। বাউল সংগীত পরিবেশন করেন একাডেমির বাউল সংগীত দলের শিল্পীরা।
স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি সৈকত হাবিব , কবি আসাদুল্লাহ, কবি সৌম্য সালেক, কবি আমিনুর রহমান সুলতান। শামীমা চেীধুরী এলিস, ইকবাল খোরশেদ, শাহাদাত হোসেন নিপু, মাসকুরে সাত্তার কল্লোল।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।