×

জাতীয়

৫০ বছরেও অস্থিতিশীল রাজনীতি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৩১ এএম

৫০ বছরেও অস্থিতিশীল রাজনীতি!

ফাইল ছবি

হারিয়ে যাচ্ছে আদর্শের চর্চা, নেই পরমতসহিষ্ণুতা

অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক বৈষম্য থেকে মুক্তির লক্ষ্যেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্ম। যার মূল সুর নিহিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। তবে ৫০ বছরে রাজনৈতিক মুক্তি মিললেও কাক্সিক্ষত সাফল্য আসেনি- এমন দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের পর পেছনের দিকে ফিরতে থাকে দেশের রাজনীতি। পেশিশক্তির উত্থান, মৌলবাদ-সন্ত্রাসবাদ-ধর্মভিত্তিক কুরাজনীতির কালো থাবায় চাপা পড়ে যায় বঙ্গবন্ধুর অর্জন এবং মুক্তিযুদ্ধের কাক্সিক্ষত আকাক্সক্ষা। নানান চড়াই-উৎরাইয়ে স্বৈরশাসকদের বন্দুকের নল থেকে মুক্তি পেলেও অপরাজনীতি, ষড়যন্ত্র আর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জাঁতাকলে পিষ্ট হয় স্থিতিশীলতা। বিশ্লেষকদের মতে, সুষ্ঠু, স্থিতিশীল রাজনীতির জন্য ৫০ বছর বয়সি বাংলাদেশকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আদর্শের চর্চা। পরমতসহিষ্ণুতা নেই। উল্টো দুর্নীতি, লুটপাট, ক্ষমতার অপব্যবহার, ভোগবাদিতা বেড়েই চলছে। এ ব্যাপারে প্রবীণ রাজনীতিবিদ, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য ভোরের কাগজকে বলেন, রাজনীতিতে মূল সুর হারিয়ে আপসকামিতা বেড়ে গেছে। নীতি ও আদর্শ থেকে রাজনীতিবিদরা এখন দূরে অবস্থান করছেন।

গবেষকদের মতে, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির পটপরিবর্তন শুরু। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশের রাজনীতিকে অবরুদ্ধ করে রাখে অপশক্তি। এর সঙ্গে কিছু সামরিক অফিসার, আমলা ও সুবিধাভোগী রাজনীতিবিদ যুক্ত হয়ে বাংলাদেশকে রাজনীতিহীন রাজ্যে রূপান্তর ঘটায়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রথমেই রাজনীতিকে কঠিন করে তোলেন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক, অসা¤প্রদায়িক রাজনীতির পরিবেশ বিনষ্ট করে হত্যা, খুন আর ষড়যন্ত্রের যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলেন, তারই পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করেন স্বৈরাচার এইচএম এরশাদ। এরশাদের আমলে অর্থ, অস্ত্র আর মাদক- রাজনীতির প্রধান হাতিয়ার রূপে দেখা দেয়। এ সময় নীতি-আদর্শের চেয়ে পেশিশক্তি কদর পেতে থাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। আগামী দিনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করা, জনমুখী রাজনীতি, মৌলবাদ-সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ, দলে গণতন্ত্র চর্চা ও শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রাখাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তারা।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, পঞ্চাশ বছরে রাজনীতিতে রাজনীতিবিদদের জনবিচ্ছিন্নতা আরো স্পষ্ট হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে কিছু জনপ্রতিনিধি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, সব রাজনীতিবিদই দুর্নীতিবাজ। তবে রাজনীতিবিদদের যেভাবে জনগণের পাশে থাকার কথা ছিল, তারা তা নেই। বর্তমানে আমলানির্ভর রাজনীতি চোখে পড়ার মতো। রাজনীতি থাকবে রাজনীতিবিদদের হাতে, আমলাদের হাতে নয়।

এদিকে ৫০ বছরে মৌলবাদী শক্তির উত্থানকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। সেইসঙ্গে আমলানির্ভর রাজনীতি, দলে শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রাখাকেও চ্যালেঞ্জ মনে করছেন তারা। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ভোরের কাগজকে বলেন, জন্মলগ্ম থেকেই আওয়ামী লীগ স্বপ্ন দেখে, দেখায় এবং বাস্তবায়ন করে। আওয়ামী লীগের বড় অর্জন একাত্তর। স্বাধীন দেশে জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ, শান্তিচুক্তি, সমুদ্র বিজয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায়, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করে উন্নয়নের রোল মডেলে রূপান্তর, দরিদ্র মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা আওয়ামী লীগের অন্যতম সাফল্য। স্বাধীনতার আগে যেমন বায়ান্ন, বাষট্টি, ছেষষ্টি, ঊনসত্তর, সত্তর, একাত্তরে স্বাধীনতার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ, তেমনি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছেন শেখ হাসিনা।

অন্যদিকে আগামী দিনে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধার করাকেই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে সাবেক বিরোধী দল বিএনপি। পঞ্চাশ বছরে কতটুকু এগুলো বাংলাদেশের রাজনীতি- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি থেকে জাতিকে উদ্ধার করা প্রধান কাজ। ক্ষমতার মালিক জনগণ, তাদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া রাজনীতির বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App