×

মুক্তচিন্তা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে গড়ে উঠুক বাংলাদেশ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৪৫ এএম

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে গড়ে উঠুক বাংলাদেশ

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বাঙালি জাতির গর্বের মাস, শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মাস। ইতিহাস গড়ার মাস। নতুন শক্তি, নতুন উদ্দীপনা, নতুন প্রেরণা নিয়ে দেশ গড়ার এগিয়ে যাওয়ার মাস। বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের এই মাসে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর মধ্য দিয়ে হাজার বছরের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে ঠাঁই করে নিয়েছিল। যার সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন সফল হয়েছে স্বাধীনতার সে মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার জন্য বঙ্গবন্ধু যে অপরিসীম ত্যাগ, নির্যাতন, নিপীড়ন এবং জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছে তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। তাই বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় বিশ্বের শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত, অত্যাচারিত মানুষের নেতা। ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেন, শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন প্রিয় মহান নেতাকে, আমি হারালাম আমার একজন অকৃত্রিম বন্ধুকে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সে মহানায়ককে স্মরণ করছি হৃদয়ের অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধায়। স্মরণ করছি সেসব বীর শহীদের যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়ে আমাদের এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা। স্মরণ করছি যেসব নারী সেবা যতœ দিয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্থ করে তুলেছেন, দিয়েছেন আশ্রয়। নানাভাবে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন, নিজের সর্বস্ব হারিয়েও দেশের জন্য সবকিছু ভুলে আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্নে বিভোর হয়েছেন সেসব বীরাঙ্গনার প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা। সেসব সংগীত রচয়িতা, সুরকার এবং সংগীত শিল্পীদের যারা সংগীতের মাধ্যমে দেশের মানুষকে জাগিয়ে তুলেছিলেন এবং সুরের মূর্ছনায় মুক্তিযোদ্ধাদের জাগিয়েছিলেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা, শক্তি ও সাহস তাদের প্রতি ভালোবাসা। কবি, লেখক, সাংবাদিক যারা লেখার মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে সচেতন করেছেন এবং বিশ্বকে পৌঁছে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক বার্তা বিশ্ব বিবেককে করেছিল জাগ্রত তাদের প্রতি জাতির কৃতজ্ঞতা। বিদেশে যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত তৈরি করে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছে তাদের প্রতিও জানাই অপরিসীম ভালোবাসা। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশংকরসহ অন্য শিল্পীদের, যারা আমেরিকায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতে শরণার্থীদের সহযোগিতা করার জন্য দাতব্য কনসার্টের আয়োজন করেছিল। ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে প্রায় ৪০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় সাবেক বিটলস সংগীত দলের লিড গীটারবাদক জর্জ হ্যারিসন এবং ভারতের সেতারবাদক রবি শংকরের দুটি বেনিফিট কনসার্ট। সে কনসার্টের মাধ্যমে পুরো বিশ্ব জানতে পারে বাংলাদেশ নামক দেশটির কথা। বাঙালি জাতির মাতৃভূমির জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা। স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর পাক বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের কথা। জানতে পারে ভারতের মাটিতে আশ্রয় নেয়া এক কোটি ক্ষুধার্ত শরণার্থীর দুঃখের কথা। সেদিনের কনসার্ট থেকে প্রাপ্ত ২,৪৩,৪১,৮৫১ মার্কিন ডলার দান করা হয় ইউনিসেফে যা ব্যয় করা হয়েছিল আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের সাহায্যার্থে। বাঙালির অকৃত্রিম বন্ধু জর্জ হ্যারিসন এবং পণ্ডিত রবিশংকরের প্রতি বাঙালির এ অপরিসীম ঋণ শোধ হবে না কোনোদিন। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই তাদের। শ্রদ্ধা জানাই ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে আত্মাহুতি দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে যারা পাশে ছিল সেসব দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি সুবর্ণজয়ন্তীতে অপরিসীম কৃতজ্ঞতা। বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস আত্মত্যাগ ও বীরত্বের ইতিহাস। স্বাধীনতার মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলা মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নিহত করা হলেও তাঁর স্বপ্ন তাঁর চেতনা তাঁর আদর্শ প্রতিটি বাঙালির শিরা-উপশিরায় প্রবাহমান। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা লাভ করেছি। ২০২১ সালে বিজয়ের ৫০ বছরে সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বিজয়ের গৌরবে গৌরবান্বিত আজ বাঙালি জাতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে গড়ে উঠুক অসাম্প্রদায়িক, স্বনির্ভর ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। জয় বাংলা।

বিভাস গুহ : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App