×

সম্পাদকীয়

পুঁজিবাজারে সংকটের সমাধান কোন পথে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:৫০ এএম

জাতীয় অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা ক্রমে স্থায়ী রূপ পেতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুঁজিবাজার অস্থির ও অশান্ত ছিল। বাজারে টানা দরপতন চলছে। কোনোভাবে থামছে না। গত সপ্তাহের শেষ দিকে পুঁজিবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও কিছুদিন ধরেই ঘুরপাক খায় দরপতনের বৃত্তে। সূচকের সঙ্গে কমে লেনদেনের পরিমাণ ও বাজার মূলধন। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। পুঁজি হারিয়েছেন অনেকে। তারা বলছেন, দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার টানাটানির কারণে অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না পুঁজিবাজার। জানা গেছে, পুঁজিবাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের যখন-তখন হস্তক্ষেপের কারণে বিএসইসির মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এ কারণে বড় দরপতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাজার। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। এর আগে যদিও টানা দুই সপ্তাহে বাজার মূলধন সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা বেড়েছিল। অথচ শেয়ারবাজারের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেই নতুন নিয়ম-নীতি প্রবর্তন করে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বড় বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ হারাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পাঁচ কারণে পুঁজিবাজারে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এগুলো হচ্ছে দুর্বল আইপিও, বিশৃঙ্খল আর্থিক বিবরণী, বিও অ্যাকাউন্টে স্বচ্ছতার অভাব, সেকেন্ডারি মার্কেটে সন্দেহজনক লেনদেন ও প্রশ্নবিদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য হচ্ছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি আরো বেশি শেয়ার ও বন্ড মার্কেটের শেয়ার জোগান দেয়া হলে পুঁজিবাজার হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে উদাসীন। পুঁজিবাজারের উত্থান-পতন নিয়ে চলছে লুকোচুরি খেলা। একটা তুঘলকি কাণ্ডের ভেতর দিয়েই শেয়ারবাজার দিন অতিক্রম করছে। অথচ সরকারের উদাসীনতা, অব্যবস্থাপনা ও সীমাহীন অনিয়মের কারণেই বিভিন্ন সময় এ বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে এবং সে ধারা এখনো অব্যাহত আছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, নানা প্রতিশ্রæতির পরও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। অথচ পুঁজিবাজার একটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং অর্থনৈতিক চিত্রকে প্রতিফলিত করে। তাই দেশের উন্নতির স্বার্থেই পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। তার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা, নীতিমালা এবং গাইডলাইন। আশ্চর্যের বিষয়- তা হলো পুঁজিবাজারে এই শোচনীয় অবস্থা দেখার যেন কেউ নেই। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুঁজিবাজার নিয়ে নানা নয়-ছয় হয়েছে। ২০১০ সালেও দেখেছি এমন চিত্র। যার প্রতিকার এখনো মেলেনি। ফলে সহায় সম্বল তথা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে লাখ লাখ মানুষ, যাদের অধিকাংশই ছিল বেকার ও নিম্নবিত্ত। আমরা মনে করি, পুঁজিবাজারকে পুনর্গঠন করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আর যারা এ খাতে বিনিয়োগ করছে, তাদের উচিত এ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করে বিনিয়োগ করা। পৃথিবীর সব ব্যবসা-বাণিজ্যেই লাভ-ক্ষতি হয়। কেউ লাভ করবে, কেউ লস করবে- এটিই স্বাভাবিক। তবে প্রতারণা ও মিথ্যার আশ্রয় নেয়া জঘন্য অন্যায়। এ ক্ষেত্রে বাজারে যেন ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের মতো হঠাৎ ধস না আসে সেদিকে বিএসইসিকে তীক্ষè নজর রাখতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App