×

জাতীয়

আবরার হত্যা: সাজা কমার আশায় রোজা রেখেছেন আসামিদের স্বজন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৫১ এএম

আবরার হত্যা: সাজা কমার আশায় রোজা রেখেছেন আসামিদের স্বজন

স্বজনদের অপেক্ষা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে আজ বুধবার (৮ ডিসেম্বর)। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান মামলাটির রায় ঘোষণা করবেন।

এজন্য আসামির স্বজনরা রোজা রেখেছেন যেন তার সন্তানরা মুক্তি পান অথবা সাজা কম দেওয়া হয়। এমনই একজন আসামি মুজাহিদুর রহমানের বাবা, মা, ফুফু, চাচা সবাই রোজা রেখে আদালতে হাজির হয়েছেন।

মুজাহিদের চাচা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার ভাতিজা খুবই ভালো ছেলে ছিল। সে যে হত্যা করেছে আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না। তবে টিভিতে দেখি তার হাতে একটি স্টিক ছিল। আমরা আজ সবাই আদালতে এসেছি রায় শোনার জন্য। আল্লাহ মালুম কি হয়। সবাই রোজা রেখে দোয়া করছি তার সাজা যেন কম হয়।

এদিকে সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে ঢাকার কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হত্যা মামলায় আটক ২২ আসামিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানি শুরু হলে তাদের এজলাসে তোলা হবে। এদিকে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ১৪ নভেম্বর মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের সকল যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে রায় ঘোষণার জন্য ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন বিচারক। কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় ২৮ নভেম্বর বিচারক বলেন, রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন তা বিশ্লেষণ করে রায় প্রস্তুত করা সম্ভব হয়নি। রায় প্রস্তুত করতে আরও সময় লাগবে। তাই এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ৮ ডিসেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন বিচারক।

আবরার হত্যা মামলার ২৩ নং আসামির ভাই বলেন, আদালতে যদি প্রমাণ হয় আমার ভাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাহলে তার সাজা হোক আমরাও চাই। তবে সে জড়িত নয় কিন্তু আলোচিত মামলা বলে সাজা দেয়া হলে সেটা কাম্য নয়। যার সন্তান বা ভাই চলে যায় সেই জানে দুঃখটা কেমন। আমরা চাই সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে সারাদেশে যারা হত্যায় জড়িত তাদের বিচার হোক।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘রায় পেছানোতে আমি হতাশ। তবে আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই। যেন রায়টা দৃষ্টান্তমূলক হয়। ভবিষ্যতে র‌্যাগিংয়ের নামে আর কাউকে হত্যা করা না হয়।’

রায় পেছানোর দিন আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা আগেও বলেছি আবরার যে মারা গেছে তার কোন ডেত্থ সার্টিফিকেট নেই। এছাড়া এ মামলায় যারা মাস্টার মাইন্ড ছিল তাদের আনা হয় নাই। চার্জশিটে উল্লেখ আছে ,বড় ভাইদের নির্দেশে মারছে। কিন্তু বড় ভাইরা কারা? কার নির্দেশে কাজটি হলো তা নেই। বুয়েট কর্তৃপক্ষের ক্যাম্পাস নিরাপত্তার অনেক দুর্বলতা রয়েছে। রাত ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এতো বড় ঘটনা ঘটলো কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না। তারা বলছেন ঘুমিয়ে ছিলেন। তাহলে সাধারণ ছাত্রদের নিরাপত্তা কোথায়। কোন সিসি টিভি ফুটেজ নাই। তারা বলছেন ডিলিট হয়ে গেছে। আসলে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট করতে বহিরাগতরা এসে আবরারকে হত্যা করে। আসামিরা নিরাপরাধ। সিসি টিভি ফুটেজ থাকলে তা প্রমাণ হতো।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে বুয়েট শিার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় বাদী হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর একই বছরের ১৩ নভেম্বর তদন্তে প্রাপ্ত আরও কয়েকজনকে আসামি করে ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

তাদের মধ্যে পলাতক বাদে ২২ আসামি হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতাসিম ফুয়াদ, অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু। পলাতক তিন আসামি হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App