×

জাতীয়

আবরার হত্যার ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৪:৩০ পিএম

আবরার হত্যার মতো এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।

বুধবার (৮ ডিসেম্বর) ১২টায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার রায় ঘোষণায় একথা বলেন তিনি।

বিচারক বলেন, এ হত্যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যাথিত করেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বাীকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না ঘটে তা রোধকল্পে অত্র ট্রাইব্যুনালে সকল আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।

আসামিরা বুয়েটের শেরেবাংলা আবাসিক হলের ছাত্র আবরার ফাহাদকে চড়, থাপ্পর, লাথি, কিল, ঘুষি মেরে, কনুই দিয়ে, স্কিপিং রোপ ও ক্রিকেট ষ্ট্যাম্প দিয়ে নির্মমভাবে ও নিষ্ঠুরভাবে একাধিকবার পেটানো হয়েছে। পরবর্তীতে আবারও ৪০/৫০ বার মারাত্মক রক্তাক্ত করে হত্যা করেছিল কিনা তা বিচার্য বিষয়। সকল আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরে মিলে আবরার ফাহাদ রাব্বিার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে।

বিচারক আরও বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ পাবাদী দোষী সাব্যস্তক্রমে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো।

মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ২০ আসামি হলেন, মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, নাজমুস সাদাত, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু। পলাতক তিন আসামি হলেন, মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।

অন্যদিকে ৫ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। তারা হলেন- মুহতাসিম ফুয়াদ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আকাশ, অমিত সাহা। এছাড়া তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং তা অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার আদেশ দেয়া হয়।

রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা আদালতে বলেছি, আবরার যে মারা গেছে তার কোন ডেত্থ সার্টিফিকেট নেই। এছাড়া এ মামলায় যারা মাস্টার মাইন্ড ছিল তাদের আনা হয়নি। কোনো সিসিটিভি ফুটেজও নাই। আসামিরা যে নির্দোষ তা আমরা প্রমাণ করেছিলাম। তবুও আদালত আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দিলেন। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবো।

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা রায় ঘোষণার পর সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, বিজ্ঞ বিচারক যে রায় দিয়েছেন আমরা সন্তুষ্ট। এ রায়ের মাধ্যমে যেন আর কোন শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের শিকার না হন সেই সংবাদ সমাজে যাবে।

মামলার রায়ের পর আবরারের বাবা বলেন, বিচারক যে রায় দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। এজন্য সরকার, আইন মন্ত্রনালয়সহ সকল বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই। আমার সন্তানকে ফিরে পাবো না। কিন্তু এ রায়ে তার আত্মা হয়তো শান্তি পাবে। আমাদের চোখের পানি কখনো শেষ হবে না। আর কোনো বাবার যেন ছেলে হারাতে না হয়।

এর আগে রায় ঘোষণার জন্য সকাল সাড়ে ৯ টায় ঢাকার কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হত্যা মামলায় আটক ২২ আসামিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্তের পর আবার কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিকে মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে বুয়েট শিার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় বাদি হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর একই বছরের ১৩ নভেম্বর তদন্তে আরও কয়েকজনকে আসামি করে ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App