×

জাতীয়

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী জোরদারের বার্তা হাসিনা-মোদীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:০৪ পিএম

বাংলাদেশ ও ভারতের মৈত্রী দিবসকে কেন্দ্র করে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বার্ত আদান-প্রদান করলেন তাতে ঢাকা-দিল্লির চলমান সম্পর্কের সোনালী অধ্যায়কে আরো পোক্ত করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুই দেশই মৈত্রী দিবস পালন করে। এতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শুধু চুক্তির নয়, আস্থা এবং শ্রদ্ধারও। সবমিলিয়ে দুজনেই দুদেশের সঙ্গে সম্পর্কে মৈত্রীর যে বার্তা দিয়েছেন তা বন্ধনকে আরো দৃঢ় করল।

অপরদিকে ঢাকা ও দিল্লি ছাড়াও বিশ্বের ১৮টি দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ১০ দিন আগে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভারত। ঢাকায় সেক্টর কমান্ডার ফোরামও মৈত্রী দিবস পালন করেছে। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের যে রক্তের সম্পর্ক, তা আরো গভীরভাবে উদযাপন করতে চাই। আমি তো সেই দিনের আশায় আছি, যেদিন ভারতসহ প্রতিবেশী দেশে আনাগোনা করতে কোনো ভিসা লাগবে না। তারা যখন আমাদের সাহায্য করেন, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর। তাদের সঙ্গে আমাদের মাঝে কোনো বেরিয়ার থাকবে না।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এরপরে দিনটি শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ ছিল। গত মার্চ মাসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন যে ৬ ডিসেম্বরকে মৈত্রী দিবস হিসেবে উদযাপন করার এবং তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর ৬ ডিসেম্বর দুই দেশে মৈত্রী দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো পালিত মৈত্রী দিবসে শেখ ও নরেন্দ্র মোদী মৈত্রীর বার্তা দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, স্বাধীনতার সময় থেকে দুটি দেশ যে ঐক্যের ভিত্তিতে নিজেদের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে চলেছে তা আজ পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে। তবে মাঝে কিছুটা সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কিছুটা নেতিবাচক সম্পর্ক বিরাজমান থাকলেও গত ১২ বছরে দুটি দেশের সম্পর্ক একটি বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছেছে। ছিটমহল সমস্যার সমাধানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধান এসেছে গত ১২ বছরে। বাংলাদেশ বর্তমানে ভারতের পাঁচটি সর্ববৃহৎ রপ্তানিকৃত দেশের তালিকায় রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পে ভারতের সহায়তার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে।

জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, দুই দেশের সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে ১৯৭১। সেই সম্পর্কের ৫০ বছরের পূর্তিতে অতীরেতর ইতিহাস পর্যালোচনা চলছে। এতে দুই দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পারষ্পরিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সম্পর্ককে আরো সুর্দঢ় করতে হবে। অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে দুদেশের মধ্যে সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। এতে দ্বিমত, অমত থাকবে। আলোচনা মাধ্যমে সমাধান হবে এবং সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ুন কবীর ভোরের কাগজকে বলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। সেই দিনটিকে স্মরণ করে ভারত যে বক্তব্য দিয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। এধরনের বার্তাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি। বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে বহুমাত্রিকতা পেয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় সম্পর্ক আরো উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। পারষ্পরিকভাবে আমরা যাতে কাজ করতে পারি সেবিষয়ে সচেষ্ট থাকব।

এদিকে, সোমবার ভারত ও বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস উপলক্ষে টুইটার বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরো প্রসারিত ও গভীর করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবেন। তিনি ওই টুইটে বলেন, আমাদের সম্পর্ককে আরো প্রসারিত এবং গভীর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি উন্মুখ। তিনি বলেন, আজ ভারত ও বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস পালন করছে। আমরা যৌথভাবে আমাদের ৫০ বছরের বন্ধুত্বের ভিত্তিকে স্মরণ ও উদযাপন করছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করতে কাজ করার জন্য পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সোমবার মৈত্রী দিবস বা ফ্রেন্ডশিপ ডে উপলক্ষে বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রচারিত দুই মিনিটের ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক কাজের প্রয়োজনে আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে সীমাবদ্ধ নয়, তা সার্বভৌমত্ব, সমতা, আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধায় বিস্তৃত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স (আইসিডাব্লিউএ) ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি প্রদান করার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ তম বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার নয়াদিল্লিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্বে বিশ্বাস করে চলেছি। এ বর্ষপূর্তি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি এবং সামনের পথ চলা সম্পর্কে চিন্তা করার সুযোগ এনে দিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী গতিশীল অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য নিজেদের পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করার জন্যও এটি একটি উপলক্ষ। তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল বিষয় এখন জনগণের মধ্যে সংযুক্তি, বাণিজ্য, ব্যবসা ও যোগাযোগে মনোনিবেশ করা দরকার, যা উভয় পক্ষের জন্য পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যাত্রায় এটি একটি মাইলফলক। ভারত ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তিনি বলেন, আমি আত্মবিশ্বাসী যে, দুই দেশ এবং দেশের জনগোষ্ঠী একত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ধারণাকে বাস্তবতায় পরিণত করে চলবে। আজ আমাদের বিশাল অংশীদারত্ব পরিপক্ব হয়েছে, গতিশীল, ব্যাপক ও কৌশলগত আকার নিয়েছে; সার্বভৌমত্ব, সমতা, বিশ্বাস ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং অন্যান্য অগণিত অভিন্নতার যৌথ মূল্যবোধে পরিগণিত। শেখ হাসিনা বলেন, নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক মতবিনিময় ও আদানপ্রদান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন আরো শক্তিশালী, বৈচিত্র্যময় ও প্রসারিত করেছে। কোভিড-১৯ এর কারণে আরোপিত বিধিনিষেধ সত্ত্বেও সমস্ত স্তরে সম্পর্ক স্থিতিশীল এবং শক্তিশালী রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় আমাদের চমৎকার সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততায় এটি স্পষ্ট ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর এক ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। সম্পর্কটি বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব আমাদের হৃদয়ে রয়েছে। বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী থাকবে।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান ও আইসিডব্লিউএ মহাপরিচালক বিজয় ঠাকুর সিং অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App