×

জাতীয়

টানা বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি, দাম বাড়তে পারে শীতকালীন সবজির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৫০ পিএম

টানা বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি, দাম বাড়তে পারে শীতকালীন সবজির

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে রাজধানীতে দিনভর বৃষ্টি। পুরান ঢাকার আগা সাদেক লেন থেকে তোলা। ছবি: ভোরের কাগজ

টানা বৃষ্টিতে ধানের ক্ষতি, দাম বাড়তে পারে শীতকালীন সবজির

রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় বৃষ্টির দুর্ভোগে পথচারীরা। সোমবার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে থেকে তোলা। ছবি: ভোরের কাগজ

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে দুদিন ধরে কার্যত টানা বৃষ্টি। বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। শীতকালীন সবজি অনেক জায়গায় পানির তলায় চলে গেছে। পাশাপাশি অনেক জায়গায় সবজি ক্ষেতে গোড়াপচা রোগ আসছে। এর জেরে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। এদিকে বাসিন্দাদের আশঙ্কা, শীতের মুখেই বৃষ্টির জেরে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে শীতকালীন সবজির দাম বাড়তে পারে।

এবার বৃষ্টির আগে থেকে কৃষকদের বারবার সতর্ক করেছিল আবহাওয়া দফতর। পাকা ধান মাঠ থেকে তুলে নেয়ার ব্যাপারেও পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি আলু এখনই না বসানোর পরামর্শ দিয়েছিল কৃষি অফিস। তাছাড়া মাঠ থেকে পানি যাতে সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্যও পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টো। সবাই আলুসহ নানা সব্জি রোপন করেছিলেন। এখন বৃষ্টি এসে সব পন্ড করে দিয়েছে।

[caption id="attachment_322550" align="aligncenter" width="812"] রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় বৃষ্টির দুর্ভোগে পথচারীরা। সোমবার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে থেকে তোলা। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

এদিকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ঘিরে আবহাওয়া অধিদফতর যে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আসছিল তার ১৪ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য দেয়া হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ লঘুচাপে পরিণত হয়েছে । সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে এবং বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কি. মি. বেগে অস্থায়ী দমকা কিংবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী (২২-৪৩ মি.মি) থেকে ভারী (৪৪-৮৮ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে বলেও পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদফতর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে এই সিরিজে আর কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সাতক্ষীরায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্র বৃষ্টি অব্যাহত আছে।  সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস। সাতক্ষীরার উপকুলীয় এলাকা আশাশুনি ও শ্যামনগরের নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৩ দিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

সাতক্ষীরার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ শক্তি হারিয়ে বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে রোববার থেকে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অব্যাহত আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জাওয়াদের প্রভাবে উপকুলীয় এলাকায় ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা আছে। বর্তমানে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি আছে।

তিনি আরও জানান, এ অবস্থায় জেলেদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। আগামীকাল থেকে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের জেলে আব্দুল রহমান জানান, বৈরি আবহাওয়ায় নৌকা নিয়ে শনিবার লোকালয়ে চলে এসেছে। যারা সুন্দরবনের গভীরের নদ-নদীতে আছে তারাও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

আশাশুনির প্রতাপনগর এলাকার সাংবাদিক মাসুম বিল্লাহ জানান, মানুষ ইয়াসের পর মাত্র ভিটায় ফিরতে শুরু করেছে। আবার বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো বাতাসে তাদের জীবন বিপর্যস্ত। বিশেষ করে কুড়িকাউনিয়া হরিশখালি ও বন্যতলা এলাকার রিং বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে এ দ্বীপের মানুষ বেঁচে আছে। ঝড় তাদের কাবু করতে না পারলেও জলোচ্ছ্বাস তাদের কাবু করে ফেলে। জোয়ার পানি বেশি বৃদ্ধি পেলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে।

উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মণ্ডল জানান, শনিবার থেকেই উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। আর রোববার রাত থেকে হালকা বাতাস বইছে। নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের কয়েকটি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় আতঙ্ক আছেন স্থানীয়রা

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App