×

জাতীয়

রাজাকারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতেই পেরোল অর্ধশতক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:২৭ এএম

রাজাকারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতেই পেরোল অর্ধশতক

প্রতীকি ছবি

পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তার জন্য একাত্তরের মে মাসে খুলনায় খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন কর্মী নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানের সামরিক সরকার। জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রধান মো. ইউসুফকে রাজাকার বাহিনীর সর্বাধিনায়ক করা হয়। শুরুতে ১০টি জেলায় ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতারা নেতৃত্বে পান। প্রথমে রাজাকার বাহিনী ছিল এলাকার শান্তি কমিটির নেতৃত্বাধীন। ১ জুন জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাজাকার অর্ডিন্যান্স জারি করে আনসার বাহিনীকে রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তরিত করেন।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৭ সেপ্টেম্বর জারিকৃত অধ্যাদেশে রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহিনী সদস্যরূপে স্বীকৃতি দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে রাজাকার বাহিনীর প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছিল ১৫ দিন। ১৪ জুলাই কুষ্টিয়ায় এই বাহিনীর প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হয়। ২৭ নভেম্বর রাজাকার বাহিনীর কোম্পানি কমান্ডারদের প্রথম ব্যাচের ট্রেনিং শেষে সাভারে বিদায়ী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন জেনারেল এ কে নিয়াজি। পরে এই বাহিনীকে একটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তরের মর্যাদা দেয়া হয়। ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংসের গবেষণা অনুযায়ী, রাজাকারের সংখ্যা ছিল ৫০ হাজারের মতো। জেনারেল নিয়াজী তার বইতে এই সংখ্যা উল্লেখ করেছেন। স্বাধীনতার পর রাজাকারদের বিচারে ৩৭ হাজারজনের একটি তালিকা করা হয়। পাকিস্তানপন্থি পত্রিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অভিহিত করা হতো ভারতীয় চর, দুষ্কৃতকারী হিসেবে। ‘রাজাকররা ৭০ জন দুষ্কৃতকারী হত্যা করেছে’, ‘ভারতীয় চরকে নির্মূল করেছে’, এমন শিরোনামে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি রায়ে বলা হয়েছে, তাদের মূল কাজ হয়ে দাঁড়ায় গ্রামে-গঞ্জে অত্যাচার, নির্যাতন এবং সামরিক বাহিনীর অগ্রবর্তী পথপ্রদর্শক।

বিজয়ের ৫০ বছরে দাঁড়িয়েও রাষ্ট্রীয়ভাবে চিহ্নিত করা যায়নি স্বাধীনতাবিরোধীদের। তৈরি হয়নি নির্ভুল, সঠিক পূর্ণাঙ্গ তালিকা। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের দাবি, সঠিক ও নির্ভুল তালিকা তৈরির জন্য সময় বেশি লাগছে। এজন্য সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহজাহান খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। নির্ভুল তালিকার জন্য প্রতিটি উপজেলায় যুদ্ধকালীন কমান্ডারদের সম্পৃক্ত করা হবে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তালিকা তৈরি করবে। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করবে। এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিজয় দিবসের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে ১০ হাজার ৭৮৯ জন স্বাধীনতাবিরোধীর তালিকা প্রকাশ করা হলেও গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম আসায় বিতর্কের কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। খুব দ্রুত সঠিক ও নির্ভুল তালিকা প্রণয়নের আশ্বাস দেয়া হলেও গত দুবছরে থমকে আছে তালিকা প্রণয়নের কাজ। জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা তৈরিতে সময় লাগবে। নির্ভুল তালিকা তৈরির জন্য দেরি হচ্ছে।

৫০ বছরেও রাজাকারের তালিকা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষকরা। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় দায় এড়াতে পারে না- এমন মন্তব্য তাদের। সংশ্লিষ্টদের মতে, নিয়াজির বইয়ে ৫০ হাজার লোককে রিক্রুট করার কথা উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি ‘দ্য বাংলাদেশ কোলাবোরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার, ১৯৭২’ (দালাল আইন) অনুযায়ী ক্ষমা না পাওয়া ১১ হাজার রাজাকারের নামের তালিকা নিশ্চয়ই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখনো রয়েছে। সব মিলিয়ে ৫০ হাজারের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকার কথা। ওই নামগুলোর সঙ্গে কিছু নাম সংযোজন করা হলেই হবে। এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ভোরের কাগজকে বলেন, বিজয়ের পরপরই বঙ্গবন্ধু সরকার দালাল আইনে বিচার শুরু করলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বেকসুর খালাস দেয়া হয় ১১ হাজার যুদ্ধ বন্দিকে। বঙ্গবন্ধুর সময় করা রাজাকারের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রয়েছে। সেখানে কিছু নাম শুধু যোগ করলেই তালিকা করা সম্ভব। এক্ষেত্রে রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষকদের সহযোগিতা প্রয়োজন। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করার চেয়েও রাজাকারের তালিকা করা সহজ।

মুক্তিযোদ্ধার তালিকার মতোই রাজাকারের তালিকা জরুরি মন্তব্য করে ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ডা. এম এ হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতিটি এলাকায় রাজাকারদের নাম টানিয়ে রাখা প্রয়োজন যেন মানুষ জানতে পারে, ওই এলাকায় কারা কারা স্বাধীনতাযুদ্ধে মীরজাফরের ভূমিকায় ছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App