×

স্বাস্থ্য

‘ওমিক্রন’ এখন দোরগোড়ায় ঝুঁকি বিবেচনা করেই ব্যবস্থা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:২১ এএম

‘ওমিক্রন’ এখন দোরগোড়ায় ঝুঁকি বিবেচনা করেই ব্যবস্থা

প্রতীকি ছবি

‘ওমিক্রন’ এখন দোরগোড়ায় ঝুঁকি বিবেচনা করেই ব্যবস্থা

প্রতীকি ছবি

‘ওমিক্রন’ এখন দোরগোড়ায় ঝুঁকি বিবেচনা করেই ব্যবস্থা

প্রতীকি ছবি

গত ৮ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয় কোভিড-১৯ এর নতুন ধরন ওমিক্রন। এরপর থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার সীমানা ছাড়িয়ে সংক্রমণের বিস্তার ঘটিয়েই চলেছে করোনার নতুন এ ধরন। এরই মধ্যে ২৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে না পড়লেও ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও। এর আগেও দেখা গেছে ভারত থেকেই আমাদের দেশে ডেল্টার সংক্রমণ ঘটে। ডেল্টার কারণেই গত মধ্য জুন থেকে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত ডেল্টার সংক্রমণ বিধ্বংসী রূপে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। প্রাথমিক এক সমীক্ষার তথ্য উল্লেখ করে ২ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওমিক্রন ডেল্টা ও বিটার তুলনায় তিন গুণের বেশি পুনঃসংক্রমণ ঘটাতে পারে।

এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকাফেরত ২৪০ যাত্রীর ঠিকানা প্রাপ্তি ও মোবাইল বন্ধ পাওয়ার বিষয়টিরও সমাধান হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিহ্নিত করা গেছে। যাদের পরীক্ষার দরকার তাদের পরীক্ষা করানো হয়েছে। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য তাদের নমুনা পাঠানো হয়েছে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর)।

[caption id="attachment_322073" align="aligncenter" width="700"] প্রতীকি ছবি[/caption]

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, সামগ্রিকভাবে এই মুহূর্ত পর্যন্ত সব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, এ কথা বলা যায়। আতঙ্কিত হওয়ারও কারণ নেই। তবে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যেহেতু ওমিক্রনের ধরনটি শনাক্ত হয়েছে তাই আমাদের উদ্বেগ বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরত যাত্রীদের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। সেখানকার রিপোর্ট পেলেই জানা যাবে তাদের মধ্যে কেউ ওমিক্রনে সংক্রমিত কিনা।

এদিকে ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দেয়া হয়েছে ১৫ নির্দেশনা। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ এবং ওমিক্রন শনাক্ত দেশ থেকে প্রবাসীদের এই মুহূর্তে দেশে না আসার আহ্বানও জানানো হয়েছে। সর্বশেষ ২ ডিসেম্বর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এক

সার্কুলারে জানিয়েছে, বতসোয়ানা, লেসোথো, ইসোয়াতিনি, ঘানা, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে- এ সাত দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের নিজ খরচে ১৪দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। আজ শনিবার দুপুর ১২টা থেকে এ নিয়ম কার্যকর হবে বলে বেবিচকের ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড এন্ড রেগুলেশন বিভাগের ওই সার্কুলারে জানানো হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) বলছে, সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে কয়েকটি দেশ ওমিক্রন মোকাবিলার উপায় খোঁজার সময় পাচ্ছে। তবে ডেল্টা মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয় এবং যে অভিজ্ঞতা অর্জন করা গেছে সেগুলো ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও কার্যকর।

[caption id="attachment_322074" align="aligncenter" width="700"] প্রতীকি ছবি[/caption]

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে মনে হলেও ওমিক্রনের ধরন ভারতে শনাক্ত হওয়া মানে তা বাংলাদেশের দোড় গোড়ায় চলে আসা। বাস্তবে সীমান্ত আটকে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো প্রায় অসম্ভব। তবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারের গতি ধীর করা যেতে পারে। নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও ডেল্টা যেমন ঠেকানো যায়নি তেমনি ওমিক্রনও ঠেকানো যাবে না। নতুন এই ধরন অবশ্যই বাংলাদেশে আসবে। আমাদের অসচেতনতা আশঙ্কাকে আরো গভীর করছে। কারণ, কোয়ারেন্টাইনে না থাকার প্রবণতা আমাদের দেশে নতুন নয়। গত বছরও দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে বিদেশ থেকে ফিরলে কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তখন কোয়ারেন্টাইন থেকে এমন কি হাসপাতাল থেকেও রোগী পালানোর বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল। এই অসচেতনতার কারণে সংক্রমণও ছড়িয়ে পড়েছিল।

বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে এবার শাস্তির বিষয় নিয়ে ভাবছে সরকার। বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, কোয়ারেন্টাইন থেকে কেউ পালালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে, তাদের পাসপোর্ট রেখে দেয়া হবে। কোনো হোটেল থেকে পালিয়ে গেলে ওই হোটেলকেও জরিমানা করা হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত জনস্বাস্থ্য পরামর্শক কমিটির (সিলেট বিভাগ) সদস্য ড. আবু জামিল ফয়সাল ভোরের কাগজকে বলেন, ওমিক্রন ঠেকাতে শক্ত অবস্থানে আছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বারবারই বলছেন। কিন্তু তার নমুনা দেখতে পাচ্ছি না। বিদেশ ফেরত ২৪০ জন মানুষকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদেশ ফেরতদের বাড়িতে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাগুলো কী বার্তা দেয়? আমার তো মনে হয় সরকারের অবস্থা হচ্ছে ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেড়ো’-এর মতো। বিমানবন্দরে আমাদের যতটা নজর অন্যান্য ‘পোর্ট অব এন্ট্রিতে’ আমাদের ততটা নজর নেই। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ একা স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ নয়। সংক্রমণ শুরুর পর থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা ও আন্তরিকতার অভাব ছিলো সেটি এখনো রয়ে গেছে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি।

চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেসের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশের তিন দিকেই ভারত। ভারতে আসা মানেই বাংলাদেশে আসা। এখন কিছু সময়ের ব্যাপার। ডেল্টার ক্ষেত্রেও আমরা তেমনটা দেখেছি। আগে প্রস্তুতিতে আমাদের ঘাটতি ছিল। এখন আমাদের মহামারি মোকাবিলায় দীর্ঘকালীন, নিত্যনতুন আক্রামণ মোকাবিলায় সব ধরনের কৌশল নিয়ে রাখতে হবে। সীমান্ত বন্ধ নয়; সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মলিকুলার সার্ভিলেন্সের দিকে আমাদের জোরদার দিতে হবে।

স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি নিয়ে অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, ওমিক্রন আমাদের খুব কাছে চলে এসেছে- এটি ধরে নিয়েই আমরা আমাদের সব ধরনের পরিকল্পনা করছি। জনগণকে আতঙ্কিত করতে চাই না। তবে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্কের ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষের সচেতন হওয়া জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App