×

আন্তর্জাতিক

তালেবান নেতা আখুন্দজাদা জীবিত না মৃত!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৩৫ পিএম

এ বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় দ্বিতীয়বারের মতো কাবুল দখল করে নেয় তালেবানরা। তখন তালেবানদের প্রধান নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদার অস্তিত্ব নিয়ে থাকা রহস্য আরও গভীর হয়। সংগঠনটির এই নেতা আদৌ বেঁচে আছেন, না মারা গেছেন তা এখনো অনেক আফগানদের কাছে অজানা। একই সঙ্গে বিশ্লেষকদেরও সন্দেহ রয়েছে তালেবানদের মূল নেতা কে, এই বিষয়ে।

বার্তা সংস্থা ফ্রান্স-প্রেস (এএফপি) তালেবানদের সর্বোচ্চ এই নেতার খোঁজে আবারও অনুসন্ধান চালিয়েছিল। তবে এতে কোনো স্পষ্ট ফলাফল আসেনি। হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা জীবিত আছেন, একই সঙ্গে কান্দাহারে ভালো রয়েছেন তিনি- এক তালেবান মুখপাত্র এমনটা দাবির কয়েক মাস পর গত ৩০ অক্টোবর ফের একটি গুজব ছড়ায় আখুন্দজাদার বিষয়ে। যা ছিল এমন- ‘আমির’ একটি মাদরাসায় বক্তব্য দিয়েছেন।

তালেবান কর্মকর্তারা তাদের সর্বোচ্চ নেতার হাকিমিয়া মাদরাসায় অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিয়তা দিয়ে ১০ মিনিটেরও বেশি সময়ের ভাঙা ভাঙা-অস্পষ্ট একটি রেকর্ড প্রচার করে। রেকর্ডিংয়ে এক বৃদ্ধ ব্যক্তির কণ্ঠ শোনা যায়। যেখানে বলতে শোনা যায়, ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানের যেসব মানুষ বিদেশি দখলদার এবং শোষকদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তাদের প্রতিদান দিক আল্লাহ। এই কণ্ঠকে আকুন্দজাদার বলে দাবি করা হয় তালেবানদের পক্ষ থেকে। এর আগে খুব একটা প্রকাশ্যে আসতেন না তিনি। তবে ইসলামী ছুটির দিনগুলোয় আগে-পরে লিখিতভাবে বর্তা দিতেন।

এদিকে কান্দাহারের দরিদ্র এক শহরতলী এলাকায় হাকিমিয়া মাদরাসার নীল-সাদা দরজার সামনে ময়লা-আবর্জনায় ঘেরা এক জায়গায় দু’জন তালেবান যোদ্ধাকে বন্দুক হাতে দেখা যায়। গত ৩০ অক্টোবরের পর থেকে ওই জায়গাটি তালেবান সমর্থকদের কাছে আগ্রহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাদরাসার নিরাপত্তারক্ষী মাসুম শাকরুল্লাহ জানান, হায়বাতুল্লাহ আকুন্দজাদার যখন এই স্থান পরিদর্শন করেন তখন সশস্ত্র অবস্থায় ছিলেন। তিনি যখন আসেন তখন তার সঙ্গে তিনজন নিরাপত্তাক্ষী ছিলেন। তবে সেখানে মোবাইল ফোন এবং সাউন্ড রেকর্ডার নিতে দেয়া হয়নি তাদের।

এছাড়া মাদরাসার শিক্ষার্থী মোহাম্মদ (১৯) জানান, আমরা যখন তাকে দেখছিলাম তখন শুধু কাঁদছিলাম। মাদরাসায় বক্তব্য দেয়া ওই মানুষটি আখুন্দজাদা কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা এতটাই আনন্দিত ছিলাম যে ঐ ব্যক্তির মুখ ভালোভাবে দেখতে ভুলে যাই।

আখুন্দজাদা যে মাদরাসায় এসেছিলেন সেখানকার প্রধান কর্তা মৌলভী সাঈদ আহমাদ বলেন, আখুন্দজাদা মারা গেছেন বলে যে গুজব ছড়ানো হয়েছিল, তার ফিরে আসায় সব মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। এছাড়া মাদরাসার মোহাম্মদ মুসার (১৩) ভাষ্য, তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা আখুন্দজাদা এখনো দেখতে তার প্রকাশ হওয়া ছবির মতোই রয়েছেন। এদিকে ক্ষমতাচ্যুত আফগান সরকারের কর্মকর্তা এবং অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক তালেবানের সর্বোচ্চ এই নেতার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান। তারা বিশ্বাস করেন, আখুন্দজাদা আরও অনেক বছর আগে মারা গেছেন। আর এই মাদরাসা পরিদর্শনকে পরিকল্পিত একটি নাটক হিসেবে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের এই বিশ্বাসের পেছনে অবশ্য কারণও রয়েছে। ২০১৩ সালে তালেবানদের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লাহ ওমর চলে গেলেও পরের দুই বছর তালেবানরা প্রচার চালায় তিনি এখনো জীবিত রয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্র বলে, পাকিস্তানের কোয়েটা অঞ্চলে তিন বছর আগে এক আত্মঘাতী হামলায় তিন ভাইসহ মারা যান আখুন্দজাদা। আর এই তত্ত্বটিকে একাধিক বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাও নির্ভরযোগ্য বলে দাবি করেন। এছাড়া পৃথক একটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা সূত্র এএফপিকে জানায়, তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদার কথিত মারা যাওয়ার বিষয়ে কেউ সম্মতি দিবে না। আবার কেউ এ কথা অস্বীকারও করবে না। এছাড়া আফগান সরকারের সাবেক এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা তো দীর্ঘদিন যাবত মৃত আছেন। কাবুল দখলের ক্ষেত্রে বা এর আগ পর্যন্ত কোনো অবদান নেই তার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App