×

মুক্তচিন্তা

বিজয়ের মাসে হার না মানার অঙ্গীকার হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:৪০ এএম

সময় এগিয়ে চলে সময়ের নিয়ম অনুযায়ী। এখানে কারো কোনো জোরজবরদস্তির সুযোগ নেই। ক্যালেন্ডারের পাতায় দিন, তারিখ, মাসের বদল কেউ আটকাতে পারে না। কোন মাসের পর কোন মাস তা নির্ধারিত হয়েই আছে। এই নিয়ম মেনেই আবার ফিরে এসেছে ডিসেম্বর মাস। বাঙালি জাতির বিজয়ের মাস, উদযাপনের মাস, আশা ও উদ্দীপনার মাস। ১৯৭১ সালে এই মাসেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত করে, আত্মসমর্পণে বাধ্য করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল। বাঙালির প্রথম স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। মাথা নত করেছিল পাকিস্তান, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেয়া কৃত্রিম রাষ্ট্রটি। তবে এই বিজয় অর্জন খুব সহজ ছিল না। এজন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। ৩০ লাখ মানুষের জীবনদান, কোটি কোটি মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট-দুর্ভোগ, দেশত্যাগী কোটি মানুষের শরণার্থীর দুঃসহ জীবনযাপন, লাখ লাখ নারীর সম্ভ্রম- এসব কিছুর বিনিময়েই আমরা পেয়েছি বিজয়, স্বাধীনতা। আমরা চড়ামূল্য দিয়েই পেয়েছি নতুন দেশ, নতুন পতাকা, নতুন জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। আর এই স্বাধীনতা কারো দয়ার দান নয়। আমরা ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়’। বিজয়ের মাসের সূচনার দিনে তাই শ্রদ্ধা জানাই শহীদদের প্রতি। স্মরণ করি তাদের সবাইকে যাদের আত্মদানে মুক্ত স্বদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আজকের দিনে গভীর শ্রদ্ধা জানাই। বিনম্র চিত্তে স্মরণ করি, শ্রদ্ধা জানাই বঙ্গবন্ধুর সব সহযোগীর, যারা এই বিজয় অর্জনে ভূমিকা রেখেছিলেন। যুদ্ধ আমরা চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। সেটা না করে মাথামোটা শাসকগোষ্ঠী আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অতর্কিতে নিরীহ বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাধ্য করেছিল এক অসম যুদ্ধে লড়তে। কিন্তু বাঙালি যেমন প্রতিবাদ করতে জানে, লড়তে জানে, তেমনি মরতে জানে। মরণ সাগর পাড়ি দিয়ে বিজয় কেতন ওড়াতে জানে। একাত্তরের পঁচিশে মার্চ পাকিসেনাদের আক্রমণের প্রথম মুহূর্ত থেকে যে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তার সফল পরিসমাপ্তি ঘটেছিল ৯ মাস পর ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে, প্রশিক্ষিত একটি পেশাদার বাহিনী পরাজিত হয়েছিল লজ্জাজনক আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। বাঙালির এই স্বাধীনতা বা বিজয়টা কোনো হঠাৎ পাওয়া বিষয় ছিল না। এটা ছিল একটি দীর্ঘ প্রস্তুতি এবং আকাক্সক্ষার ফল। অনেক লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটেছিল ভারত বিভক্তির মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশরা ধর্মের ভিত্তিতে ভারতকে ভাগ করে স্বাধীনতা দিয়েছিল। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ভারত এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালে আমরা এক দফা স্বাধীন হলাম ঠিকই কিন্তু প্রকৃত মুক্তি পেলাম না। যারা ভেবেছিলেন শাসক বদল হলে মানুষের আর কোনো সমস্যা থাকবে না, তাদের ভুল ভাঙতে সময় লাগেনি বেশি। পাকিস্তানে জনসংখ্যার গরিষ্ঠ অংশ বাঙালি মুসলমান হলেও শাসন কর্তৃত্ব গেল অবাঙালি মুসলমানদের হাতে। বাঙালিদের প্রতি শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি, বিশেষ করে পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠী ছিল বিদ্বেষপরায়ণ। এক ধর্মের অনুসারী হলেও বাঙালিদের ওপর শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্যের ধারা চালু হয়েছিল। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রতারণামূলক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ সংখ্যায় বেশি হলেও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করা হলে বাঙালি প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। এই প্রতিবাদকে সংগঠিত রূপ দিতে এগিয়ে আসেন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও সামনের কাতারে ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন পাকিস্তানে বাঙালি তার হারানো অধিকার ও মর্যাদা ফিরে পাবে। নতুন স্বাধীন দেশে বাঙালি তার জীবনমান উন্নয়নের সুযোগ পাবে। ভাষার প্রশ্নে পশ্চিমাদের অবস্থান দেখেই শেখ মুজিব বুঝতে পারেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্য থেকে বাঙালির মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ আসবে না। শেখ মুজিব তা মনস্থির করেন। তিনি নতুন করে ভাবতে থাকেন। বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা দরকার তা-ই করার ব্রত গ্রহণ করেন। তার মাথায় বাঙালির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চিন্তা জোরালো হয়ে ওঠে। তিনি নিজেকে তৈরি করতে থাকেন নতুন চিন্তা সফল করার কাজে। শেখ মুজিব ছিলেন দৃঢ়চিত্ত এবং সাহসী মানুষ। তিনি তার লক্ষ্যেও ছিলেন অবিচল। তিনি ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে থাকেন। তার চেয়ে জনপ্রিয় বাঙালি নেতা অনেকেই ছিলেন। কিন্তু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে শেখ মুজিব যতটা অনমনীয় ছিলেন অন্যরা তেমন ছিলেন না। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীও বুঝতে পারছিল যে, তাদের ঘায়েল করার মতো একজন নেতা অন্তত বেড়ে উঠছেন। তোমাকে বধিবে যে গোকূলে বাড়িছে সে। শত্রæ চিনতে তাদের ভুল হয়নি। তাকে দাবিয়ে রাখার জন্য, তাকে দমিয়ে রাখার জন্য শাসকগোষ্ঠীর মরিয়া চেষ্টাও প্রথম থেকেই শুরু হয়। জেল-জুলুম উপেক্ষা করে শেখ মুজিবও অটল থাকেন তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে। বাঙালি জাতিও শেখ মুজিবের মধ্যে মুক্তিদূতের প্রতিচ্ছবি দেখতে শুরু করে। মানুষের মধ্য থেকে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ মুজিব তার কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখেন। ধাপে ধাপে তিনি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করে দেয়ার পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র যত বাড়তে থাকে, তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা এবং সমর্থনও বাড়তে থাকে পাল্লা দিয়ে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালির মনে তৈরি করেন গভীর আবেগ। ছয় দফা শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনে একটি বড় মোড় পরিবর্তনের ঘটনা। পাকিস্তানিরা প্রমাদ গোনে। তাকে আটকানোর ফন্দি আঁটতে থাকে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে শেখ মুজিবকে বিচারের প্রহসন করে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ফুঁসে ওঠে বাঙালি। ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ভিত কাঁপিয়ে দেয়। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বদলে দেয় সব হিসাব-নিকাশ। বাতিল হয় আগরতলা মামলা। মুক্তি পান শেখ মুজিব। তিনি হয়ে ওঠেন অপ্রতিদ্ব›দ্বী নেতা। বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকেন সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান, তাকে মদদ দিতে থাকেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। বাঙালি আবার রুখে দাঁড়ায়। নির্বাচনে জেতা নেতার কাছে ক্ষমতা না দিয়ে ইয়াহিয়া যে চালবাজি শুরু করেন তার বিরুদ্ধে বাঙালি গড়ে তোলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন : এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ২৫ মার্চ কালরাতে শুরু হয় স্বাধীনতার মরণপণ যুদ্ধ। শারীরিকভাবে অনুপস্থিত থেকেও বঙ্গবন্ধু এই যুদ্ধের প্রধান নেতা। ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধ শেষ হয়। বিজয় অর্জন হয়। গত বছর থেকে এক বিশেষ অবস্থার মধ্যে আমাদের সামনে বিজয়ের মাস উপস্থিত হচ্ছে। পৃথিবীজুড়ে মরণব্যাধি কোভিড-১৯ সৃষ্টি করেছে মহাআতঙ্কের। কোটি কোটি মানুষ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত। মারা গেছেন লাখ লাখ মানুষ। ওলট-পালট অবস্থা। বাংলাদেশও এই মহামারি থেকে মুক্ত নয়। আমরাও হারিয়েছি কয়েক হাজার মানুষ। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন মানুষও আছেন যারা আমাদের জাতির সেরা সন্তান ছিলেন। এখন করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। তবে নতুন এক ভয়াবহ ধরন ধরা পড়েছে কয়েকটি দেশে। ফলে আমরাও আতঙ্ক ও বিপদমুক্ত নই। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে মানুষের সময় কাটছে। এর মধ্যেই এসেছে বিজয়ের মাস। এবারো হয়তো এই মাসে আনুষ্ঠানিকতা কম হবে। তবে আমরা স্বাধীনতা ও বিজয় অর্জনের এত বছর পর কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি, আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে কোথায় কোথায় অপূর্ণতা রয়েছে তার একটি সঠিক পর্যালোচনা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও উদযাপন করছি। ৫০ বছরে পাওয়া এবং পেয়ে হারানোর বিষয়গুলো আলোচনায় না এলে নতুন বিজয়ের জন্য আমরা সামনে এগোতে পারব না। আমরা জানি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যেমন অনেক মানুষের সমর্থন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল, তেমনি কিছু মানুষের বিরোধিতাও ছিল। দেশের সব মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল না। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি ভেঙে যাক, এটাও অনেকে চায়নি। তাই স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন প্রথম থেকেই ছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর তাদের দেশীয় সহচররা গা-ঢাকা দিলেও তারা তাদের অবস্থান বদল করেনি। পাকিস্তানের প্রতি তাদের আনুগত্যের অবসান ঘটেনি। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় তারা মেনে নেয়নি। বঙ্গবন্ধুর শাসনের সময় তারা প্রকাশ্যে তৎপরতা চালাতে পারেনি। তখন দেশে ধর্মাশ্রয়ী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। পরাজিত পাকিস্তানপন্থিদের আবার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ আসে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের পুনর্বাসনের কাজটি শুরু করেন। বিজয়ের ধারা থেকে দেশ সরে যেতে থাকে। এমনকি বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকারের মতো অর্বাচীনতাও চলতে থাকে ক্ষমতা জবরদখলকারীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু ইতিহাসকে বিকৃত করে যারা ইতিহাস দখলের চেষ্টা করে তারা চূড়ান্ত বিচারে সফল হয় না। বাংলাদেশেও ইতিহাস দখলকারীরা পরাজিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ একুশ বছর পর ক্ষমতায় এসে ছিনতাই হওয়া বিজয়ের ধারায় দেশকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা শুরু করে। তবে কাজটি সহজ নয়। এর মধ্যে অনেক সময় গড়িয়ে গেছে। বদলে গেছে বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপট। দেশের মধ্যেও মানুষের মন-মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে। যেসব আদর্শকে ধারণ করে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা আঁকড়ে থাকার দৃঢ়তা অনেকের মধ্যেই নেই। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল, তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় একদিকে দেশে যেমন একটি চরম আত্মসুখ সর্বস্ব সুবিধাবাদী শ্রেণি গড়ে উঠেছে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাবিরোধী শক্তিও দুর্বলতা কাটিয়ে, ভোল পাল্টে সামাজিক ও অর্থনেতিকভাবে বলবান হয়ে উঠেছে। রাজনীতি আর নীতিনিষ্ঠ অবস্থানে নেই। একটি ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। দেশ আর কোনো অর্থেই একাত্তরের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে নেই। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি দেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। দৃশ্যমান অনেক সাফল্য তার সরকারের। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বেড়েছে। কিন্তু নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়নি। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ছে। ধনবৈষম্যের সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যও বাড়ছে। আওয়ামী লীগের মধ্যেও নানা দুর্বলতা, দোদুল্যমানতা এবং আপসকামিতা স্পষ্ট। শেখ হাসিনার একক চেষ্টা এখন পর্যন্ত মানুষের মনে আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছে। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান লক্ষ করছি। তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের মতো দাবি তোলারও দুঃসাহস দেখাচ্ছে। এই অপশক্তির ঔদ্ধত্যের জবাব দেয়ার এখনই সময়। তাদের বাড় বেড়েছে যথেষ্ট। আর বাড়তে দিলে তারা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানি ধারায় নিয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, নাগিনী যখন বিষাক্ত নিশ্বাস ছড়ায়, শান্তির ললিতবাণী তখন ব্যর্থতার পরিহাস শোনায়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতির আবার পরাজিত হওয়ার সুযোগ নেই। এবার বিজয়ের মাসে আমাদের অঙ্গীকার হোক : আমরা পরাজিত শক্তির কাছে নত হবো না, হার মানব না। শত্রæর সঙ্গে কোলাকুলি আর মিত্রের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার দুর্বুদ্ধি যেন আমাদের আচ্ছন্ন না করে। আমরা যেন মোহমুক্তভাবে শত্রæকে মোকাবিলা করার সক্ষমতা দেখাতে পারি। ডিসেম্বর আমাদের পথ দেখাক, ডিসেম্বর আমাদের সাহস জোগাক। বিভুরঞ্জন সরকার : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App