×

সম্পাদকীয়

এমন মৃত্যু আর কত দেখব?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:৪১ এএম

অর্ধেক ভাড়া ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই বাসের ধাক্কায় আরেক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাতে রামপুরা সড়কে এ ঘটনা ঘটে। মাইনুল নামে ওই ছাত্র একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। স্বজনদের অভিযোগ, দুই বাসের পাল্লায় তার মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে রাজধানীতে গাড়িচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হলো। গত বুধবার সিটি করপোরেশনের গাড়িচাপায় নিহত হন নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান। নাঈম হাসানের মৃত্যুর পর থেকে রাজধানীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ-অবরোধ করে আসছে। ইতোমধ্যে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস ভাড়ার দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তবে এরপরও সড়কে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের জন্য দেয়া ৯ দফা দাবির বাকিগুলো মেনে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে নাঈম, মইনুলসহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সব শিক্ষার্থীর ঘটনায় মামলার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা; দুর্ঘটনায় নিহত সব শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান; দুর্ঘটনায় আহত সব যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা; গণপরিবহনে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ও সহিংসতা বন্ধ করা; জনসাধারণের জন্য ফুটপাত, পদচারী-সেতুসহ নিরাপদ চলাচল ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; পরিকল্পিত বাস স্টপেজ ও পার্কিং নির্মাণ এবং এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা উল্লেখযোগ্য। দাবিগুলো যৌক্তিক। আমরাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। রাজধানীর পরিবহনে নজিরবিহীন নৈরাজ্য চলছে। শৃঙ্খলা ফেরাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। সড়ক নিরাপদ করতে হলে নতুন আইন কার্যকরের বিষয়টি বারবার সামনে আসছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালের আগস্টে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পরের মাসে ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস করা হয়। নতুন আইনে জরিমানা ও বিভিন্ন অপরাধে শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হয়েছিল। একপর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে আইনটি সংশোধনের ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও আইনটির সংশোধন কিংবা বিধি কিছুই হয়নি। নাঈমের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার সহপাঠীরা পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে দাবি-দাওয়া তুলছেন। একই দাবি আমরা ২০১৮ সালেও দেখেছিলাম। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, পেশাদার লাইসেন্স প্রদানে স্বচ্ছতা, সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি, বিগত দিনের সব দোষীকে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় ওভারব্রিজ, সব ধরনের দলীয় আচরণ ত্যাগ করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা, পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর করার দাবি তুলছে। শিক্ষার্থীদের এই দাবিগুলো যৌক্তিক। আধুনিক, মানসম্পন্ন ও নিরাপদ সড়ক পরিবহন যে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকেও গতিশীল করে। তাই সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এজন্য সময়ের ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন আইনে যে বিষয়গুলো সংযোজিত হয়েছে, তার কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি মনে করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App